কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধের আরো ১০০ মিটার পদ্মার গর্ভে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:৩০ | প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:১৯

দুই দিনের ব্যবধানে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধের আরো ১০০’ মিটার পদ্মারগর্ভে বিলীন হয়েছে।

শনিবার রাত ২টা ১০মিনিটে কয়া ইউনিয়নের কালোয়া অংশে হঠাৎ করে আবারও রক্ষাবাঁধে ভাঙন শুরু হয়। দেখতে দেখতে মাত্র ৪০ মিনিটে বাঁধের প্রায় ‘১০০’ মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে যায়।

এসময় বাঁধের ওপর বসবাসরত কয়েকশ পরিবারের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। রাত থেকেই তারা বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিতে শুরু করে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভান ঠেকানোর চেষ্টা করছে। নদীর তীব্র স্রোতে জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙন ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছেন শ্রমিকরা। নদীর পাড়ের প্রায় দুইশ পরিবারের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা বাড়ি-ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সায়দার আলী বলেন, গভীর রাতে বাইরে মানুষের হইচই শুনতে পেয়ে ঘরের বাইরে গিয়ে বাধেঁর ওপর মানুষের জটলা দেখি। মুহূর্তের মধ্যে দেখতে দেখতে ধসে যেতে থাকে বাঁধ।৪০ মিনিটে বাধের প্রায় ১০০ মিটার বাঁধ ধসে যায়।

রক্ষাবাঁধ ভেঙে স্থানীয় নওয়াব আলী ও শর্মি খাতুন দাম্পত্তির অর্ধেক বাড়ি পদ্মারগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অর্ধেক সরিয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। একই অবস্থা ইতি খাতুনের পরিবারের। তার বাড়িটি যে কোন মুহূর্তে পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে শর্মি খাতুন বলেন, এই রক্ষাবাঁধ আমাদের অভিশাপ ডেকে এনেছে। আমাদের বাড়ি নদী থেকে অনেক দূরে ছিল। কিন্তু ঠিকাদাররা কাজ করার সময় বাড়ির সীমানা থেকে কয়েক মিটার কেটে ব্লক ফেলেছে। যার ফলে নদী একেবারে ঘরের কাছে চলে আসে। দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত শিলাইদহ কুঠিবাড়ী রক্ষাবাঁধ গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম ভাঙন শুরু হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ওইদিন বাধেঁর ৫০ মিটার এলাকা পদ্মারগর্ভে বিলী হয়ে যায়। প্রমত্ত পদ্মার ভাঙ্গন থেকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি রক্ষায় মাত্র দুই মাস আগে বাঁধটি নির্মাণ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি সুত্রে জানা যায়, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের কালোয়া বাজার এলাকার আপে যে স্থানে বাঁধ ধসে গেছে, সেখানে আন্ডার গ্রাউন্ড আর্থ পরিস্থিতির কারণে ডিজাইনে শাল বুল্লি পুতে শ্লপ তৈরির নির্দেশনা ছিলো। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেই কাজটি না করার ফলেই এমন ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছিল জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে গত ৩০জুন অসম্পূর্ণ প্রকল্পকে সম্পূর্ণ দেখিয়ে কাগজে কলমে প্রকল্পটি হস্তান্তর করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, প্রকল্পের নির্ধারিত পরিকল্পনাসহ নঁকশা লঙ্ঘন, অর্থ অপচয় এবং বরাদ্দকৃত টাকা প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় না করে অব্যয়িত রাখায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি বর্তমানে ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

কুঠিবাড়ী রক্ষাবাঁধ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের কালোয়া এলাকার কিছু অংশ ভেঙে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :