মুখোমুখি জাফরুল্লাহ-১

‘জাতীয় ঐক্যে’ বামদেরও ভেড়ানোর চেষ্টা

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:০৬ | প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:০৫

‘জাতীয় ঐক্য’ নামে আওয়ামী লীগবিরোধী যে জোট গঠনের চেষ্টা চলছে, তাতে আট বাম দলকে নিয়ে গঠিত ‘বাম গণতান্ত্রিক জোটকেও’ সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে।

বিএনপির সঙ্গে বিভিন্ন দলগুলোর এই ঐক্যের আলোচনায় মধ্যস্ততা চীনপন্থী সাবেক বাম নেতা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপনে তিনি এই ঐক্যচেষ্টা কতদূর আগাল, তা নিয়ে কথা বলেছেন।

শনিবার যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের মধ্যে যে ঐক্যের ঘোষণা এলো এরপর আর কী হবে?

এরপরে আমাদের প্রতিটি ধাপে ধাপে আমরা কর্মসূচি দিয়ে আগাব। গতকালকের আমাদের উচ্ছ্বাস দেখে, জনগণের উচ্ছ্বাস দেখে, পত্রপত্রিকার মিডিয়ার উচ্ছ্বাস দেখে প্রধানমন্ত্রী কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ওনি আর বাধা দেবেন না। আমরা যেখানেই মিটিং করতে চাইব, মিটিং করতে দেবেন ওনি। আমরা বলেছি ২২ তারিখে আমাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।

ওনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন ওটা বাছাইতে গণ্ডগোল হয়েছে, ইচ্ছাকৃত নয়। ইনফ্যাক্ট বলেছেন যে, এখন থেকে যে কোন রকমের সভা সমাবেশ করতে আর বাধা দেবেন না। ওনি বলেছেন আমাদের জন্য প্রয়োজনে মঞ্চ বানিয়ে দেবেন। আমরা বলছি না, মঞ্চ বানাতে হবে না। কথা বলতে দেন, বাকি কাজ, আমাদের কাজ আমরাই করে নেব। আপনার সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ।

ঐক্য প্রক্রিয়ার সংবাদ সম্মেলনে আপনিও ছিলেন এখানে আপনার অবস্থান কী? আবার কি সরাসরি রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন?

না। রাজনীতিতে প্রবেশের বয়স নেই। আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে যখন আমার যৌবন ছিল, তখন আমার অত্যন্ত আকর্ষণীয় জীবন ছেড়ে বিলেত থেকে ফেরত আসি এ দেশের স্বাধীনতার জন্য। যেই স্বাধীনতার সুফল এখনও আকাঙ্ক্ষিত রয়ে গেছে, এখনও পরিণত হয় নাই। আমি মনে করি, এইটা তার একটা পদক্ষেপ। তাই ওনাদের সাথে আছি আমি। ওনাদের পাশে আছি।

আমি নিশ্চিত করতে চাই, ওনারা যত কথা বলেছেন, সেই কথাগুলো রাখবেন। জনগণকে গণতন্ত্র দেবেন, সাধারণ মানুষকে শিক্ষা স্বাস্থ্য পুষ্টি দেবেন। কৃষক তার পণ্যের মূল্য পাবে। তরুণদের চাকরি নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের উদ্দেশ্য কামাল হোসেনরা যদি জয় লাভ করেন, অন্তত পাঁচ লাখ যুবকের দুই বছরেই চাকরি হবে, কর্মসংস্থান হবে।

কিন্তু বি. চৌধুরী তো এই ঘোষণার সময় ছিলেন না। বলা হয়েছে অসুস্থতার কথা। তার কী হয়েছে? তার সঙ্গে কথা হয়েছে?

না, বি চৌধুরীর সঙ্গে আমর সরাসরি কথা হয় নাই। তো আমি সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ করেছি ওনার বাড়িতে, ওনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, এখানে রওনা হয়েছিলেন। ওনাকে একদম পরিস্কার বেড রেস্টের জন্য বলা হয়েছে। আমরা আশা করছি, দুই চারদিনের মধ্যেই সুস্থ হবেন।

কামাল হোসেনের সঙ্গে কী নিয়ে কথা হলো?

কামাল হোসেন সাহেবই তো নেতৃত্ব দিচ্ছেন, কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ওনারা চাচ্ছেন কোন রকম হঠকারিতা মুক্ত, দেশের সুশাসন যেন হয়। দেশকে ডিসিপ্লিন, দুর্নীতি হঠকারিতামুক্ত, জিঘাংসামুক্ত বাংলাদেশের জন্য। সুখী, সমৃদ্ধ দেশ গঠনের জন্য চিন্তা পরিকল্পনা, আলাপ আলোচনা করছেন এবং ওনি এই বয়সেও ১৮ সেপ্টেম্বর (আজ) যাচ্ছেন খুলনায়।

খুলনায় হাদিস পার্কে ড. কামাল হোসেনকে প্রধান অতিথি হিসেবে ওনি বক্তব্য দিবেন। সেখানে তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়েই বৃহত্তর ঐক্যের কার্যক্রম শুরু হলো। এটা কোন দলের নয়, অবশ্যই এটা বৃহত্তর ঐক্যের প্রথম কর্মসূচি।

বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের আলোচনা কত দূর আগাল?

এই ঐক্য ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ নেই। কেন না অতীতে যারা দেশ শাসন করেছে, তারা সবাই বিপদে আছে। বিএনপির সাথে বৃহত্তর ঐক্যের আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমার ধারণা, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের সাথে আমাদের একটা ঐক্যের কিছু একটা করা যাবে।

বিএনপিও বিপদে আছে। আজকে তারা যদি পার্লামেন্টে না থাকে, দেশের জন্য যেমন খারাপ আছে, তাদের জন্যও খারাপ। আমাদের বৃহত্তর ঐক্যে তারা আসলে তারাও সেখানে অনেক কিছু শিখতে পারবে, দেশ উপকৃত হবে।

তাহলে কেবল বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট আর গণফোরাম নিয়েই হচ্ছে এই ঐক্য?

আমরা বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট্রের সাথেও কথা বলেছি। তাদের আমি বলেছি আপনারা যতটুকু চান, যেগুলো আপনারা কথায় লিখতে পারেন সেটাতো সবই বলেছি। আপনারা কৃষক শ্রমিকের স্বাস্থ্য শিক্ষা চান, সেগুলো পরিস্কারভাবে আমাদের লক্ষ্যে আছে।

শ্রমিকরা আর্মির দরে রেশন পাবে। তাদের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা পাবে, বাসস্থান পাবে- এগুলো কমিউনিস্টদের দাবি। এই দাবিগুলোর সাথে আমাদের দাবিরও মিল আছে। সুতরাং আপনারা জয়েন করুন।

কেন মনে করছেন এই ঐক্য দেশের জন্য ভালো হবে?

ড. কামাল হোসেনের মতো লোক যদি থাকে, ওনি আইনের লোক, ন্যায় ছাড়া আর কিছু তিনি বোঝে না। এখন তো আইনের নামে বেআইনি কাজ করছে। ওনি আসলে এসবের অবসান হবে।

এই বৃহত্তর ঐক্য যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে ওই এক লাখ লোক মারা যাবে না, সংখ্যালঘুও যাবে না, আর তরুণদের চাকরি হয়ে যাবে। এদেরকে আর ফ্যাল ফ্যাল করে ঘুরে বেড়াতে হবে না।

জনগণের মধ্যে কামাল হোসেনের গ্রহণযোগ্যতা আছে, এমন প্রমাণ তো কখনও মেলেনি।

আমাদেরকে যদি কথা বলতে দেয়া হয়, কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের ২০টা জেলায় মিটিং করতে পারে, দেখবেন যে কার ভোট কত। এই পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে কোন লাভ হবে না।

আপনি বিএনপির সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের ঐক্য নিয়ে সমঝোতা করার চেষ্টায়। আপনি কোন পক্ষের?

আমি বাংলাদেশের একজন দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। আমি সাধারণ মানুষের পক্ষের লোক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজের পক্ষের লোক। যারা এটা বিশ্বাস করে তাদের প্রত্যেকের আমি লোক।

বিএনপি তো ছাড় দেবে বলেছে, আবার যুক্তফ্রন্ট দেড়শ আসন, প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়ার মতো দাবি করছে তারা কি এসব দাবি করার মতো অবস্থানে আছে?

এগুলো কোন দাবি নয়, কথার কথা বলতে হয়। আজকে সবকিছু হবে ন্যায়ের উপরে, যোগ্যতার ভিত্তিতে। এই কোটা আন্দোলনের ছেলেরা বলেছে যে মেধার ভিত্তিতে সব কিছু হবে। তাদের এইটাকে যদি আমরা মেনে নেই, তাহলে সংসদও মেধার ভিত্তিতেই হবে, মন্ত্রিসভাও মেধার ভিত্তিতে হবে। এখানে হালুয়া রুটি ভাগের কোন ব্যাপার নেই। এখানে যারা স্বজ্জন ব্যক্তি তারাই আসবে।

দেখা যাবে এদের মধ্যেই একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছে, সেটা জনগণের জন্য হবে সারপ্রাইজ। আমরা যাকে চিন্তা করি না সে রকম একজন প্রধানমন্ত্রী হলো। এই সব দাবি দাওয়া বৃহত্তর ঐক্যের পথে কোন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। আর এই দাবি দাওয়া হলো কথার কথা, এগুলো ঐক্যে কোন প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না।

(চলবে)

ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/জিএম/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বাংলাদেশে একদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেই, তখন আ. লীগ থাকবে না: আমিনুল হক

উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল আ.লীগে বাড়ছে দ্বন্দ্ব

সরকারের এমপিরা ঘোষণা দিয়ে লুটপাট শুরু করেছে: এবি পার্টি

বদরের চেতনায় লড়াই অব্যাহত রাখার আহ্বান ছাত্রশিবির সভাপতির

আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ফখরুলের

বিএনপির ভারত বিরোধিতা মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ: নাছিম

ভোট ডাকাত সরকারকে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জন ন্যায়সঙ্গত: রিজভী

১১ মামলায় আগাম জামিন পেলেন বিএনপি নেতা বকুল

বর্তমান সরকার ভারতের অনুগ্রহে ক্ষমতায় বসে আছে: সাকি

জিয়াউর রহমান উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে: ওবায়দুল কাদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :