সাইবার হামলা রোধে প্রস্তুতি নেই ২৮ শতাংশ ব্যাংকের
সাইবার হামলা মোকাবিলায় দেশের ২৮ শতাংশ ব্যাংকের কোনো প্রস্তুতি নেই বলে তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সেমিনারে উপস্থাপিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে।
আজ রবিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে‘আইটি সিকিউরিটি অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ: থ্রেটস অ্যান্ড প্রিপিয়ার্ডনেস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, বড় সাইবার হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেই ২৮ শতাংশ ব্যাংকের। আর আংশিক প্রস্তুতি আছে ৩৪ শতাংশ ব্যাংকের। তবে যেকোনো ধরনের সাইবার অ্যাটাক মোকাবেলায় প্রস্তুত ৩৮ শতাংশ ব্যাংক।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলম।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকে জালিয়াতির বেশির ভাগ ঘটছে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে। গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের ৫০টি জালিয়াতির ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়।
তাতে দেখা গেছে, প্রায় ৪৩ শতাংশ এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে ঘটেছে। এর পরেই রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। প্রায় ২৫ শতাংশ ঘটনা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘটেছে। প্রায় ১৫ শতাংশ এসিপিএস ও ইএফটির মাধ্যমে জালিয়াতি ঘটছে ব্যাংকিং খাতে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১২ শতাংশ, ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারে ৩ শতাংশ, সুইফট এবং অন্যান্য মাধ্যম দিয়ে ঘটছে ২ শতাংশ।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মো. আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। তার মতে, ব্যাংকিং খাতের ওপর যেসব আক্রমণ হচ্ছে তা জটিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে আলাদা গাইড লাইন তৈরি করে দিয়েছে। এগুলো সঠিকভাবে পালন করলে ঝুঁকি কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, আইটি খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকারদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। কারণ এই খাতটি অর্থনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
হ্যাকিং মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোর পর্যাপ্ত প্রস্তুতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাহবুব-উল- আলম বলেন, ‘ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে আইটি জ্ঞান স্পষ্ট থাকা জরুরি।’
কমার্সিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসির কান্ট্রি ম্যানেজার ভরুনা প্রিয়াশান্ত কলামুনা বলেন, ‘হ্যাকাররা সব সময় সাইবার হামলার জন্য প্রস্তুত। ব্যাংকিং খাত এ ঝুঁকির বাইরে নেই। ব্যাংকের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে নিজেদেরই উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখনো আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের নজরে আসেনি বলে মনে করেন মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল্লাহ আজম। তিনি বলেন, তবে অর্থনীতি বড় হলে হ্যাকিং বেড়ে যাবে। এ জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল ব্যাংক খাতে কর্মী নিয়োগের সময় আইটিতে জ্ঞান আছে কি না তা যাচাইয়ের তাগিদ দেন। কেননা এখন ব্যাংক কর্মীদের আইটি খাতে গভীর জ্ঞান না থকলে কার্যক্রম পরিচালনা সমস্যা সৃষ্টি হয়।
আইটি খাতে ব্যাংকগুলো বাজেট বাড়াতে আগ্রহ দেখায় না বলে মন্তব্য করেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী । ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে বুঝিয়ে আইটি খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। এতে ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদার হবে।
ব্যাংকের সফটওয়ার কেনার ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি। তিনি বলেন, কিছু কিছু ব্যাংক ভেন্ডর থেকে সফটওয়্যার নিচ্ছে। এসব ব্যাংকের হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বেড়েছে। এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংকিং খাত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল রায় বলেন, আইটি প্রডাক্ট কেনার আগে তার কোয়ালিটি ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। অহেতুক বড় বাজেট করে আইটি প্রডাক্ট কেনার কোনো মানে নেই।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন এবং পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি।
গবেষণা দলে আরও ছিলেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিহাব উদ্দিন খান, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক কানিজ রাব্বী, বিআইবিএমের প্রভাষক মো. ফয়সাল হাসান, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব টেকনোলজি শ্যামল বি দাশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবিএল) ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এফভিপি) মো, সাইফুল ইসলাম।
(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/জেআর/মোআ)