যৌন নিপীড়নের অভিযোগ থাকা শিক্ষক পুনর্বহাল
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় স্কুলছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানকে পুনর্বহাল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর সদর ইউনিয়নের বিশ্বাস বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি আবার যোগদান করেন।
এর আগে ১৫ জুলাই ২০১৮ জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া স্বাক্ষরিত এক আদেশে স্কুল পরিচালনা কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক লুৎফার একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিকে কাজে লাগিয়ে আবার পুনর্বহাল হন। প্রভাবশলী এ জনপ্রতিনিধি ডিওর মাধ্যমে স্কুল কমিটিকে ওই শিক্ষককে পুনর্বহালের নির্দেশ দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি তাকে যোগদানের অনুমতি দেয়।
ছাত্রীর পারিবারিক সূত্র জানায়, শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান বেশ কিছু দিন ধরে ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে আসছিলেন। গত ৪ জুলাই ওই শিক্ষক মেয়েটির শরীরে হাত দিয়ে তাকে যৌন নির্যাতন করেন। এ ঘটনা সহপাঠীরা জেনে যাওয়ায় সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। মেয়েটির পরিবার লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখে। পরে গত ১০ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাকের নির্দেশে ১২ জুলাই (বৃহস্পতিবার) তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সামছুল আলম তার কার্যালয়ে উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার ব্যাপারে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্কুল পরিচালনা কমিটিকে উক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা করার জন্য লিখতভাবে নির্দেশ দেন।
ওই স্কুলছাত্রীর মা জানান, শিক্ষক লুৎফর রহমান স্কুল চলাকালীন ও প্রাইভেট পড়ানোর সময় একাধিক দিন তার মেয়ের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন। ওই শিক্ষক প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছিলেন।
তিনি আরও জানান, ১২ জুলাই বৃহস্পতিবার শুনানির দিন এলাকার প্রায় অর্ধশত মাতুব্বর ও নেতাকর্মী নিয়ে ওই শিক্ষক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজিরা দিয়েছেন। অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত তার ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। এমনকি নির্যাতিত ছাত্রীর চাচা মাতুব্বর তৈয়বুর রহমান মীরকেও প্রধান শিক্ষক তার দলে নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
স্কুলছাত্রীর মা বলেন, আমরা জানতে পারি ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে আমাদের পরিবার স্বস্তিতে মেয়েকে স্কুলে পাঠাই। কিন্তু গত কয়েকদিন দিন থেকে ও শিক্ষক আবার স্কুলে যোগ দেয়ায় আমরর মেয়ের স্কুলে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমারা এখন মানসিক চাপে দিন কাটাচ্ছি। আমার মেয়ের হয়ত আর পড়া লেখা করা হবে না। সে ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। শারীরিক ও মানুসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। আগামী ডিসেম্বরে ওর জেএসসি পরীক্ষা হয়ত আর দেয়া হবে না। আর বিভিন্নভাবে আমাদের কে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমার স্বামী একজন প্রবাসী। সে আগামী ৯ অক্টবার মালয়েশিয়ায় চলে গেলে আমি একা এখানে কিভাবে বসবাস করব? তা এখন অনিশ্চিত।
এ বিষয়ে শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, স্কুলে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে কোনো ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করা সম্ভব নয়। স্থানীয় একটি চক্র ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে লেগেছে এবং তারাই ওই ছাত্রীকে উস্কানি দিয়ে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি রবি বিশ্বাস বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগেরভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা তাকে সাময়িক বরখাস্ত করি। বেসরকারি বিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের দুই মাস অতিবাহিত হলে তিনি আবার যোগদান করতে পারেন। তাছাড়া বিশেষ চাপে ওই শিক্ষককে পুনর্বহালে গত ২৪ তারিখ জরুরি সভা করে তার যোগদানের সিদ্ধান্ত নেই। সেই ভিত্তিতে ২৫ তারিখ তিনি যোগদান করেন। এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে অভিযুক্তকে তাকে পুনর্বহাল করা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের উপর প্রভাবশালীদের প্রচণ্ড চাপ ছিল। এ কারণে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ থাকা সত্বেও আমরা তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে পারিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, শিক্ষক জাতি গঠনের মুল হাতিয়ার। সেই শিক্ষকের কাছে যদি একজন শিক্ষার্থী যৌন নিপিড়নের শিকার হয়, তাহলে একজন মা কিভাবে তার সন্তান কে নিশ্চিন্তে স্কুলে পাঠাবে। আর ঐ শিক্ষক যে মেয়েটিকে যৌন হয়রানি করেছে তা প্রমাণিত। একারণেই নীতিমালা অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু কোন অদৃশ্য কারণে এমন স্পর্শকাতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি পুনর্বহাল হয় তা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি আমি অতি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি এবং ইতিমধ্যে আমি ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান কে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ চিঠি দিয়ে কথাও বলেছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন শিগগির এ ব্যাপারে বোর্ড ব্যবস্থা নেবে।
ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/এসবি/ইএস