কমছে যমুনার পানি, ভাঙছে হাজারও মানুষের স্বপ্ন

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:১১

ভাঙছে নদী, ভাঙছে জনপদ, ভাঙছে সিরাজগঞ্জের হাজারও মানুষের কপাল। রিক্ত, নিঃস্ব, সবশান্ত বন্যার্ত মানুষেরা এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের দুঃখের যেন কোনো শেষ নেই।

সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নদী তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।

প্রতি বছর নদী ভাঙে, সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করে, কিন্তু ভাঙন রোধ হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারী ও এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী ঠিকাদারদের অবস্থার উন্নতি হলেও নদীপাড়ের ভাঙন কবলিত মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। সমস্যা যে তিমিরে ছিল প্রতি বছর সেই তিমিরেই রয়ে যাচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

পানির উচ্চতা বিপদসীমার নিচে নেমে এলেও এলাকাবাসীর মনে নতুন করে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যমুনা নদীতে পানি কমতে শুরু করায় ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা শহররক্ষা বাঁধের দক্ষিণে গত বৃহস্পতিবার তিন ঘণ্টার ব্যবধানে ২৮টি বসত-বাড়ি যমুনা নদীতে দেবে গেছে। ইতিমধ্যে চৌহালী উপজেলার পশ্চিম জোতপাড়া এলাকাটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রায় সাড়ে ৪০০ মিটার এলাকায় দেখে দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজিপুর উপজেলার প্রায় কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

বন্যা কবলিত এলাকাবাসী জানান, বন্যায় আমাদের এলাকার মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় নতুন এলাকা ভাঙতে শুরু করেছে। পানি কমে নদীর সীমায় চলে আসায় অনেক এলাকায় ভাঙনের আকার ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। প্রতিদিন নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার বলা হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পশ্চিম জোতপাড়া এলাকাটি বিধ্বস্ত হলো। এ কারণে হুমকির মুখে পড়েছে শত কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ, কে কে পশ্চিম জোতপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জনতা উচ্চ বিদ্যালয়।

চৌহালী উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম ও কে. কে পশ্চিম জোতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম আলম জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করে চৌহালী শহররক্ষা বাঁধের দক্ষিণ থেকে জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪০০ মিটার এলাকায় শুরু হয় তীব্র নদী ভাঙন। মুহূর্তের মধ্যে পশ্চিম জোতপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম মন্ডল, আব্দুর রহমান মোল্লা, মজিবর রহমান, ঠান্ডু মন্ডল, আব্দুল কাইয়ুম, লুৎফর রহমান, আকবার আলী ও আব্দুল মতিন মন্ডল সহ ওই গ্রামের অন্তত ২৮টি বসতভিটা ও ঘরবাড়ি নদীতে দেবে যায়। এসব বাড়ি ঘরের অধিকাংশ আসবাবপত্র, চারটি ফ্রিজ ও গবাদি পশুসহ প্রয়োজনীয় মালামাল নদীগর্ভে চলে গেছে। অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে।

তবে এখনও নদীভাঙন কবলিত এলাকায় পাউবো কর্মকর্তাদের দেখা যায়নি ও ক্ষতিগ্রস্তরা পায়নি কোনো ত্রাণ সহায়তা-এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু হানিফ মোল্লা।

চৌহালী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বাবুল আক্তার বলেন, যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বালুর পয়েন্ট করার কারণে এলাকাটি নদীতে বিলীন হচ্ছে। দ্রুত ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

তাই ক্ষোভের সঙ্গে নদীভাঙন কবলিত মানুষেরা জানান, ঘর পুড়লে ভিটে মাটিটুকু থাকে কিন্তু নদী ভাঙলে কিছুই থাকে না। তারা দুঃখের সাথে আরও বলেন, প্রতি বছর মন্ত্রী-সচিবরা নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে আসেন। কত কথা বলে। অনেক আশ্বাসবাণী দেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বর্ষা মৌসুমে বরাদ্দ মিললে পেট ভরে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী আর স্বার্থবান এক শ্রেণির অতিলোভী ঠিকাদার। তাদের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটলেও সিরাজগঞ্জ যমুনা নদী ভাঙন কবলিত মানুষের দুঃখ গোছে না। তাই সিরাজঞ্জবাসীর দুঃখ এখন যমুনার ভাঙন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আনিছুর রহমানকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :