কেউ শোনেনি দুই কিশোরের আকুতি

মনোনেশ দাস, ময়মনসিংহ
 | প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:০৬

‘আমগরে মাফ কইরা দেন। পেডের দায়ে চুরি করছি। আর করতাম না। আমগরে মারেন-কাডেন-পুলিশে দেন; কিন্তু মাথা নাইড়া কইরেন না। পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব জানলে মরা ছাড়া গতি থাকব না।’ কেউ শুনেনি এই দুই কিশোরের আকুতি। চুরির অপরাধে অবশেষে চুল কেটে দেয়া হলো তাদের।

তিনটি হাঁস চুরির দায়ে এলাকাবাসী বুধবার ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার ঈশ্বরগ্রামে এ ঘটনা ঘটায়। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ কিছুই জানে না বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞরা জানান, অমানবিক সাজা আইন বহির্ভূত, এটা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় কাজ। যেমন- নাকে খত দেয়া, জুতার মালা গলায় পরানো, থুথু চাটানো, মাথা নেড়ে করা, দোররা মারা, এক ঘরে করা এবং মাটিতে পুতে ঢিল বা পাথর ছোড়া ইত্যাদি। অমানবিক সাজা মানুষের মানবিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক বংশ মর্যাদা নষ্ট করে। ভুক্তভোগী সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপণ্য হওয়ার কারণে অনেক সময় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অনেক সময় অমানবিক সাজা মানুষকে হিংস্র হতে সহায়তা করে। যেহেতু মানুষ সামাজিক জীব এবং সৃষ্টির সেরা জীব, তাই কোন মানুষকেই অমানবিক সাজা দেয়া কোনক্রমেই বৈধ কাজ নয়। এটি একটি আইন বহির্ভূত এবং সংবিধান বহির্ভূত কাজ। যেহেতু অমানবিক সাজা আইন বহির্ভূত, সেহেতু কোন মানুষকেই এ ধরনের সাজা দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের ৩৫নং ধারায় বলা হয়েছে- ‘কেউ কাউকে অমানবিক সাজা দিতে পারবে না।’ সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের ৫নং ধারায়ও এ কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের সর্বাগ্রে ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন। তাদের উচিত আইনগত দিক তুলে জনগণকে সচেতন করা, অপরাধীকে বিচার বিভাগের কাছে সোপর্দ করা এবং তা প্রচার করা। যারা ধর্ম প্রচার কাজে সম্পৃক্ত তাদের উচিত মানুষকে বোঝানো যে, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব এবং তার মর্যাদা নষ্ট করা যাবে না। অমানবিক সাজা মানুষের মনুষত্বকে নষ্ট করে এবং সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। এব্যাপারে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন অভিজ্ঞরা।

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :