‘ত্রিপুরায় পর্যটকদের আকৃষ্টে উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য সরকার’

মহিউদ্দিন মিশু, আখাউড়া থেকে
 | প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:০৪

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কৃষি, পরিবহন ও পর্যটন দফতরের মন্ত্রী প্রাণজীৎ সিংহ রায় বলেছেন, দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে এবং পর্যটকের আগমন আরও বাড়াতে রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো আরও উন্নত করা হবে। এতে রাজ্যের অর্থনীতিতে পর্যটক খাত আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি মনে করেন।

ত্রিপুরা রাজ্যের ক্ষমতাসীন বিজেপি'র কৃষি, পরিবহন ও পর্যটন দফতর মন্ত্রী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রাণজীৎ সিংহ রায় শনিবার সকালে কুমিল্লায় এক গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন। এ সময় আখাউড়া স্থলবন্দর চেকপোস্টে বিজিবির অতিথিশালায় ঢাকাটাইমস প্রতিবেদককে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত উন্নয়নে তার সরকারের নীতিমালা আরও যুগোপযোগী করা হবে। এছাড়াও ট্যুরিজম ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর সীমান্ত পথে পর্যটক হয়রানি বন্ধ করাসহ আগরতলা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস্ সংশ্লিষ্ট কাজ সহজ করা নিয়েও এ প্রতিবেদকের বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধানে তার সরকারের ভূমিকা তুলে ধরেন মন্ত্রী।

প্রাণজীৎ সিংহ রায় বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে শুধু পর্যটন দফতরই নয়, এবার পর্যটন ক্ষেত্রের বিকাশে এগিয়ে আসছে রাজ্যর অন্যান্য দফতরও। আয়ের উৎস হিসাবে পর্যটন বড় ক্ষেত্র হতে পারে বলে মনে করছেন রাজ্য সরকার। এ ক্ষেত্রে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে রাজ্যের তিন জেলায় তিনটি হেরিটেজ ভিলেজ স্থাপন করতে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ক্রমেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে ত্রিপুরার রাজধানীসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পর্যটন কেন্দ্রগুলো। তাই দিন কি দিন রাজ্যে পর্যটক সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ত্রিপুরার রাজ্যে বিদেশি পর্যটক এসেছেন ৩ হাজার ৮৭ জন। চলতি ২০১৮সালের গত ৬’মাসে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বছর শেষে এ সংখ্যায় দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি অশা প্রকাশ করেন।

মন্ত্রী বলেন, পর্যটকরা মূলত রাজধানী আগরতলার উজ্জ্বয়ন্ত প্রাসাদের ত্রিপুরা স্টেট মিউজিয়াম, ঊনকোটি পাহাড়ের প্রাচীন মূর্তী, মেলাঘরের নীরমহল, সিপাহিজলা অভয়ারণ্য, তৃষ্ণা অভয়ারণ্য, বিলোনীয়ার চোত্তাখোলায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী উদ্যান, বক্সনগরের বৌদ্ধ স্তুপের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, উদয়পুরের ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির, গোবিন্দ মানিক্যের রাজ প্রাসাদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত মালঞ্চ নিবাস, জ¤পুই পাহাড়, পিলাকের প্রাচীন মূর্তী উল্লেখযোগ্য।

কথা প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদককে মন্ত্রী জানান, ত্রিপুরাকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে দূরবর্তী স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।

ভারতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য হল ত্রিপুরা। ছোট হলেও এটি অতীব সুন্দর একটি রাজ্য। শান্ত সরল ও মনোরম পরিবেশ। এই রাজ্যের ইতিহাস মহাভারতের সময়কাল থেকে সূচনা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এই রাজ্যটি ভারতের সঙ্গে মিলিত হয় এবং ১৯৭২ সালে ত্রিপুরা একটি রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে। এই রাজ্যটি পূর্বে মিজোরাম, উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম এবং উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত।

তিনি জানান, ত্রিপুরার অভয়ারণ্য ¯পষ্টভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতীয় রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে ব্যাখ্যা করে। এই রাজ্যে চারটি অভয়ারণ্য রয়েছে যেগুলো বন্যপ্রাণীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে এবং প্রকৃতির একটি অত্যাশ্চর্য আলোআঁধারি নিয়ে অবস্থিত। গোমতী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, রোয়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, সিপাহিজলা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ত্রিপুরাকে করেছে সমৃদ্ধ। এই অভয়ারণ্য হাতি, হরিণ, সম্বর, বাইসনের জন্য বিখ্যাত। রোয়া অভয়ারণ্যটি ওষধি, পশুখাদ্য, অর্কিড এবং অন্যান্য উদ্যানজাত গাছপালার জন্য সুবিখ্যাত। মন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ঊনকোটি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আগরতলা থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দূরে কৈলাসহর। কৈলাসহর থেকে ৮ কি.মি দূরে রঘুনন্দন পাহাড়। এই পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা অসংখ্য দেব-দেবীর মূর্তি। এই মূর্তিগুলো সম্ভবত সপ্তম থেকে নবম শতাব্দীর। প্রাচীন এই মূর্তিগুলোই পর্যটকদের ডেকে আনে। সঙ্গে রয়েছে এখানকার নৈঃস্বর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রতিবছর মকরসংক্রান্তি ও অশোকাষ্টমীতে মেলা বসে। আগে ভক্তরা করলেও এখন ত্রিপুরা সরকারই এই মেলার আয়োজন করে থাকে।

ইংরেজিতে ওয়াটার প্যালেস অথবা নীরমহল। আগরতলা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে মহারাজার অবসর বিনোদনের এই মহলটি এখন পর্যটকদের আকর্ষণের মূলকেন্দ্র। ১৯৩০ সালে মহারাজ বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যের আমলে নির্মিত প্রাচীন স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন। প্রাসাদটিতে ত্রিপুরার ঐতিহ্য মাথায় রেখে হিন্দু ও মুসলিম উভয় স্থাপত্যেরই ছোঁয়া রয়েছে। বিশাল প্রাসাদকে ঘিরে রয়েছে প্রায় ৫,৩০০ কিলোমিটারের এক দীঘি। দীঘিরনাম রুদ্রসাগর। এখানে প্রতি শীতে আয়োজন করা হয় নীরমহল পর্যটন উৎসবের।

ছোটদের বিনোদনের জন্য রয়েছে একটি পার্ক। স্থানীয়দের মনসামঙ্গল কীর্তন বাড়তি পাওনা। মেলাঘরের এই নীরমহলের কাছেই সোনামুড়া বক্সনগর। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে এই সোনামুড় ও বক্সনগরও পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। বক্সনগরে খনন করে পাওয়া গিয়েছে বৌদ্ধ বিহার। পর্যটকদের কাছে এই বৌদ্ধবিহারও বেশ আকর্ষণের।

পর্যটন দফতর মন্ত্রী প্রাণজীৎ সিংহ রায় আরও বলেন, বিলোনিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান। রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অনেক ঘটনা। এই স্থানেই স্বাধীনতা যুদ্ধের কে ফোর্সের অধিনায়ক খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন বাহিনী প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিলোনিয়ার চোত্তাখোলায় মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে স্মারক উদ্যানের উদ্বোধন করেছিলেন। সবচেয়ে উঁচু টিলার ওপর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আদলে বঙ্গবন্ধুর ৩২ ফুট দীর্ঘ একটি ভাস্কর্য ও সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে।

পর্যটকের আকর্ষণে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী উদ্যানকে নতুনভাবে আরও ঢেলে সাজানো হচ্ছে বলেও রাজ্যের বিজেবি সরকারের কৃষি, পরিবহন ও পর্যটন দফতর মন্ত্রী প্রাণজীৎ সিংহ রায় এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. ফোরকান খলিফা, ব্যবসায়ী আব্বাস উদ্দিন ভূঁইয়া চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা পিয়ার হোসেন প্রমুখ।

ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :