খালেদার মামলায় আবার বিচারকের প্রতি অনাস্থা

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:৩৯ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৩৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ন্যায়বিচার ‘না পাওয়ার’ আশঙ্কার কথা জানিয়ে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারক আখতারুজ্জামানের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন দুই আসামি। এই বিচারকই বিএনপি নেত্রীকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং দুই কোটি টাকা জরিমানা করেছেন।

সোমবার পুরনো ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে অস্থায়ী আদালতে আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা লিখিতভাবে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামানের প্রতি এ অনাস্থা জানান।

আদালত ও বিচারক পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করা হবে জানিয়ে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার শুনানি ২০ কার্যদিবস মুলতবির আবেদন করেন এ দুই আসামির আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও আক্তারুজ্জামান।

বিচারক আখতারুজ্জামান বিষয়টি শুনে মঙ্গলবার আদেশের জন্য রেখেছেন। সেই সঙ্গে আসামি মুন্নার জামিন বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

আখতারুজ্জামানের আদালতে জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা চলছিল সমান্তরালে। আর এই আদালতের বিচারক দুইবার পাল্টেছে খালেদা জিয়ার অনাস্থার কারণে। 

গত ৮ ফেব্রুয়ারি অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় শেষ শুনানি হয়। এই মামলায় আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পর খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষেই আসত রায়।

তবে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর অসুস্থতার কথা বলে আর আদালতে যাননি এবং এ কারণে মামলাটি ঝুলে যায়। এই পরিস্থিতিতে বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে কারাগারেই আদালত বসে।

৫ সেপ্টেম্বর শুনানিতে উপস্থিত হয়ে খালেদা জিয়া জানান, তিনি অসুস্থ এবং আর আদালতে আসতে পারবেন না। এরপর ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি অনুপস্থিত থাকেন এবং এ সময় দুদক তার অনুপস্থিতিতেই বিচারের আবেদন করে। ।

গত ২০ সেপ্টেম্বর এই আবেদন গ্রহণ করে এ মামলার অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক শুনানি আবার শুরু করার জন্য ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখ রেখে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুনানির সময় ঠিক করে দিয়েছিলেন বিচারক।

বিএনপি নেত্রীর অনুপস্থিতিতে শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার আবেদন করেন। বিচারক আগের মতই কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

সোমবার আদালত বসলেও আসামিপক্ষের অনাস্থা নিয়ে আলোচনায় যুক্তিতর্ক শুনানি আর শুরু হয়নি।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন তার দুই আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সানাউল্লাহ মিয়া। আর মামলার বাদী ও তদন্তকারী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। এছাড়া ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের জানান, ‘আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক পেছানোর জন্য সময়ের আবেদন ও জামিন বৃদ্ধির আবেদন করা হয়। বিচারক যুক্তিতর্কের আবেদন ও জামিন বৃদ্ধির আবেদন মঞ্জুর করে মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের দিন নির্ধারণ করেন। এছাড়া খালেদা জিয়াকে জেলকোড অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন বিচারক।’

সানাউল্লাহ আরও জানান, এ মামলায় আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের পক্ষে মামলার কার্যক্রম মুলতবি চেয়ে সময়ের আবেদন করেছেন তাদের আইনজীবীরা।

অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল মামলার যুক্তি উপস্থাপন করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘আসামিপক্ষ যদি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন না করে, তাহলে রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হোক।’

পরে দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত দুই আসামির মামলার কার্যক্রম মুলতবির আবেদন নামঞ্জুর করেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।

ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/ডিএম