আইনজীবী রথীশ হত্যায় চার্জশিট, শ্বাসরোধে হত্যার প্রমাণ
বহুল আলোচিত এবং চাঞ্চল্যকর রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা হত্যার পাঁচ মাস পর আদলতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আল-আমিন আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সোমবার দুপুরে রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান।
মামলায় স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক এবং তার প্রেমিক কামরুল ইসলামসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত মিলনসহ অপর তিন আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, এই মামলায় ৮০০ পৃষ্ঠার বেশি নথিপত্র আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। পাঁচ মাস ১২ দিনের মাথায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে বাবু সোনার ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। হত্যার দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হতে পেয়েছি। এই মামলায় মোট ৪০ জন সাক্ষী রয়েছে বলে জানান এসপি।
পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগেই এই পরিকল্পনা করা হয়। রাত ১১টার দিকে নিহত বাবু সোনা বাসায় এলে স্ত্রী স্নিগ্ধা দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান। অচেতন হয়ে পড়লে স্নিগ্ধার প্রেমিক কামরুল ইসলাম বাসায় ঢুকেন। এরপর দুজন গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসার অন্যরুমের একটি আলমারিকে ভরে নগরীর তাজহাটে কামরুল ইসলামের ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়িতে পুঁতে রাখা হয়।
এসপি বলেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার রথীশ চন্দ্র বাবু সোনা জঙ্গি মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং জামায়াত নেতা ও যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাক্ষী। তাই জঙ্গিরাই অপহরণ করে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন দীপা।
পুলিশ সুপার জানান, কামরুল জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, তিনি রংপুর নগরীর তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৫ বছর ধরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। আইনজীবী বাবু সোনার স্ত্রী দীপা ভৌমিকও একই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। হত্যাকাণ্ডের আট মাস আগে থেকে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হত্যার চার মাস আগে থেকে তারা দুজনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাবু সোনা আইনজীবী ও প্রভাবশালী হওয়ায় বিয়েতে বাধা হতে পারেন এমন মনে করে তারা তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
কামরুল তার জবানবন্দিতে আরও জানান, তার ধারণা ছিল বাবু সোনাকে হত্যার পর তারা দুজনে বিয়ে করার পর বাবু সোনার বিশাল সম্পদ তিনি ভোগ করতে পারবেন। হত্যার পর লাশ কোথায় পুঁতে রাখবেন, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা কীভাবে প্রচার করবেন সব পরিকল্পনা করা হয়।
চলতি বছরের ২৯ মার্চ রাতে বাবু সোনা নিহত হন। ৩ এপ্রিল রাতে বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ওরফে দিপাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব আটক করে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন এবং লাশের অবস্থান সম্পর্কে জানান। সেই সূত্র ধরে ওই দিন রাতে মোল্লাপাড়ার একটি বাড়ির মেঝে খুড়ে বাবু সোনার লাশ গলিত উদ্ধার করা হয়।
গত ৫ এপ্রিল কামরুল ছাড়াও অপর চার আসামিকে রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফা ইয়াসমিন মুক্তা এজলাসে হাজির করা হয়। আদালতে মিলন মোহন্তসহ আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তাদের রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারা হেফাজতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিলন মোহন্ত মারা যান। এই মামলার অপর দুই আসামি সবুজ ইসলাম, রোকনুজ্জামান খড় বিক্রেতা স্বপন রায়কে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এই মামলার বাদী নিহত রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের ছোটভাই সুশান্ত ভৌমিক বলেন, চার্জশিটে আমরা সন্তুষ্ট। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুতবিচার বিচার দাবি করছি।
(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/আরআই/জেবি)