আমাদের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে, মোদিকে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৪৫ | প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:৩৭

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অব্যাহত সহযোগিতার যে বন্ধন স্থাপিত হয়েছে তা আগামী দিনে আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবেশী এই দুই দেশকে তাদের উন্নয়ন এবং জনগণের সমৃদ্ধির জন্য একযোগে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত সরকারের নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

মঙ্গলবার বিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে ‘বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং দুটি রেলওয়ে প্রকল্পের উদ্বোধনকালে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছরে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেল যোগাযোগ খাতসহ আরো নতুন নতুন খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দুই দেশের জনগণের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য একযোগে কাজ করে যাচ্ছি এবং আমরা এটা অব্যাহত রাখতে চাই। আমি নিশ্চিত যে, আমাদের জনগণের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত আমাদের মধ্যে উপস্থিত হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ঢাকা থেকে এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং জ্বলানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস বিষয়ক মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান নয়া দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাড়ে নয় বছরে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বাণিজ্য, যোগাযোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিবেশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, জনযোগাযোগ ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য়-৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন চালু হলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়ে উত্তরাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও দ্রুততর হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পটির অবস্থান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত। প্রকল্পটির আওতায় রেলওয়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ ৯৬ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার ‘বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ নির্মাণ উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ইতিহাসে আরেকটি মাইলফলক।

তিনি বলেন, এটি হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম পাইপলাইন- যা দিয়ে ভারতের শিলিগুড়িতে অবস্থিত নুমালীগড় তেল শোধনাগার হতে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর ডিপোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিকভাবে বছরে আড়াই লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা হবে এবং তা পর্যায়ক্রমে চার লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।

তিনি এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ও ভারতের যে সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন সম্ভাবনার দিগন্ত আরও সম্প্রসারিত হবে।

তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ সবসময়ই সুপ্রতিবেশী। আজকের এ আনন্দঘন মুহূর্তে আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও সে দেশের জনগণের অকুণ্ঠ সহযোগিতার কথা।

শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তার জন্মদিন (গতকাল) উপলক্ষে হিন্দিতে শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর আমরা যৌথভাবে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং রেলওয়ের দুটি প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করি। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আজ আমরা আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ যৌথ প্রকল্পের সূচনা করতে যাচ্ছি।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে তার সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এই যোগাযোগ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতার বন্ধনকে নিশ্চিতভাবে আরো সুদৃঢ় করবে।’

কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে আমদানিকৃত তেল চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে খালাস করে চট্টগ্রাম ডিপোতে সঞ্চয় করে রাখা হয়। পরে কোস্টাল ট্যাংকে করে খুলনার দৌলতপুর ডিপোতে আনা হয়। সেখানে আনলোড করে আবার রেলের ওয়াগনে আপলোড করে নিয়ে যাওয়া হয় পার্বতীপুরে।

পরিবহনজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত সময় এবং অর্থের অপচয়- পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আনলে এ তিনটিরই সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া, জ্বালানি নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে এ পাইপলাইন কার্যকর অবদান রাখবে।

পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানি সংক্রান্ত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি গত বছরের ২২ অক্টোবর স্বাক্ষরের পর চলতি বছরের ৯ এপ্রিল সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এ পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথম তিন বছর ২ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এ সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে শেষ পাঁচ বছর চার লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে। বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী ভবিষ্যতে প্রয়োজনে জ্বালানি তেলের আমদানি এই পাইপলাইনের মাধ্যমে আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। নুমালীগড় রিফাইনারি ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে ১৫ বছরের জন্য ডিজেল সরবরাহ করবে। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে এ সময় বর্ধিত করা হবে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় এলওসি’র অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প দুটি নির্মাণ করা হবে।

ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের অধীন ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যে সেকশনাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিকরণ এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মিত হলে সমন্বতি ও গতিময় ট্রেন সার্ভিস চালুর মাধ্যমে শহরতলী এবং অন্যান্য জেলাসমূহের যাত্রী সাধারণের রাজধানী ঢাকায় স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও সময় সাশ্রয়ী যাতায়াত সম্ভব হবে।

প্রকল্পটিতে ভারতীয় এলওসি’র বরাদ্দ ৯০২ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। অপরদিকে, বাংলাদেশ সরকার খরচ করবে ২০৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

যাত্রী সাধারণের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক সংখ্যক ট্রেন চালু করার লক্ষ্যে ঢাকা-টঙ্গি সেকশনে ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। ফলে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

এ প্রকল্পে নির্মিতব্য অবকাঠামোসমূহ রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, টঙ্গী-জয়দেবপুর হয়ে উত্তরাঞ্চল এবং চট্রগ্রাম ও সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও গতিময় করার ক্ষেত্রে ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর ফিডার সেকশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :