‘লালমনিরহাটে ট্রেন চলাচল যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে’

এস. কে সাহেদ, লালমনিরহাট
| আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:০২ | প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৫৪

পশ্চিমাঞ্চলীয় লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের আওতাধীন চলাচলকারী ট্রেনের ১৭টি ইঞ্জিনের মধ্যে ১৬টি ইঞ্জিনের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় ২০ বছর আগে। এসব মেয়াদোর্ত্তীণ ইঞ্জিন দিয়ে কোনোরকমে জোড়াতালি দিয়েই চলছে ট্রেন। এছাড়াও রয়েছে চালক সংকট।

এসব কারণে ইতোমধ্যে এ বিভাগের ৬টি সেকশনে চলাচলকারী ২৩টি ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। অবশিষ্টগুলো যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে তারা।

বিভাগীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এ রেল বিভাগের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন ৬২টি ট্রেন ও ৬২টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। এর মধ্যে চলছে ৩৯টি ট্রেন এবং এসব ট্রেনের জন্য চলমান রয়েছে মাত্র ১৭টি ইঞ্জিন।

ইঞ্জিনগুলোর একটি ছাড়া অন্য ১৬টি ইঞ্জিনেরই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। ওই ৩৯টি ট্রেন চালানোর জন্য কমপক্ষে ৩২টি ইঞ্জিন প্রয়োজন।

অন্যদিকে ২৫৪টি পদের বিপরীতে চালক রয়েছে ১৩১ জন। বাকি ১২৩টি পদ শূন্য। এদিকে সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও সে ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না রেল মন্ত্রণালয়।

লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনে ছয়টি সেকশনে ১২টি রেল রুট রয়েছে। এগুলো লালমনিরহাট-বুড়িমারী, লালমনিরহাট-তিস্তা-রমনা বাজার, লালমনিরহাট-পার্বতীপুর, লালমনিরহাট-সান্তাহার, পার্বতীপুর-বিরল এবং কাঞ্চন-পঞ্চগড়।

সময়সূচি অনুযায়ী এসব রুটে প্রতিদিন ২৪টি মেইল এক্সপ্রেস, ২৬টি লোকাল-মিক্সড এবং ১২টি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস চলাচল করার কথা। কিন্তু চালক ও ইঞ্জিনের অভাবে ইতোমধ্যে ওই ট্রেনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও রেল বিভাগের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন মোট ৬২টি ইঞ্জিন প্রয়োজন। বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৩২টি। এর মধ্যে মেরামতের অযোগ্য হওয়ায় ছয়টি ইঞ্জিন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

আটটি ইঞ্জিন ট্রেন পরিচালনায় অক্ষম হওয়ায় সেগুলো স্টেশনে শুধু শান্টিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বাকি ১৭টি দিয়ে কোনো রকমে ৩৯টি ট্রেন চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে আবার ১৬টি ইঞ্জিন মেয়াদোত্তীর্ণ।

লালমনিরহাট বিভাগীয় সহকারী পার্সোনেল অফিসার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ রেল বিভাগের কাছে পরিত্যক্ত, অক্ষম ও সচল মিলিয়ে ৩২টি ইঞ্জিন রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৬১ সালে আমেরিকা থেকে আনা হয়েছে ১১টি, কানাডা থেকে ১৯৬৯ সালে আটটি ও ১৯৭৮ সালে ৯টি, ১৯৮১ সালে হাঙ্গেরি থেকে তিনটি এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা একটি ইঞ্জিন পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগকে দেওয়া হয়েছে।

সাধারণত প্রতিটি ইঞ্জিনের ‘ইকোনমিক আয়ুস্কাল ধরা হয় ২০ বছর। অথচ ১১টির বর্তমান বয়স ৫৪ বছর, আটটির ৪৬ বছর, ৯টির ৩৭ বছর, তিনটির ৩৪ বছর এবং সর্বশেষ পাওয়া ইঞ্জিনটির বয়স এক বছর। ফলে চলাচলকারী ১৬টি ইঞ্জিন মেয়াদোত্তীর্ণ।

লালমনিরহাট বিভাগীয় চিফ পাওয়ার (লোকোমোটিভ) কন্ট্রোলার আদম আলী জানান, এ বিভাগের কাছে থাকা আমেরিকার ১১টি ও হাঙ্গেরির তিনটি ইঞ্জিন ট্রেন পরিচালনার জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কেবল কানাডার ১৭টি ও দক্ষিণ কোরিয়ার একটি দিয়ে কোনো রকমে ট্রেন চলছে।

দ্রুত সমস্যার সমাধান করা না হলে যেকোনো সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মোস্তাফিজার রহমান জানান, লোকোমোটিভের জরুরি দরকার। প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে নিয়মিত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের হওয়ায় এ জন্য জেলার মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ওআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :