আলফাডাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ-ভাঙচুর
ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার বারইপাড়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার সকালে গ্রাম্য দলাদলিকে কেন্দ্র করে আপন দুই সহোদর অলিয়ার ও ইকরাম সমর্থকদের মাঝে এ সংঘর্ষ হয়।
জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে ঘটনার দিন ইকরাম গ্রুপ হঠাৎ অলিয়ার গ্রুপের উপর হামলা করে। পরে উভয়পক্ষের লোকজন রামদা, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সময় বাড়ি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এতে প্রায় ২০টি গরিব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে মিটুল শেখ, ডালিম শেখ,বাবু শেখ, জামাল শেখ, ওহিদ শেখ, সিরু মোল্যা, মিটুল মোল্যা, উজ্জ্বল শেখ, কবির শেখ, হাসমত শেখ ও বাবুল শেখ। আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় এসব পরিবারের সকল পুরুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
দেখা যায়, ইট দিয়ে তৈরি করা রাস্তার বিভিন্ন স্থান থেকে ইট তুলা হয়েছে। পরে জানা যায়, এসকল ইট তুলে সংঘর্ষের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন বাড়িতে এসকল ইট পড়ে স্তুপে পরিণত হয়েছে।
ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার মিটুল শেখের স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বাড়িতে চানাচুর তৈরির কারখানা রয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষের লোকেরা কারখানার সব কিছু নষ্ট করে দিয়েছে ও মূল্যবান সব জিনিস লুটপাট করেছে। কান্নাজড়িত কন্ঠে মিটুল শেখের স্ত্রী বলেন, সংঘর্ষের সময় কারখানায় থাকা শুকনা গুড়ো মরিচ এনে আমার গায়ে ঢেলে দিয়েছিলো প্রতিপক্ষ।
বাবুল শেখের স্ত্রী বলেন, আমাদের একমাত্র সম্বল কৃষিকাজ। কিন্তু প্রতিপক্ষ আমাদের ক্ষেতে গিয়ে আষাঢ়ে ধানে পানি সেচের দুটি মেশিন ভেঙে দিয়েছে।
ভাঙচুরের শিকার ডালিম শেখের স্ত্রী বলেন, মাত্র কয় মাস হলো সমিতি থেকে ৭০হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ঘরটি দিয়েছি। প্রতিপক্ষ ঘরের টিনগুলো কুপিয়ে তছনছ করে দিয়েছে। এখন থাকারও কোন জায়গা নেই।
ওহিদ শেখের স্ত্রী রুমা বেগম জানান, বাবার বাড়ি থেকে ১মাস আগে কিছু টাকা এনে একটা ঘর দিয়েছি কিন্তু ঘরের এখন কিছু নেই।
উজ্জ্বল শেখ নামের এক ব্যক্তি জানান, কিস্তিতে ১৫দিন আগে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ফ্রিজ কিনেছি। কিন্তু ফ্রিজটি এমনভাবে কুপিয়ে নষ্ট করা হয়েছে যা কখনও ঠিক হবে না।
তাণ্ডবের শিকার পরিবারের সদস্যরা জানান, তাঁদের এখন পথে বসার মতো অবস্থা। বাড়িতে বসবাস করার মতো অবস্থা তাদের নেই, নিরাপত্তাও নেই। তাই তারা গ্রাম ছেড়ে এখন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এ বিষয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল করীম মুঠোফোনে জানান, এলাকাজুড়ে পুলিশ টহলে আছে।
এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। উভয় পক্ষের এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে অলিয়ার গ্রুপের লুটকৃত ৫ নসিমন পাট ও বিক্রয়দাতা সানোয়ার (ইকরাম গ্রুপ) কে শুক্রবার বিকাল ৫টার সময় বোয়ালমারী উপজেলার সহস্রাইল বাজার থেকে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস