ডেঙ্গু: অসচেতনতায় মরছে মানুষ

রেজা করিম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৪০ | প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:১৯

রাজধানীতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সামনে বৃষ্টি হলে রোগটির প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডেঙ্গুর এই প্রকোপের জন্য জনসচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরবাসীর সচেতনতা ছাড়া এই প্রকোপ রোধ করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তারা।

নগর সেবার দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু নিয়ে পড়েছে মহাবিপাকে। প্রাণঘাতী রোগটির বাহক মশার বিরুদ্ধে কিছুতেই পেরে উঠছে না তারা। মশক নিধনে যেমন সফলতা আসছে না, তেমনি সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে খুব একটা সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন সংস্থার দায়িত্বশীলরা।

পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সফলতা দেখিয়ে রাজধানীর দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো যখন দেশে বিদেশে সুনাম কুড়াচ্ছে, ঠিক তখনই এই অর্জনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছে সামান্য মশা। এডিশ মশাবাহিত ‘ডেঙ্গু’নামক প্রাণঘাতী রোগটি বর্তমানে রাজধানীতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীতে এ রোগে প্রাণহানির সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ডেঙ্গুতে প্রায় ছয় হাজার জন আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের, যা এ পর্যন্ত রোগটিতে প্রাণহানির সংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

গেল মাসের শেষ নাগাদ ডেঙ্গু জ্বরের কাছে হার মেনে রাজধানীর একটি হাসপাতালে সৈমী নামের তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। শিশু সৈমীর মৃত্যু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে বেশ নাড়া দেয়।

এর আগে ২০১৪ সালে রাজধানীতে ডেঙ্গুতে ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। বিগত ১৫ বছরে সেটাই রোগটিতে বড় প্রাণহানির ঘটনা।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তবে আশাব্যঞ্জক ফল আসছে না। এ নিয়ে বিশাল এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সংস্থা দুটি।

সিটি করপোরেশনের কর্তা ব্যক্তিরা বলছেন, চলতি বছরে রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া গেল বছরের মতো ভয়াবহ রূপ ধারণ না করলেও ডেঙ্গু মারাত্মকভাবে ভোগাচ্ছে নগরবাসীকে।

তাদের দাবি, শুধু মশক নিধন কর্মীদের তৎপরতা দিয়ে এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। কারণ এডিস মশা ময়লা আবর্জনায় নয়, বাসাবাড়ির স্বচ্ছ জমে থাকা পানিতে জন্মায়। নিধনকর্মীদের পক্ষে সব বাসা বাড়িতে গিয়ে মশক নিধন করা সম্ভব নয়। তবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংসের কাজটিও এবার করা হয়েছে। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা চলছে। এরপরেও আশানুরূপ ফল আসছে না।

এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের পাশাপাশি রাজধানীতে জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান। তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, নিয়মিতভাবে মশক নিধন কাজ চলছে। পাশাপাশি জলাশয়, পুকুর, খালসহ মশকের বিভিন্ন আবাসস্থল পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে ডিএনসিসি।

এই কর্মকর্তা জানান, সোমবার মিরপুরের রূপনগর ও গুলশানের বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। তবে জনসচেতনতা ছাড়া শুধু মশক নিধন করে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএনসিসির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ডেঙ্গু বিষয়ক জনসচেতনতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। এ কাজের সঙ্গে এলাকাবাসী ও মসজিদের ইমামদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রচার চালানো হচ্ছে। এছাড়াও ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে গানে গানে লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে নগরীতে পাঁচ দিনব্যাপী ‘রোড শো’ কর্মসূচিও চালু হয়েছে। রবিবার সকালে কারওয়ানবাজার থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়।

চলমান এ কর্মসূচির আওতায় রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বাউল শিল্পীরা গান গেয়ে নগরবাসীর কাছে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। তবে সচেতনতার এসব কর্মকাণ্ড জনমনে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে জানা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দীন জানান, মশক নিধনে চলতি বছরে তিন দফায় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালিয়েছে ডিএসসিসি। এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই মশক নিধনকর্মীরা মশা মারার ওষুধ ছিটাচ্ছেন। অন্যদিকে মেয়রের নেতৃত্বে রাজধানীজুড়ে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এক কথায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিএসসিসি আন্তরিকভাবে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের লোকজন গিয়ে কারো বাড়িঘর পরিষ্কার করে দিয়ে আসার কথা না। তবে যা কোনোদিন হয়নি, এবার তা করেছে ডিএসসিসি। ইতোমধ্যে ৫০ হাজারের মতো বাড়িতে গিয়ে মশক নিধনকর্মূীরা এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করে দিয়ে এসেছে। সমস্যাটা্ হচ্ছে এ কাজের পরে বাড়ির লোকজন পরবর্তী সময়ে আর দেখভাল করছে না ঠিকমত। পরিষ্কার করার ১০ দিন পরে যে আবার এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে, সেটা অনেকেই বুঝছেন না। এর ফলে ফলাফল ভালো আসছে না।এ অবস্থায় রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বেশ খানিকটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ডেঙ্গুতে প্রতিরোধে জনসচেতনতার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন চিকিৎসকরাও। তারা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে মশারির মধ্যে রাখতে হবে। এজন্য যে মশা ওই রোগীকে কামড়াবে সেটি আবার অন্যজনকে কামড় দিলে তারও ৯০ শতাংশ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই এ ব্যা্পারে বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এরকম আরও অনেকভাবে সচেতন হওয়া সম্ভব। সবাই যে যার অবস্থান থেকে সচেতন হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো সম্ভব।

(ঢাকাটাইমস/০২অক্টোবর/আরকে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

করোনায় ধূমপায়ীদের মৃত্যু হার ৩ গুণ বেশি: গবেষণা

বিদায়ী উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রশ্নে যা বললেন ডা. দীন মোহাম্মদ

বিএসএমএমইউতে নতুন উপাচার্যকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি  

অ্যানেস্থেসিয়ায় হ্যালোথেন ব্যবহার বন্ধ করতে বললো স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, কেন এ নির্দেশ?

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় বাদাম!

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে জানুন সংক্রামক এ রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত

মৃগী রোগ সম্পর্কে কতটা জানেন? এর লক্ষণ আর চিকিৎসাই বা কী?

এক যুগ আগেই জানা যাবে আপনি মূত্রাশয়ের ক্যানসারে আক্রান্ত কি না

কীভাবে চিনবেন প্রাণঘাতী অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার? বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :