প্রতিষ্ঠার ১৩ বছরেও সমাবর্তন হলো না জবির

ইসরাফিল হোসাইন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:০৩ | প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:০৪

কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর কেটে গেছে ১৩ বছর। আর এই এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সমাবর্তন বঞ্চিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করা বিভিন্ন সেশনের প্রায় ৬০ হাজার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী। তারা আদৌ সমাবর্তন পাবেন কি-না বলতে পারছে না জবি প্রশাসন। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষা শেষে সমাবর্তন না পেয়ে বিক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

রবিবার সমাবর্তনের দাবিতে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানকে অবরুদ্ধ করার ঘটনাও ঘটেছে। প্রথমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করলেও, এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাতে যোগ দেয়। এসময় উপাচার্য ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক প্রশাসনিক ভবনের ভিতরে আটকা পড়েন। পরে বিভিন্ন শিক্ষকদের অনুরোধে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরে গেলে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাহির হন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, স্থানের অভাব ও রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার স্বার্থের কথা ভেবেই সমার্বতন আয়োজনে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এটা কেবলই অজুহাত। সমাবর্তন না হওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেবল সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।

২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয় ব্রিটিশ আমল থেকে শিক্ষার আলো ছড়ানো দেশের প্রাচীনতম এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করার পর পার হয়ে গেছে প্রায় ১৩টি বছর।

এরই মধ্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে বের হয়ে গেছেন প্রায় সব বিভাগের অন্তত সাত থেকে আটটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। কোনও কোনও বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও শেষ করে ফেলেছেন শিক্ষাজীবন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, যেসব শিক্ষার্থীরা তাদের ঐক্লান্তিক প্রচেষ্টায় কলেজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করেছেন, সেই ২০০৩-০৪ ও ২০০৪-০৫ সেশনের প্রায় ১৯ হাজার ২শ ৭১জন শিক্ষার্থীসহ সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫৭ হাজার ৯৩০ জন। যদিও ২০০৩-০৪ ও ২০০৪-০৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যেই সনদপত্র দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে ছাড়াও বর্তমানে প্রায় চল্লিশ হাজার শিক্ষার্থী সমাবর্তন প্রত্যাশী।

এদিকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ থেকে একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন কর্মজীবনে। এমন শিক্ষার্থীরা কয়েকবার সমাবর্তনের দাবি জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি। বরং সমাবর্তন করার জায়গা সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে সবার সামনে টেনে এনেছেন। আবার কোনও কোনও সময় রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আর শিক্ষার্থীরা সমাবর্তন না পেয়ে হতাশ হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নিচ্ছেন।

জবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মতে, সমাবর্তন আয়োজনে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো বার বার সামনে এনেছে প্রশাসন। কিন্তু সেই শঙ্কা অমূলক বলে দাবি করছেন সাবেক শিক্ষার্থীরা।

এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীরা ঢাকাটাইমসকে বলছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে প্রতিষ্ঠিত এমন বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিকবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমনকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনসহ বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও সমাবর্তন হয়েছে। সেখানে রাজধানীর হয়েও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সমাবর্তন আয়োজনের সদিচ্ছা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠেই তা আয়োজন করা সম্ভব বলে তাদের অভিমত।

অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করা অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জীবনে সবচেয়ে বড় চাওয়া হচ্ছে, আনুষ্ঠানিকভাবে একটা কালো গাউন আর সনদ নেয়া। শিক্ষা জীবন শেষ করে যে যার মতো সনদ নিয়ে চলে যাবেন, এটা একজন শিক্ষার্থীর কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে এ ক্যাম্পাসেই সমাবর্তন করা সম্ভব।’ সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

জবি শাখা ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘সমাবর্তন হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের শেষ মর্যাদা। জবি প্রশাসন অন্যান্য বিষয়গুলোর মতো সমাবর্তন নিয়েও শিক্ষার্থীদের সাথে প্রহসন বা প্রতারণা করছে।’

জবির ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি রুহুল আমিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রবল আগ্রহ থাকা সত্বেও শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা ও অনীহার কারণেই সমাবর্তন হচ্ছেনা। এমনিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে, তার ওপর আবার শিক্ষা জীবনের শেষ মর্যাদাটুকুও প্রশাসন তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে।’

এ বিষয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তরিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সমাবর্তন আমাদের প্রাণের দাবি। জবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার পরই লিখিত ভাবে আমরা উপাচার্যের নিকট সমাবর্তনের জন্য আবেদন করেছি। কয়েকবার সরাসরি এ বিষয়ে কথাও বলেছি। এমনকি সমাবর্তন করার মতো জায়গাও দেখিয়ে দিয়েছি।’

উপাচার্য বারবার সমাবর্তন হবে আশ্বাস দিলেও কিন্তু কবে হবে সে বিষয়ে উপাচার্য স্পষ্ট কোনো ধারণা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ এ ছাত্রনেতার।

জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদীন রাসেল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা সমাবর্তনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি চায় তাহলে তিনি সমাবর্তনে আসতে পারবেন। আর রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার দায়িত্ব হলো সরকারের। রাষ্ট্রপতি যেখানেই যাক সরকার তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।’

জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের অধিকার। এ অধিকার রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চেষ্টা করে যাচ্ছে। সমাবর্তন করার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট জায়গা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় এক জায়গায় আর সমাবর্তন অন্য জায়গায় হবে এটা পরিবেশের সাথে সামঞ্জ্যপূর্ণ নয়। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’

ঢাকাটাইমস/ ১৬সেপ্টেম্বর/ আইএইচ/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :