বগুড়ায় মাদক কারবারে জড়াচ্ছে নারীরা

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
 | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৪৫

সারাদেশেই মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার, ক্রসফায়ার, মামলাও হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। তার পরেও থেমে নেই বগুড়ার মাদক ব্যবসায়ীরা। তারাও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে রীতিমত কৌশলী হয়েছেন। মাদকের মূল আস্তানাগুলো পরিবর্তন করেছেন তারা। অচেনা জায়গা এবং পুলিশের সন্দেহের বাইরের স্পটগুলোকে তারা এখন কাজে লাগাচ্ছেন। বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে অন্যতম কৌশল হচ্ছে মাদক কারবারে নারীদের ব্যবহার।

বগুড়ায় ইতিমধ্যেই বেশি কিছু নারী মাদককারবারি পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছেন।

রবিবার ভোরে শহরের বিভিন্ন অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে চার বোনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। তারা হলেন- নওগাঁ সদর থানার হারিছ আহম্মেদের মেয়ে লাবনী (২৮), মরিয়ম আক্তার নিপু (২৫), শিমু (২৩), মনিকা (২০), লাবনীর স্বামী নওগাঁ সদরের আনন্দ নগর এলাকার মৃত আবুল কাসেমের ছেলে লোকমান হোসেন (৪৫) এবং বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া হাজীপাড়ার মৃত জাহেদুর রহমানের ছেলে নাইমুল হাসান শান্ত (২৫)। তাদের নিকট থেকে ২১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এর আগে মার্চের ৮ তারিখে বাধন আক্তার নামে এক নারী মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেছিলো পুলিশ। কয়েক দফা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলো বগুড়া সদরের সেউজগারী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী তাসলি বেগম। তাসলি এবং তার স্বামী আলম ওই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি ।

চলতি বছরের ৭ এপ্রিল ২০০ পিস ইয়াবাসহ যুব মহিলা লীগ নেত্রী শিল্পী বেগমকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছিলো জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

সাম্প্রতিক সময়ে আরো তিন নারী মাদক ব্যবসায়ীর লাশ পাওয়া গেছে শহরের বিভিন্ন জায়গায়। চলতি মাসের ১২ সেপ্টেম্বর পুলিশের তালিকাভুক্ত নারী মাদক বিক্রেতা রিনা বেগমের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ওইদিন দুপুর ১টার দিকে বগুড়া শহরতলীর মাটিডালী এলাকায় করতোয়া নদীর ব্রিজের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। বনানী-মাটিডালী দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে করতোয়া ব্রিজের নিচে কচুরিপানার মধ্যে মরদেহটি পড়ে ছিলো। যদিও রিনার স্বামী মুক্তার হোসেন জানান, ১২ তারিখ রাত ১২টার দিকে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকে একদল ব্যক্তি বাড়ি থেকে রিনাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর সকালে থানা এবং ডিবি অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পুলিশ গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করে।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম বদিউজ্জামান জানান, পুলিশের ভুয়া পরিচয়ে অন্য কেউ রিনাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে।

এদিকে রবিবার ভোর রাতে যে চার নারীকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের নিয়ে শহরজুড়ে চলছে নানা ধরনের গুঞ্জন। তারা চার জন আপন বোন। পারিবারিকভাবেই তারা মাদক কারবারি বলে জানা গেছে। পুলিশ তাদের শহরের বিভিন্ন ফ্লাটবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ জানায়, নওগাঁ সদরের বাসিন্দা চার বোন ও বড় বোনের স্বামী বগুড়া শহরের কয়েকটি অভিজাত আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার ভোর ৬টার দিকে প্রথমে সূত্রাপুরের কমফোর্ট হাউজিংয়ে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। সেখান থেকে শিমু ও তার স্বামী নাইমুল ইসলাম শান্তকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালায় মিশন হাসপাতালের পাশে এ্যাবকন দেওয়ান টাওয়ারে। সেখান থেকে আটক করা হয় মরিয়ম আক্তার নিপু ও তার ছোট বোন মনিকাকে। এরপর মফিজ পাগলার মোড়ে বিকর্ণ টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে লাবনী ও তার স্বামী লোকমান হোসেনকে আটক করা হয়। চার বোনের কাছ থেকে পুলিশ মোট ২১০০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী।

গত রমজানের ১ তারিখে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তিনজন।

চলতি বছরের ১৫ মে থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে ২৯৯২ বোতল ফেনসিডিল, ১৮৫ কেজি ৮৩০ গ্রাম গাঁজা, ৫১৭.৯ গ্রাম হেরোইন, ৩২ হাজার ৪১৪ পিস ইয়াবা, ২০৭ লিটার চোলাইমদ, ২৭৩ বোতল অ্যালকোহল, ৬০ লিটার স্পিরিট, ২৮২৫ এ্যাম্পল নেশা জাতীয় ইনজেকশন উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বগুড়ায় মাদককারবারিদের কৌশল বদলে নারীদের ব্যবহার দিনদিন চরম আকার ধারণ করছে। দেখতে সুন্দর এমন নারীদের এই ব্যবসায় কাজে লাগাচ্ছেন চিহ্নিত মাদককারবারিরা। হোতারা থেকে যাচ্ছেন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন অভিযানে পুলিশ কিছু ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করলেও মূল ব্যবসায়ীদের ধারে কাছে যায় না। হোতারা গোপনে ঠিকই মাদকব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন।

বগুড়ায় মাদক ব্যবসায় নারীর সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধির পেছনে কিছু শক্তিকাজ করছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করলেও পুলিশ বলছে অন্য কথা।

এ বিষয়ে বগুড়া জেলা পুলিশের সহকারি পুলিশের সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী বলেন, ‘নারী মাদক ব্যবসায়ীদের পেছনে বিশেষ কোন শক্তি নেই। এরা বিচ্ছিন্নভাবে লোভ এবং লাভের বশবর্তী হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় নেমেছে। তিনি আরো বলেন, বগুড়ার পুলিশ শক্তভাবে এসব মাদকব্যসায়ীদের দমন করতে কাজ করে যাচ্ছে’।

ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/পিও/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :