যুক্তরাষ্টের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে চীনের শ্বেতপত্র

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৪২ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৫৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম পরাশক্তি মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ ও দেশটির সঙ্গে সম্পর্কে বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে আরেক অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়াবলী ও দুই দেশের টানাপড়েনের যুক্তিসঙ্গত সমাধান তুলে ধরা হয়েছে।

সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর একটায় ফ্যাক্টস এন্ড চীনা’স পজিশন নামের শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দেশটির রাষ্ট্রীয় কাউন্সিল। খবর চাইনা প্লাস ও সিনহুয়া।

ছয়টি অংশে লিখিত শ্বেতপত্রে ৩৬ হাজার চীনা ক্যারেক্টার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উইন উইন অবস্থানের বর্ণনা, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের প্রকৃত ব্যাখ্যা, মার্কিন প্রশাসনের বাণিজ্য সুরক্ষাবাদী অনুশীলন, মার্কিন প্রশাসনের বাণিজ্যের ক্ষতিকর অনুশীলন, মার্কিন প্রশাসনের অর্থনীতির অযোগ্য অনুশীলনগুলির কারণে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি এবং চীনের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।

চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উন্নয়নশীল দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসেবে উল্লেখ করে শ্বেতপত্রে বলা হয়, ‘চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উভয় দেশের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ‘দুই দেশ উন্নতির দুটি অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও আলাদা। তাই এই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে বৈসাদৃশ্য প্রাকৃতিক ঘটনা। একারণে কিভাবে দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস, সহযোগিতার উন্নতি এবং বৈসাদৃশ্যকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।’

‘সমতা, যুক্তিসঙ্গতা এবং একে অপরকে গুরুত্বারোপের মাধ্যমে উভয় দেশ বাণিজ্য ও বাণিজ্য সম্পর্কিত যৌথ কমিশন, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সংলাপ এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক সংলাপের মতো বহু যোগাযোগ ও সমন্বয় প্রক্রিয়া স্থাপন করেছে।’

শ্বেতপত্রে দুই দেশের যৌথ কমিশন ও প্রচেষ্টার গুরুত্ব উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘এসব প্রচেষ্টার ফলে গত ৪০ বছরে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে সকল বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছে। যা সামগ্রিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভারসাম্য রাখতে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।’

আরও বলা হয়, ‘তবে ২০১৭ সালে নতুন মার্কিন প্রশাসন আমেরিকা ফার্স্ট নীতি গ্রহণ করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নির্দেশ করে এমন পারস্পরিক শ্রদ্ধার মৌলিক নীতিগুলোকে বর্জন করেছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে অভিযোগ এনে শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ‘এর মাধ্যমে তারা একতরফা নীতি প্রচার করছে, সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করা, বিভিন্ন দেশ এবং অঞ্চলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা- বিশেষ করে চীনের ওপর, শুল্কারোপের মাধ্যমে ভয় দেখানো এবং চীনের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।’ 

চীন উভয় পক্ষের সাধারণ স্বার্থ ও বিশ্ব বাণিজ্যের দৃষ্টিকোণের বিষয়টি বেশি জোর দিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এছাড়া সংলাপ এবং পরামর্শের মাধ্যমে বিরোধ সমাধানের নীতি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ধৈর্য ও বিশ্বাস বিষয়ে উদ্বেগের জবাব দেয়া হয়েছে।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ‘চীন ইতোমধ্যেই অনেক সমস্যা অতিক্রম করেছে। দুই দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীল করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও এগিয়ে আসতে হবে এবং ব্যবহারিক সমাধানের প্রস্তাব দিতে হবে।’

তবে সেটি না করে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বিরোধিতা করছে এবং চীনকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বলে শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়।

চীনের বক্তব্য, এ কারণে দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দুই দেশ এবং দেশের মানুষের মধ্যে কয়েক বছর ধরে গড়ে ওঠা সম্পর্কের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এটি বহুমুখি বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং মুক্ত বাণিজ্য নীতির জন্য গুরুতর হুমকির সৃষ্টি করেছে।’

ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/একে/ডিএম