‘জাতীয় ঐক্যের’ ঘোষণা, কর্মসূচি ১ অক্টোবর থেকে

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৪৫ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পাঁচ দফা দাবি ও নয় দফা লক্ষ্য আদায়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা এসেছে সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে সমাবেশের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শুরু হবে। গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে জাতীয় ঐক্যের কমিটি গঠন করা হবে বলে ঘোষণা এসেছে সমাবেশ থেকে।

মুক্তিসংগ্রামের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, শ্রেণি-পেশা ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ কমিটি গঠনের কথা বলা হয় ঘোষণাপত্রে। এ সময় নেতারা পরস্পরের হাত উঁচুতে তুলে ধরে জাতীয় ঐক্যে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন।  

শনিবার বিকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের সমাবেশ শেষে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

ঘোষণাপত্রে ন্যায়বিচারের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য, ব্যাহত ও অকার্যকর করে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, সন্ত্রাস, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা; হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার; শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা এবং নির্বিচারে জেল-জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারসমূহ থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।

এতে বলা হয়, এখন দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করার অধিকার নেই। বাংলাদেশে এ গণতন্ত্রহীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতা কার্যত বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং তফসিলের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেবেন।

সমাবেশ থেকে দাবি করা হয়, ‘কোটা সংস্কার’এবং ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রছাত্রীসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়ে এতে বলা হয়, এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না।

জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল বলেই ’৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে, ’৯০ সালে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। আজও জনগণের সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তুলতে হবে।

বিকাল ৩টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার এই নাগরিক সমাবেশ শুরু হয়। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। প্রধান বক্তা হিসেবে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিনের পরিচালনায় এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ড. আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিশিষ্ট নাগরিক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয় জোনায়েদ সাকি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন প্রমুখ।

এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টু, আওয়ামী লীগের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমির নূর হোসাইন কাসেমী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পাটির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় পার্টির (জাফর) আহসান হাবীব লিংকন প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/এমএবি/জেবি)