নামকরা পত্রিকা কিনে নিচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:০৯ | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

নামিদামি সংবাদপত্র কেনার দিকে ঝুঁকছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিরা। এক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছেন মার্কিন ধনকুবের মার্ক বেনিওফ এবং তার স্ত্রী। দুজনে মিলে কিনে নিয়েছেন টাইম ম্যাগাজিন।

বেনিওফ হচ্ছেন বিজনেস সফটওয়্যার কোম্পানি সেলসফোর্স ডটকমের মালিক। তিনি যুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা এই সংবাদ সাময়িকী কিনে নিয়েছেন ১৯ কোটি ডলারে।

তার আগে আমাজনের মালিক জেফ বেজোস কিনে নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা। ওই একই বছরে আরেক মার্কিন ধনকুবের জন হেনরি কিনেছেন বস্টন গ্লোব পত্রিকা।

এরকম উদাহারণ সাম্প্রতিক সময়ে আরও অনেক। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের বিধবা স্ত্রী লরেন পাওয়েল আটলান্টিক ম্যাগাজিনের সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ার কিনেছেন। বায়োটেক বিলিওনিয়ার প্যাট্রিক সুন শিয়ং কিনেছেন লস এঞ্জেলেস টাইমসসহ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট কোস্টের আরও কয়েকটি নামকরা পত্রিকা।

বিশ্বজুড়েই বড় বড় সংবাদপত্রগুলোর এখন দুর্দিন চলছে। সংবাদপত্রের সার্কুলেশন কমছে। অনলাইনে বিজ্ঞাপনের জন্য তাদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে। কাজেই এই দুর্দিনে বড় বড় ধনকুবেররা যখন বিশাল অংকের টাকা নিয়ে এগিয়ে আসছে, তখন তাতে সাড়া না দিয়ে উপায় থাকছে না তাদের।

মিডিয়া এনালিস্ট কোম্পানি ‘এনডার্স অ্যানালাইস’ এর ডগলাস ম্যাকাবে বলেন, সংবাদপত্রগুলো এখন বিপুল চাপের মুখে আছে। কারণ তারা শুরুতে অনলাইন সংস্করণ ফ্রি করে দিয়ে ভুল করেছিল। আর এখন ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাবদ তারা যা আয় করছে তা আসলে প্রিন্ট সংস্করণে পাওয়া বিজ্ঞাপন থেকে অনেক কম। ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছে এখন সংবাদপত্র শিল্প আর আগের মতো আকর্ষণীয় নয়।

তাহলে বিশ্বের নামকরা ধনীরা কেন এক্ষেত্রে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন? কিসের আকর্ষণে?

ম্যাকাবে মনে করেন, অর্থ নয়, নামকরা সংবাদপত্রগুলোর প্রভাব-প্রতিপত্তির আকর্ষণেই তারা এটা করছেন। ‘বিত্তশালীরা সবসময়েই সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। বিশেষ করে সেসব প্রভাবশালী পত্রিকা, যার মাধ্যমে তারা প্রতিপত্তি অর্জন করতে পারবেন’।

বস্টনের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার অধ্যাপক ড্যান কেনেডি বলেন, ‘প্রতিপত্তি শুধু নয়, অন্য কারণও আছে সংবাদ মাধ্যম কেনার জন্য ধনকুবেরদের এই আগ্রহের পেছনে’।

মিস্টার কেনেডি সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বই লিখেছেন, যার শিরোনাম, ‘হাউ জেফ বেজোস অ্যান্ড জন হেনরি আর রিমেকিং নিউজপেপার্স ফর দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’।

তিনি বলেন, ‘আমি বলবো এটি তাদের অহমিকা এবং ভালো কিছু করার সত্যিকারের বিশ্বাস, এই দুয়ের সম্মিলন। এরা মনে করছে এসব সংবাদপত্রের আসলে যেটা ঘাটতি তা হলো আর্থিক বিচক্ষণতা। যদি তারা মালিক হতে পারে, তাহলে এসব সংবাদপত্র আবারও ভালো করবে’।

ওয়াশিংটন পোস্টের বেলায় এই আত্মবিশ্বাস যে ফল দিচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। জেফ বেজোস তার আমাজনকে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন পোস্টের গ্রাহক সংখ্যা বাড়িয়েছেন। এটি এখন নিউ ইয়র্ক টাইমসের সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। জেফ বেজোসের এই সাফল্য হয়তো অন্যদের অনুপ্রাণিত করেছে, বলছেন মিস্টার কেনেডি।

প্যাট্রিক সুন শিয়ং যখন এই গ্রীষ্মে বস্টন গ্লোব পত্রিকা কিনে নেন, তখন তিনি বলেছিলেন, এর পেছনে কাজ করেছে তার দক্ষিণ আফ্রিকায় বেড়ে ওঠার সময়কালের অভিজ্ঞতা। বর্ণবাদের যুগে সেখানে সংবাদপত্রের কোনো স্বাধীনতা ছিল না।

সুন শিয়ং ‘ফেক নিউজ’ বা ভুয়া খবরের বিরুদ্ধেও যুদ্ধের ঘোষণা দেন। তার ভাষায় এটি ‘এই যুগের ক্যান্সার'’। তার পত্রিকা হবে সম্পাদকীয় সততা এবং স্বাধীনতার দুর্গ।

জেফ বেজোস যখন ওয়াশিংটন পোস্ট কেনেন, তখন তিনিও এরকম মহতি উদ্দেশ্যের কথা বলেছিলেন। এই ধনকুবেররা যে নামকরা সব সংবাদপত্র কিনে নিচ্ছেন তা কি এসব সংবাদপত্রের জন্য সুখবর?

কেনেডি বলেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে বিকল্প কি সেটা ভাবতে হবে। গত অর্ধ শতক ধরে আমরা দেখছি সংবাদপত্রগুলো তাদের সংবাদকর্মীদের কেবলই ছাঁটাই করে চলেছে মুনাফার জন্য। সেই অর্থে এটা ভালো খবর যে জনকল্যাণের ব্রত নিয়ে এই বিত্তশালীরা এসব সংবাদপত্র কিনছে’।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে এদের মিশন সফল হবে। ফেসবুকের সহ প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস হিউজেস একশো বছরের পুরোনো ম্যাগাজিন দ্য নিউ রিপাবলিক কিনে নিয়েছিল ২০১২ সালে। কিন্তু সেখানে দুই কোটি ডলার ঢালার পর তাকে এই পত্রিকা বিক্রি করে দিতে হয়।

কেনেডি বলেন, টাইম ম্যাগাজিনের নতুন মালিক বেনিওফকেও শুরুর কয়েক বছর লোকসানের ঝুঁকি নিতেই হবে। কারণ গণমাধ্যম ব্যবসা এখন যে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেখানে একটা নতুন পথ খুঁজে পাওয়া সহজ হবে না। সূত্র: বিবিসি

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/একে/জেবি)