গ্লানি দূর করার কারিগরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
আমাদের সমাজব্যবস্থা এমন অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে প্রশংসা করার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে চায় না মানুষ। আর সেটা যদি হয় কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রশংসা, তাহলে লোকে প্রশংসাকারীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খোঁজা শুরু করে। কিন্তু যেকোনো ইতিবাচক কাজের প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকা এক অর্থে মানসিক দীনতা।
বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে বিশ্বসভায় এক অনন্য স্থান করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে জোয়ার তিনি তৈরি করেছেন সেটা অনস্বীকার্য। তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা, তার সেরা অর্জন বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধীদের অপাংক্তেয় করে দেওয়া। তার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছে।
জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর ধৃষ্টতাপূর্ণ কথাবার্তা আমাদের মনে থাকার কথা। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপের পর দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ দম্ভ করে বলেছিলেন- ‘বাংলাদেশে কোনো স্বাধীনতাবিরোধী নেই।’
জামায়াতের নেতারা এ রকম দম্ভোক্তি করতে পেরেছিলেন, কারণ স্বাধীনতার বিরোধী হয়েও, স্বাধীনতাকামী স্বজাতির মানুষকে হত্যা করেও, মা-বোনদের পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেওয়ার পরেও, তারা বিচারের বাইরে থেকে যায়। ১৯৭৫ সালের পর থেকে ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখি হননি তারা।
এ রকম পরিস্থিতিতে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতির কাছে ওয়াদা করেছিলেন, তিনি সরকার গঠন করতে পারলে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার করবেন।
ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা তার ওয়াদা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। অসম সাহসিকতার সাথে তিনি প্রায় সব শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করেছেন এবং প্রচলিত আইনে বিচার শেষে রায় কার্যকর করেছেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া দেশগুলোর চোখ রাঙানি, স্বাধীনতা বিরোধীদের দেশীয় উত্তরসূরি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের হুংকার উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা কোটি কোটি দেশপ্রেমিকদের চাওয়া পূরণ করেছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান হিসেবে শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কৌশল ও সাহসিকতা দিয়ে একসময়ের মহাপরাক্রমশালী জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে বর্তমানে পুরোপুরি অপাংক্তেয় করে ফেলেছেন।
এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় নতুন প্রজন্ম কিছুটা হলেও স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে পেরেছিল। এ ছাড়া শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের কারণেও জাতি জামায়াতে ইসলামীর আসল চরিত্র সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিল।
অর্থ্যাৎ এটা খুবই স্পষ্ট যে জামায়াত এখন সবার কাছে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছে। আর এটার একমাত্র কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সাহসী পদক্ষেপেই জামায়াতে ইসলামী আজ সবার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত।
প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নকে যারা নৃশংসভাবে হত্যা করতে চেয়েছিল তাদের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করার জন্য পুরো জাতি যুগের পর যুগ অপেক্ষা করেছে। সে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন শুধু একজনই- তিনি জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের পাশাপাশি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের বিচারসহ বহু গ্লানি দূর করারও একমাত্র কান্ডারি তিনি।
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন। অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সব হুমকি উপেক্ষা করে দেশের মানুষের জন্য আপনি আরও অনেক দিন বেঁচে থাকুন। দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যান। অনেক অনেক শুভ কামনা।
লেখক: সাংবাদিক