গ্যাস পেয়েও অচল আশুগঞ্জ সার কারখানা

রাজীবুল হাসান, ভৈরব প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৫৮

গ্যাসের অভাবে দেড় বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ আশুগঞ্জ জিয়া সার কারখানায়। এখন গ্যাস সরবরাহ দিয়েও চালু করা যাচ্ছে না এটি। বন্ধ থেকে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে এর যন্ত্রপাতি। ডাক পড়েছে ইতালির বিশেষজ্ঞদের। তারা এসে ত্রুটি সারাই করলে পরে নভেম্বর-ডিসেম্বরে চালু হবে কারখানা।

উৎপাদন বন্ধ থাকায় অন্য কারখানা থেকে আনা ও আমদানি করা সার দিয়ে ডিলারদের মাসিক বরাদ্দের কিছুটা সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে বর্তমান মজুত নিয়ে সার ডিলারদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।

কারখানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে মজুত ছিল ৮ হাজার ৬৮৬ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে কারখানার কমান্ড এরিয়াভুক্ত ৫টি জেলা- কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর ও কুমিল্লার ডিলারদের জন্য বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ২৩৭ মেট্রিক টন। ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ জেলার ডিলারদের সরবরাহ করা হয় ৭ হাজার ৮০০ টন সার।

এক বছর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ সার কারখানায় মজুত ছিল ৩৪ হাজার ৭৭৪ টন। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য জেলার সার ডিলারদের কাছেও তখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ইউরিয়া সার মজুত ছিল বলে জানান বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) কর্মকর্তারা।

এর আগে ২০১৫ ও ২০১৬ সালেও বোরো মৌসুমের পর এপ্রিল মাসে কারখানাটির উৎপাদন ৮ মাস বন্ধ রেখে অক্টোবর-নভেম্বরে চালু করে সারের চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সরকার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বোরো মৌসুমে গত বছর আর গ্যাস সরবরাহ করেনি। ফলে বন্ধ কারখানার কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়।

গত ১ জুলাই সরকার জিয়া সার কারখানায় আবার গ্যাস সরবরাহ দেয়। তবে দুই সপ্তাহের মাথায় ১৪ জুলাই বন্ধ করে দেয়া হয় গ্যাস সরবরাহ। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে আবার গ্যাস সরবরাহ দিলেও কারখানার যন্ত্রপাতি ত্রুটি থাকায় মেশিন চালু করা যাচ্ছে না বলে জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ।

মেশিনের ত্রুটি সারাতে আগামী মাসে ইতালি থেকে বিশেষজ্ঞ আসছে বলে জানা যায়। এভাবে কারখানাটি চালুর ব্যবস্থা চলছে।

কারখানা সূত্র জানায়, জিয়া সার কারখানায় প্রতিদিন ১২০০ টন সার উৎপাদন হতো, যার বিক্রয় মূল্য ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। কারখানাটি ১৮ মাস বন্ধ থাকায় উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।

বর্তমানে শাহজালাল সার কারখানা থেকে প্রতিদিন সার আমদানি করে এই কারখানার ডিলারদের সরবরাহ করা হচ্ছে। যদিও কথা ছিল বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সার সরবরাহ করা হবে ডিলারদের। কিন্তু ওই সার এখনো কারখানায় পৌঁছেনি। ফলে প্রতিদিনের চাহিদার প্রয়োজনীয় সার শাহজালাল সার কারখানা থেকে সরবরাহ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কুষকরা পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত সার।

আগামী ডিসেম্বর মাসে শুরু হচ্ছে বুরো মৌসুম। মার্চ মাস পর্যন্ত ব্যাপ্ত এই মৌসুমে কৃষকদের সারের চাহিদা থাকে ব্যাপক। আশুগঞ্জ সার কারখানা শিগগির চালু না হলে এবং বিদেশি সার দ্রুত কারখানায় না পৌঁছালে আগামী মাসেই এই অঞ্চলে সারের অভাব দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ডিলাররা।

আশুগঞ্জ জিয়া সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম আকন্দ এই প্রতিনিধিকে বলেন, কারখানাটি ১৮ মাস ধরে বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতি অচল হয়ে গেছে। সরকার এখন গ্যাস সরবরাহ দিলেও কারখানার কম্প্রেসারের কারবাইনের ভেতর কয়েকটি নাট খুলতে পারছে না।

বিভিন্ন ত্রুটির বিষয়ে ইতালিতে বিশেষজ্ঞদের জানানো হয়েছে উল্লেখ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আগামী মাসে তারা আসবেন। যন্ত্রপাতি সারাই শেষে নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে কারাখানাটি সার উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

কারখানার মজুত পরিস্থিতির বিষয়ে শফিকুল আকন্দ জানান, এখন আমদানি সারের মাধ্যমে ডিলারদের চাহিদা পূরণ করতে হবে। দ্রুত সার আমদানির জন্য ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিএফএর কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিটের সভাপতি তারিক আহমেদ জানান, আশুগঞ্জ সার কারখানার মজুত পরিস্থিতি খুবই নাজুক। চলতি মাসে ডিলারদের বরাদ্দকৃত সার সময়মতো সরবরাহ দিতে পারবে কি না আমাদের সন্দেহ আছে। অবিলম্বে কারখানায় সার আমদানি না করলে আগামী মাসেই কিশোরগঞ্জ জেলায় সারের অভাব দেখা দিতে পারে।

ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/মোআ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :