খালেদাকে ছাড়াই নির্বাচনে রাজি বিএনপি?

বাছির জামাল
| আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০৭ | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:০০
ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আলাপকালে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, ‘৩০ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে। এর পর যেকোনো একদিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।’ ওই আলাপে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, ‘বিএনপিসহ সব দলই এই নির্বাচনে অংশ নেবে’, যদিও বিএনপি আগামী একাদশ নির্বাচনে যাবে কি না এ নিয়ে এখনো প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা দেয়নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দলটি গত দুটি সমাবেশে প্রকাশ্যে বলেছে যে, তাদের কারাবন্দি দলীয়প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি না দিলে আগামী একাদশ নির্বাচনে যাবে না। এর সঙ্গে অবশ্য আরও বেশ কয়েকটি দাবিও উচ্চারণ করেছেন দলটির নেতারা। সেগুলো হলো তফসিল ঘোষণার আগে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।

তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপে মনে হয়েছে যে, বর্তমানে সরকারের যে অবস্থান তাতে আন্দোলন এবং আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন নয়’ বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্য তাদের একটি নির্বাচনি কৌশল মাত্র। কেননা তারা কোনো বিবেচনাতেই বলতে পারেন না যে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবেন। তাই ‘মালয়েশিয়া মডেল’ অনুযায়ী এখন বিএনপি ২০ দলীয় জোট অক্ষুণ্ন রেখে অপরাপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার বিষয়টি মাথায় রাখছে। তাদের চার দাবি পূরণ হলেই খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে দলটি। এই চার শর্ত হলো নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সহায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচনের সময় বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন।

অনেক দিন ধরেই বিএনপি মাঠে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। সরকারের অনমনীয় কৌশলের কারণে খালেদা জিয়াকেও মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আগামী সংসদ নির্বাচন বর্জন দলটির জন্য অনেক ঝুঁকি হয়ে যায় বলে বিবেচনা করে দেখেছেন নেতারা। দলের অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে রয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে মামলা। এই অবস্থায় নির্বাচন বর্জন করে তা ঠেকানো দলটির পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথাটি মাথায় রেখেই যতটুকু আন্দোলন করা যায়, ঠিক ততটুকুই করতে চায় দলটি। ২০ দলীয় জোটের অনেক দলও নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। তারা বিভিন্ন সভায় তাদের এমন মনোভাব জানিয়েও দিয়েছেন। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি সভাপতি বিএনপির এক সময়কার নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমও আগামী নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কর্নেল অলি তো যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির ঐক্যকে তেমন ভালো নজরে দেখছেন না। তিনি সম্প্রতি তাদের দলের এক অনুষ্ঠানে বলে দিয়েছেন যে, ‘জনভিত্তিহীন-আসনবঞ্চিত নেতা, রাজনৈতিক দালাল ও বিতর্কিত সুশীলদের তৎপরতা বাড়ছে। জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে আগালে কোনো ফলাফল আসবে না। বিএনপি একটি শক্তিশালী দল। বিএনপিকে পুনর্গঠন করে এদেশে যেকোনো কাজ করা সম্ভব। সেই বিশ্বাস নিয়ে নেতাদের মাঠে নামতে হবে।’

তবে বিএনপি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে হটাতে হলে ২০ দলীয় জোটের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে একটা ঐক্য জরুরি বলে মনে করছে। কারণ ভোটের রাজনীতিতে ২০ দলীয় জোটের বাইরের দলগুলোর তেমন প্রভাব নেই সত্য। তবু রাজনীতিতে তাদের খাটো করে দেখা সমীচীন হবে না বলে মনে করে বিএনপি। রসায়ন শাস্ত্রে বিক্রিয়া হতে ক্যাটালিস্টের অংশগ্রহণের প্রয়োজন হয় না, কিন্তু এই ক্যাটালিস্ট না থাকলে আবার বিক্রিয়াও হয় না। রাজনীতিতে বি. চৌধুরী, ড. কামালদের এই ‘ক্যাটালিস্ট’ ভাবছে বিএনপি। তাই তাদের সঙ্গে ঐক্যটা এই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছে দলটি।

বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্টের আবার ‘জামায়াত অ্যালার্জি’ রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকলে ওই জোটে যাবে না যুক্তফ্রন্ট। অন্যদিকে জামায়াতকে বাইরে রেখে জোটের পরিধি বাড়াবে না বিএনপি। আবার জোটের শর্ত হিসেবে বিএনপির কাছে ১৫০ আসন চেয়েছেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান, বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এ প্রেক্ষিতে জোট গঠনের জন্য যে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এ থেকে উত্তরণের জন্য উভয় পক্ষই ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে জোট করবে না যুক্তফ্রন্ট। তারা ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করবে। এই সমঝোতা হবে তিন স্তরের, অর্থাৎ সরকারবিরোধী আন্দোলনের, আসন সমঝোতার এবং সরকার পরিচালনার। ফলে বিএনপির সঙ্গে যেহেতু যুক্তফ্রন্ট জোট করছে না সেহেতু বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে তারা এখন খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছেন না। তারা এখন সংসদে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা তাদের রাজনৈতিক দর্শন বলে দাবি করছেন।

বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতা এবং ক্ষমতার ভারসাম্য বিষয়ে যুক্তফ্রন্টের সদস্যসচিব মাহমুদুর রহমান মান্না অবশ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য আছে। বিএনপির নির্বাচনকালীন শর্তের সঙ্গে আমরা সবাই একমত। ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করছি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য।

ক্ষমতার ভারসাম্য এবং ১৫০ আসন বিষয়ে মান্না বলেন, এই আসনকে একটি সংখ্যা দিয়ে বোঝার বিষয় নয়। মূল বিষয়টি হলো আমরা যদি একসঙ্গে আন্দোলন করি, তারপর যদি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় যায় তারা যেন নতুন করে স্বৈরাচারী আচরণ না করেন। এক্ষেত্রে একটি ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার যাতে সরকার স্বৈরাচারী আচরণ না করতে পারে।

এদিকে ড. কামাল হোসেন-বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপির যুক্ত হতে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার কোনো শর্ত নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কোনো শর্ত দেয়নি, বি. চৌধুরী সাহেব আমাদের কিছুই বলেননি। আমরা তো পত্র-পত্রিকা দেখে রাজনীতি করব না। আমরা তো বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে রাজনীতি করব। এ ধরনের কোনো কথা উনি আমাদের বলেননি।’

বাছির জামাল: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :