মহাসড়কে সাড়ে চার ঘণ্টা শ্রমিক অবরোধ, যাত্রীদের ভোগান্তি

গাজীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৫

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ডেগেরচালা এলাকায় একটি কারখানায় মৃত্যুর গুজব, সরবরাহ করা পানি পান করে অসুস্থ হওয়ার প্রতিবাদ ও বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শ্রমিকরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের একটি অংশ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বেশকিছু যানবাহন ভাঙচুর করে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের হটিয়ে দিলে সাড়ে চার ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রোধে ওই এলাকার অন্তত ৫০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, শনিবার বিকালে ডেগের চালা এলাকায় নিট অ্যান্ড নিটেক্স কারখানার কিছু শ্রমিক কারখানার সরবরাহ করা পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ঘটনার পর শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা দাবি করেন, ওই পানি পান করে একজন শ্রমিক মারা গেছেন। পরে রবিবার সকালে শ্রমিক মৃত্যুর গুজব ও শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার প্রতিবাদে ও বকেয়া বেতনের দাবিতে ফের বিক্ষোভে নামেন শ্রমিকরা। একপর্যায়ে তারা মালেরবাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বেশকিছু যানবাহন ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এসময় তাদের সঙ্গে আশেপাশের এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের মহাসড়ক থেকে সরে যেতে বলেন। কিন্তু শ্রমিকরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধ দীর্ঘ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে তাদের সরিয়ে দেয়। ফলে দুপুর আড়াইটার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

গাছা থানার ওসি কাজী ইসমাইল হোসেন জানান, ঈদের আগে ওই কারখানায় আগস্ট মাসের অর্ধেক বেতন দেয়া হয়। বাকি অর্ধেক বেতনের টাকা ১২ সেপ্টেম্বর দেয়ার কথা থাকলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তা না পারায় শনিবার শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। শনিবার রাত ১০টার দিকেও তারা মহাসড়কে অবস্থান নেয় এবং বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু এর মধ্যেই শনিবার রাতে কারখানার পানি খেয়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিকের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর আসে। গুজব ওঠে পানি পান করে শ্রমিক মৃত্যুর। পুলিশ কয়েক দফা শ্রমিকদের সরানোর চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে ও লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলে দুপুর আড়াইটার দিকে মহাসড়কে আবার যান চলাচল শুরু হয়।

কারখানার শ্রমিকরা জানায়, তাদের বেতন না দিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ করখানা বন্ধের পাঁয়তারা করছিল। শ্রমিকদের যাতে বেতন না দিতে হয়, সেজন্য কৌশলে তারা ট্যাংকের পানির সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দিয়েছে। ওই পানি খেয়ে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর জের ধরে নিট অ্যান্ড নিটেক্স লিমিটেডের কর্মীরা সকালে কাজে যোগ না দিয়ে কারখানার ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর মধ্যে পানি খেয়ে অসুস্থ কয়েকজনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নেয় এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভাঙচুরের আশঙ্কায় ওই এলাকা ও আশপাশের এলাকার অন্তত ৫০টি তৈরি পোশাক কারখানা আজকের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ সময় যানবাহন না চলায় ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন কলেজের পরীক্ষার্থী, পথচারীসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। অনেকে পায়ে হেঁটে আধ ঘণ্টা-এক ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছেন।

বিষয়টি নিয়ে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেলালুর রহমান জানান, বকেয়া বেতনের দাবি ও পানি পান করে শ্রমিক নিহতের গুজবে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে। পানি পানে মৃত্যুর বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। কারও মারা যাওয়ার খবরের কোনো সত্যতা আমরা পাইনি। বেতন পরিশোধে মালিক, বিজিএমই কর্তৃপক্ষ বৈঠক করছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :