১৩ বছর পর বাবা-মেয়ের মিলন করালেন চাঁদপুরের এসপি

শওকত আলী, চাঁদপুর প্রতিনিধি
| আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০২ | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২৩:৫০

১৩ বছর আগে প্রতিবেশি ধনাঢ্য স্বজনের বাড়িতে কাজ করতে গিয়েছিল নয় বছরের নার্গিস আক্তার মনি (২২)। নির্যাতনের মুখে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ায় এরপর আর মনির খোঁজ পাননি বাবা আব্দুস সাত্তার। অবশেষে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. জিহাদুল কবিরের প্রচেষ্টায় ১৩ বছর পর মেয়েকে ফিরে পেলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে মনিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আব্দুস সাত্তারের কাছে হস্তান্তর করেন পুলিশ সুপার মো. জিহাদুল কবির। এ সময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

আব্দুস সাত্তার চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা। বর্তমানে সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে চরে বসবাস করেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নার্গিস আক্তার হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা আব্দুস সাত্তার একজন কৃষক। সংসারে অভাব-অনটন থাকায় সন্তানদের ভালোভাবে ভাত-কাপড় দিতে পারতেন না। তাই প্রতিবেশী স্বজনের দারস্থ হন আব্দুস সাত্তার। তারা ধনাঢ্য। সারাবছর ঢাকাতেই থাকেন। তাদের বাসায় গেলে খাওয়া-পড়ার অভাব হবে না। ধনাঢ্য এ পরিবারও আশ্বাস দিলো, বাসাই তেমন কাজ নেই, খাবে, টিভি দেখবে আর মাঝে মাঝে গৃহকর্ত্রীকে সাহায্য করবে। বিনিময়ে মাস গেলে ভালো বেতন পাবে। এ চিন্তা থেকে আ. সাত্তার তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে মনিকে ঢাকায় পাঠান। মা বলেছিল সামনের মাসেই দেখা হবে আবার। ঢাকার বাসায় আনার পর তার ওপর শুরু হয় অকথ্য নির্যাতন। সইতে না পেরে মাসখানেক পরেই মনি রাতের আঁধারে পালিয়ে চলে যায় সদরঘাট। ৮/৯ বছরের বাচ্চাকে একা একা ঘুরতে দেখে এগিয়ে আসে এক লোক। তিনি মনিকে নিয়ে যান উত্তরায় তার চাচীর বাসায়। একমাস পরেই ঢাকা থেকে তাকে বাগেরহাটে পাঠিয়ে দেন তার মেয়ের কাছে। মনি ৮ বছর কাজ করে ওই বাসাতে। সেখানেও তার ওপর চলে নির্যাতন। আবার পালায় মনি। কিন্তু কোথায় যাবে, কী করবে বুঝতে পারে না। অসহায়ের মতো ঘুরতে থাকে পথে পথে। এবার আশ্রয় হয় এক কমিশনারের বাড়িতে। কিছুদিন পরেই কমিশনার মনিকে পাঠায় তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট হলেও বর্তমানে ঢাকায় স্থায়ীভাবে থাকবে তারা। বাড়ির কর্ত্রী অমায়িক মানুষ। মাঝে মাঝেই গল্প করেন মনির সাথে। সদা উচ্ছ্বল মেয়েটা মাঝে মাঝেই উদাস হয়ে যায়। একদিন কথাচ্ছলে মনি জানায় তার করুণ ইতিহাস। শুনে খুব মায়া হয় গৃহকর্ত্রীর। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। কেননা মনির ছোটবেলার কথা কিছুই মনে ছিলো না। শুধু বলতে পারে চাঁদপুরের দিকে কোথাও হরিণহাটা জাতীয় নামের একটা গ্রামে ছিলো তাদের বাড়ি। বাবার নাম সাত্তার। এটুকু সম্বল নিয়ে কারও এক যুগ আগের ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না।

এদিকে ওই গৃহকর্ত্রী হচ্ছেন চাঁদপুরের বর্তমান পুলিশ সুপারের বন্ধু। হঠাৎ একদিন গৃহকর্ত্রীর আলাপ হয় চাঁদপুরের পুলিশ সুপারের সাথে। কথা প্রসঙ্গে মনির কথা উঠে আসে। ঘটনাটা দুঃখ প্রকাশ আর সান্ত¡নার মধ্য দিয়েই শেষ হতে পারতো। কিন্তু পুলিশ সুপার বাসায় এসে ঘুমোতে পারেননি। যতোবার তাঁর আদরের মেয়ে তাঁকে বাবা বলে ডেকেছে, ততোবারই তাঁর মনে হয়েছে কেউ হয়তো প্রতীক্ষা করছে মনির বাবা ডাক শোনার জন্যে। তাই স্থির করলেন মনিকে খুঁজবেন। তিনি চাঁদপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব মোল্লাকে মনির ঠিকানার সন্ধানের দায়িত্ব দেন। সন্ধান মেলে হরিণাঘাটের। তারপর ওই এলাকার সাবেক মেম্বার হাসানের সহায়তায় সন্ধান মেলে ১২ জন সাত্তারের। তবে দুঃখের বিষয় মনির বাবা সাত্তারের সন্ধান কেউ দিতে পারে না। হাল ছাড়েন না পুলিশ সুপার। গত ১০/১২ বছরে কোনো কোন্ সাত্তার মারা গেছেন, কারা গ্রাম ছেড়েছেন তাদের খোঁজ নেয়া চলে।

অবশেষে জানা যায়, মূল গ্রাম থেকে বসতি ছেড়ে চর এলাকায় বসতি করেছে এক সাত্তার। চলতি মাসের ২৬ তারিখ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আনা হয় সেই সাত্তারকে। কথা শুনে কিছুটা মিল পাওয়া যায়। এরপর একটা ভিডিওকল। এক প্রান্তে পুলিশ সুপার অন্য প্রান্তে মনি। কথার এক পর্যায়ে ফোনের ক্যামেরা তাক করা হয় সাত্তারের দিকে। এরপর স্তব্ধ সবাই। ১৩ বছর পর আদরের সন্তানের মুখটা দেখে আর সইতে পারলেন না সাত্তার। ‘মা রে’ বলে সেন্স হারিয়ে ফেললেন। চাঁদপুর পুলিশ সুপারের রুমে তখন বইছে আনন্দের বন্যা। কারও কারও চোখের ধার বেয়ে গড়িয়ে পড়তে দেখা গেল আনন্দাশ্রু।

পরে বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঢাকা থেকে আনা হয়েছে মনিকে। ফিরিয়ে দেয়া হয় তার বাবা, ফিরিয়ে দেয়া হয় তার আপন ঠিকানা। পরে পুলিশ সুপার নার্গিস আক্তার মনি ও তার বাবা, ভাই-বোনকে মিষ্টি মুখ করান।

এ সময় পুলিশ সুপার বলেন, মনিদের বাড়ি ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের নরহর্দী গ্রামে। নদীভাঙ্গার কারণে সাত্তার পরিবার মেঘনা নদীর পশ্চিমপাড়ে চলে যায়। পুলিশ সুপার বলেন, নার্গিস আক্তার মনিকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। আশা করবো, কোনো বাবা-মার সন্তান এভাবে যেনো হারিয়ে না যায়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহেদ পারভেজ চৌধুরী, চাঁদপুর মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত মাহবুবুর রহমান মোল্লা, ইন্সপেক্টর ও সিপিআই হারুনুর রশিদ, ইউপি সদস্য হাছানসহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।

মনির ঘটনাটি পুলিশ সুপার চাঁদপুর এর ফেসবুক পেজেও দেয়া হয়।

ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/এসএ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :