নাটকের পর নাটক, রুদ্ধশ্বাস জয়

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:০৪ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:২৬

দেলোয়ার হোসেন, আবুধাবি থেকে

ফাইনালে টিকে থাকার জন্য শুধু নয়, ম্যাচটার গুরুত্ব ছিল অন্যখানেও। শক্তির বিচারে বলুন আর ক্রিকেট ঐতিহ্যে বিচার করুণ, আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ বেশ খানিকটা এগিয়ে।। কিন্তু সেই আফগানদের কাছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলে গত চার ম্যাচে টানা হারতে হয়েছে। এ ম্যাচে হারলে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যেমন পড়তে হতো, টাইগারদের ক্রিকেট ইমেজেরও বড্ড ক্ষতি হয়ে যেত।

না, আবুধাবিতে হারতে হয়নি বাংলাদেশকে। অনেক নাটকীয়তার পর ৩ রানে আফগানিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখলো বাংলাদেশ। গত ম্যাচে পাকিস্তানের কাছেও শেষ ওভারের নাটকীয়তার পর হারতে হয়েছিল আফগানদের। টানা দুই হারে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে আফগানিস্তানের।

এক সময় মনে হয়েছিল, ম্যাচ আফগানিস্তানই জিততে চলেছে। তবে মাঝরাফির জোড়া আঘাতের পর শেষ দিকে ম্যাচ গড়ায় নাটকীয়তায়। নাটকীয়তার শেষ দৃশ্যে এসে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। শেষ ওভারে আফগানদের দরকার ছিল ৮ রান। হাতে চার উইকেট। কিন্তু দুর্দান্ত বোলিং করে এক উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি মাত্র ৪ রান দেন কাটার বয়।

আফগানিস্তানের সামনে ছিল ২৫০ রানের টার্গেট।ব্যাটিং উইকেট।এই রান খুব কঠিন নয়। বাংলাদেশের দরকার আটসাট বোলিং। মাশরাফির শুরুটা খারাপ হয়েছিল, অনেক বেশি রান দিয়ে ফেলেন প্রথম দুই ওভারে। তবে অন্যরা বেশ আটসাট বোলিংই করেছেন শুরুতে।

দলকে প্রথম উইকেট এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ইহসানউল্লাহকে ৮ রানে বিদায় করেন কাটার বয়। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলেও দর্দান্ত এক থ্রোতে রহমত শাহকে ১ রানে রান আউট করে স্বস্তি এনে দেন সাকিব। ৮তম ওভারে আফগানদের রান ২ উইকেটে ২৬।

কিন্তু এই স্বস্তি মিলিয়ে যেতে থাকে আস্তে আস্তে। ওপেনার শাহজাদ-শহিদি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ান। অবশেষে জুটি ভাঙেন অনিয়মিত বোলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মোহাম্মদ শাহজাদকে ৫৩ রান বোল্ড করেন তিনি। আফগানিস্তান ১০০ রান পূরণ করে ২৭.৪ ওভারে, ৩ উইকেট হারিয়ে।

শাহজাদ আউট হলেও চিন্তা যায়নি। এবার চিন্তার কারণ হয়ে ওঠেন হাসমউল্লাহ শহিদি- অধিনায়ক আসগর আফগান। ৭৮ রানের জুটি গড়ার পর আসগরকে (৩৯ রান) বিদায় করেন মাশরাফি। দুর্দান্ত ক্যাচ লুফেন মাহমুদঊল্লাহ রিয়াদ।

কিন্তু তখনও চিন্তার অনেক কারণ ছিল বাংলাদেশের সামনে। হাতে তখনও ছয় ছয়টি উইকেট। শহিদি বড় স্কোরের দিকে ছুটছিলেন। মোহাম্মদ নবি উইকেটে, শেনওয়ারি, নাইব, রশিদ খানরা আছেন। আফগান ব্যাটিং লাইন বেশ লম্বা।

কঠিন সময় দলের। ঠিক তখনই আঘাত হানেন মাশরাফি। বিপজ্জনক শহিদিকে বোল্ড করে দলকে ম্যাচে ফেরান অধিনায়ক।

এরপর শেষ চার ওভারের উত্তেজনায় চলে আসে ম্যাচ। ২৪ বলে আফগানদের দরকার ৪২ রান। হাতে ৫ উইকেট। ৪৭তম ওভার করতে এসে ১১ রান দেন মাশরাফি। শেষ তিন ওভারে দরকার ৩১ রান। মুস্তাফিজের ৪৮তম ওভার থেকে ১২ রান নিয়ে সমীকরণ সহজ করে নেন মোহম্মদ নবি ও সেনওয়ারি। ১২ বলে আফগানদের দরকার ১৯ রান। ৪৯তম ওভারে একটা উইকেট নেন বটে, সাকিব দেন ১১ রান।

শেষ ওভারে আফগানিস্তাদের দরকার ৮ রান। ৭ রান হলে ম্যাচ টাই। বোলার মুস্তফিজুর রহমান। এ কারণেই আশা ছিল বাংলাদেশের। প্রথম বলে দেন ২ রান। দ্বিতীয় বলে রশিদ খানকে (৫)  বিদায় করেন। ৪ বলে আফগানদের দরকার ৬ রান। তৃতীয় বলে দেন এক রান। চতুর্থ বলটি ডট দেন মুস্তাফিজ। পঞ্চম বলে ১ রান। শেষ বলে দরকার ৪ রান। ম্যাচে চরম নাটকীয়তা।

দারুণ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বলটি করেছিলেন কাটার বয়। সজোরে মারতে গিয়ে ব্যাটটাই ছুড়ে ফেলেন সেনওয়ারি। মুস্তাফিজের শেষ ওভারের ম্যাজিকে এভাবে নাটকীয়ভাবে ৩ রানে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪৬ রানে থামে বাংলাদেশ। দুটি করে উইকেট নেন মাশরাফি ও মুস্তাফিজ।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৪৯ তুলে বাংলাদেশ।তামিমের অনুপস্থিতিতে এমনিতেই বেহাল বাংলাদেশের ওপেনিং পজিশন, সেটাকে আজও বিপজ্জনক করে তুলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের দুই ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ৭ ও ৭। এ ম্যাচে ১৮ বলে ৬।

পরীক্ষিত ইমরুলদের বাইরে রেখে শান্তর মতো ওপেনারকে দলে নেওয়া কতটা ভুল ছিল, সেটা এখন বুঝতে পারছেন নির্বাচকরা। দল যখন খাদের কিনারে তখন জরুরি ভিত্তিতে দেশ থেকে ডেকে আনা হয় ইমরুল ও সৌম্য সরকারকে।

কিন্তু সৌম্যকে বসিয়ে রেখে ব্যর্থ শান্তকে আবারও সুযোগ দিয়ে সমালোচিত হন টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে কঠিন পরিস্থিতি জয় করে জবাব দিয়েছেন ইমরুল। শান্তর পরিবর্তে সৌম্য একাদশে থাকলে  আরও ব্যালেন্স হতো দল, মনে করছেন সবাই। গত তিন ম্যাচে ১৩ রান করার পর আজ অবশ্য ৪২ করেছেন লিটন দাস।

বাহাবা পাওয়ার যোগ্য ইমরুল। তিন দিন টানা ম্যাচ খেলার পর দুদিনের জার্নি।ক্লান্ত ইমরুল কি ঠিকঠাক ব্যাটিং করতে পারবেন? এই প্রশ্ন কিন্তু ছিল। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে সফল ইমরুল। গত বছর অক্টেবরে শেষ ওয়ানডে খেলেন দলের হয়ে। কঠিন পরিস্থিতিতে দলে ফিরেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ইমরুল। দলে যে টানা ব্যাটিং ধস চলছিল, সেটা সামাল দিয়েছেন তিনিই। ৭২ রানে অপরাজিত ইমরুল।

দলের বিপদ ঘটিয়ে ৬ রানে জলদি ফিরে যান শান্ত। এরপর ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যান মিথুন আউট হন ১ রানে। সাকিব ০, মুশফিক ৩৩ করে রান আউট হয়ে গেলে আরেকটি ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ।

তবে এই বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করেন ইমরুল কায়েস ও মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ। সাধারণত ওপেন করেন ইমরুল। তবে এদিন মিডল অর্ডারে নেমেও দারুণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন তিনি।

রিয়াদ- ইমরুল মিলে তুলেন ১২৮ রান। ৮১ বলে ৭৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন রিয়াদ। ৮৯ বলে রান করে ৭২ অপরাজিত থাকেন ইমরুল কায়েস। কঠিন পরিস্থিতি জয় করেন ইমরুল। বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৪৯।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ফল: তিন রানে জয়ী বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ইনিংস: ২৪৯/৭ (৫০ ওভার)

(লিটন দাস ৪১, নাজমুল হোসেন শান্ত ১, মোহাম্মদ মিথুন ৬, মুশফিকুর রহিম ৩৩, সাকিব আল হাসান ০, ইমরুল কায়েস ৭২*, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭৪, মাশরাফি বিন মুর্তজা ১০, মেহেদী হাসান মিরাজ ৫*; আফতাব আলম ৩/৫৪, মুজিব উর রহমান ১/৩৫, গুলবদিন নাইব ০/৫৮, মোহাম্মদ নবী ০/৪৪, রশীদ খান ১/৪৬, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ০/৯)।

আফগানিস্তান ইনিংস: ২৪৬/৭ (৫০ ওভার)

(মোহাম্মদ শাহজাদ ৫৩, ইহসানুল্লাহ ৮, রহমত শাহ ১, হাশমতউল্লাহ শহীদি ৭১, আসঘার আফগান ৩৯, মোহাম্মদ নবী ৩৮, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ২৩*, রশীদ খান ৫, গুলবদিন নাইব ০*; মাশরাফি বিন মুর্তজা ২/৬২, নাজমুল ইসলাম অপু ০/২৯, মোস্তাফিজুর রহমান ২/৪৪, মেহেদী হাসান মিরাজ ০/৩৬, সাকিব আল হাসান ১/৫৫, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১/১৭)।

প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)।

(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/ডিএইচ)