‘শেখ হাসিনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:২৮

বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং এদেশের গণতন্ত্র সুসংহত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে অবদান রেখেছেন তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান। সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচনের আয়োজন করতে পারলে শেখ হাসিনার ভূমিকা আরও উজ্জ্বল হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের সংবাদপত্র বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠান ‘আজকের সংবাদপত্রে’ অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করে জৈষ্ঠ সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রীর ৭২তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সিনিয়র এই সাংবাদিক বলেন, ‘এই দিনে (২৮ সেপ্টেম্বর) মধুমতির তীরে, বাইগা নদীর তীরে অজপাড়াগাঁয়ে তিনি জন্ম নেন। শ্যামল ছায়া সুনিবিড়, টুঙ্গিপাড়ায় তিনি জন্মেছিলেন এবং জন্মের পরেই তিনি দেখেছেন তার পিতা একটি জাতির মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছেন। সেই সংগ্রামে তারুণ্যে তিনিও শরিক হয়েছিলেন। উত্থান-পতন, ভাঙা-গড়া তিনি দেখেছেন। তিনি সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেননি।’

পীর হাবিব বলেন, ‘তিনি আজকে রাজনীতিতে, বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হয়েছেন এবং ইতিহাসে হয়তো তার নাম সোনার হরফে লেখা থাকবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র সংগ্রামে তার অবদান বিশাল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পরিবার পরিজন, পিতা-মাতা, ভাইবোন সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে তিনি এই দেশের জন্য এসে দলের হাল ধরেছিলেন।’

‘৩৮ বছর তিনি দাপটের সঙ্গে বাংলাদেশে রাজনীতি করেছেন। কখনও বিরোধী দলের আন্দোলন সংগ্রাম, কখনও গ্রেনেড বোমা গুলি উপেক্ষা করেছেন। আর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর তিনি দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়েছেন। আজকের এই দিনে আমরা তার শতায়ু কামনা করছি।’

নিজের সাংবাদিকতা জীবনের স্মৃতিচারণ করে পীর হাবিব বলেন, ‘কাজের ক্ষেত্রে তাকে কাছ থেকে বহুবার দেখেছি, আপনিও (সঞ্চালক) দেখেছেন। তার সাথে সারাদেশ সফর করেছি। তিনি যখন বিরোধী দলের নেতা ছিলেন, ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আন্দোলনে স্লোগান তুলেছিলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এই স্লোগান তিনি সারাদেশে ছড়িয়েছিলেন; আমরা ছিলাম তখন তার সফরসঙ্গী।’

শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘একান্নবর্তী পরিবারের বড় বোনের যে অবয়ব, তার (শেখ হাসিনা) মধ্যে সেটা রয়েছে। শাসক হিসেবে তার সমালোচনা করা যায়, রাজনীতিক নেতা হিসেবে তার সমালোচনা করা যায়, কিন্তু তার মধ্যে কিছু মানবিক গুণাবলী রয়েছে। আগুনে পুড়ে পুরান ঢাকায় মানুষ মারা যাচ্ছে, সেই মেয়েগুলোকে তার মেয়ে বলে বিয়ে দিলেন। সারাদেশের নেতাকর্মীদের অনেককেই তিনি চিকিৎসা করিয়েছেন।’

‘তার দল যখনই নির্যাতনে পড়েছে, নিপীড়নে পড়েছে, কর্মীদের পাশে তিনি থেকেছেন। বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন এবং তিনি বোঝেন যে, মানুষের বেদনার ভাষা, যন্ত্রণার ভাষা, দমন নীতির ভাষা সব বোঝেন। তিনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তার বাবা বিশ্ব বরেণ্য একজন রাজনীতিবিদ। সেই যুগের কোনো আইডল পৃথিবীতে আজকে আর নেই এবং তার এই জন্মদিনে তাকে আমরা অন্তহীন হৃদয় নিঃসৃত শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’

‘তিনি (শেখ হাসিনা) ক্রিকেটকে যেভাবে অভিষিক্ত করছেন এর নজির বিরল। ক্রিকেট মাঠে গিয়ে তিনি তালি দেন। এই জিনিসগুলো উনার অসাধারণ। তিনি যেন মাটি ও মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকতে পারেন, সাধারণের মধ্যে থেকে তিনি অসাধারণ।’

‘আশা করি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুনর্বিবেচনা করবেন’

বাংলাদেশের প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক বলেন, ‘আজকে যদি আমাকে বলা হয়, তার কাছে কী চাইতে পারি। বা আজকে যদি তিনি থাকতেন, সামনে যেতাম, তাহলে হয়তো বলতাম, আজীবন গণমাধ্যমবান্ধব হিসেবে আপনার পরিচয় ছিল, আপনি মিডিয়াবান্ধব। আপনার সঙ্গে আমরা ছিলাম, আপনার দুঃসময়ে গণমাধ্যম আপনার পাশে ছিল।’

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে যে কালো আইন জারি করে আজকে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হচ্ছে, যে মন্ত্রী এটা করেছেন, তিনিও ৫৭ ধারার সমালোচনা করেছেন মন্ত্রী হওয়ার আগে। তিনি টেকনোক্রেট কোটার মন্ত্রী হয়েছেন, জনগণের ভাষা বোঝার দরকার তার নেই।’

পীর হাবিব বলেন, ‘আজকে সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিকরা এটা নিয়ে শুধু উদ্বিগ্ন নয়, প্রতিবাদমুখর। এটা আজকে জাতীয় আন্তর্জাতিক মহলকেও উদ্বিগ্ন করেছে। আমি আশা করি তিনি দেশে ফিরে এটার বিবেচনা করবেন।’

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন ঘিরে রাজনীতি আবারও উত্তাল। রাজনীতি যাতে সহিংসতায় না গড়ায় এবং সব দলের অংশগ্রহণে যাতে নির্বাচন হয় সেটাই সবার প্রত্যাশা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসে বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবে। যাকে খুশি তাকে দেবে। এ রকম একটি নির্বাচন তার কাছ থেকে আশা করছি।’

হঠাৎ করে রাজনীতিতে উত্তাপ। একটি জনসভাকে কেন্দ্র করে বা একটি আলোচনা সভাকে কেন্দ্র করে; এই বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নে পীর হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যখন জাতীয় নির্বাচন আসে, তখনই আমাদের রাজনীতিতে উত্তাল ও টালমাটাল হয়। এবার বরং কম হচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে একটা মারমুখি অবস্থান নিয়েছিল বিএনপি। বেপরোয়া অবস্থান নিয়েছিল। বিএনপি সেই কৌশল থেকে সরে এসেছে।’

‘বিএনপি এখন একটা অন্য কৌশল নিয়েছে। লিবারেল ভূমিকা নিয়ে বামপন্থীসহ আরও অনেককে নিয়ে সরকারবিরোধী একটা বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যেটা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বা ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে গড়ে উঠছে, অধ্যাপক বি চৌধুরীকে সামনে রেখে গড়ে উঠছে।’

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এই বৃহত্তর জোটকে বিএনপি সফল করতে চায়। বিএনপি এই মুহূর্তে কোনো সংঘাতের দিকে যেতে চায় না। দলটির প্রায় প্রার্থীরা মাঠে নেমে গেছেন। তারা এইবার নির্বাচন বর্জন করবেন বলে মনে হয় না। একদম অন্তিম মুহূর্তে, যদি তারা দেখে যে, না তাদের জন্য আর নির্বাচন করার প্রয়োজন নেই, তাহলে তারা নির্বাচন রুখতে যেতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা সংলাপের কথা বলছে, এখন পর্যন্ত সরকারের প্রতি দাবি জানানো অব্যাহত রেখেছে।’

‘বিএনপি চায় আলোচনার মাধ্যমে একটি সরকার হবে। তারা বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। এই দাবিগুলো ড. কামাল হোসেনের, অধ্যাপক বি চৌধুরীর দাবি। সেখান থেকে ২৯ তারিখের সমাবেশ ঘিরে আবার একটা উত্তেজনা।’

জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, ‘সমাবেশের অধিকার যদি নির্বাচনের আগেও দেয়া না হয়, এইসময় গোটা বিশ্বের চোখ এখন আমাদের ওপর। গোটা দেশের মানুষের আকুতি এখন একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। সেইখানে যদি বিরোধী দল সভা সমাবেশের অধিকার না পায় তাহলে এটা সরকারের জন্য শুভকর হবে না।’

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/জিএম/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :