সিনহার ব্যাংক হিসাবে চার কোটি টাকা লেনদেনে অনিয়ম: দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ২০:২৩ | প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৪১

ফারমার্স ব্যাংকের দুটি হিসাব থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) ব্যক্তিগত হিসাবে চার কোটি টাকা অবৈধভাবে পাঠানোর প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান শেষ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। আর বৃহস্পতিবার দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানান, তারা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকের দুটি একাউন্ট থেকে চার কোটি টাকা ঋণের ব্যাপারে আমরা তদন্ত করেছি। তদন্ত শেষ হয়ে গেছে। এ ঘটনায় অনেকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ঋণ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। জালিয়াতির ঘটনা বিচার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের পর বিতর্কের মুখে ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর এক মাসের ছুটি নিয়ে বিদেশ যান সিনহা। বলে যান, তিনি দেশে ফিরবেনই। তবে ১১ নভেম্বর সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন তিনি।

সিনহা দেশ ছাড়ার পরদিন সুপ্রিমকোর্ট থেকে এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা জানানো হয়। বলা হয়, এসব অভিযোগের কারণে আপিল বিভাগের অন্য বিচারকরা আর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে মামলা নিষ্পত্তিতে রাজি নন।

ওই বছরের ১৩ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করা হবে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তখন বলেন, ‘সিনহার বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তার অনুসন্ধান হবে এবং তা দুদকের মাধ্যমে করা হবে। ...যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই এন্টি করাপশন কমিশনের আওতায়। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন কে এটার অনুসন্ধান করবে, কে এটা তদন্ত করবে।’

গত ৬ মে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান ও নিরঞ্জন সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। পরে জানা যায় এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন সিনহা।

সাবেক প্রধান বিচারপতি জড়িত কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকুক আর যেই থাকুক, যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বা যাবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তবে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নাম বলতে রাজি হননি দুদক প্রধান। বলেন, ‘দুটি একাউন্ট থেকে ঋণ প্রক্রিয়া এবং এই টাকা মানি লন্ডারিং বা বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, নগদ উত্তোলন এসব বিষয়ে অনেক কিছু বেরিয়ে এসেছে।’

দুদকের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘যা হয়, তাই হবে। যদি অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আইন অনুযায়ী মামলা করা হবে।’

দুদক সূত্রে জানা যায়, ফারমার্স ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ী নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা এবং মোহাম্মদ শাহজাহান ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে একই দিনে ২ কোটি করে ৪ কোটি টাকা তোলেন। ওইদিনই তারা টাকাগুলো পে-অর্ডারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা) অ্যাকাউন্টে জমা দেন। এরপর সেই অ্যাকাউন্ট থেকে একই দিন টাকাগুলো তুলে আত্মসাৎ করা হয়।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। দুদকের পক্ষ থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ওই ব্যক্তির নাম উল্লেখ না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে এস কে সিনহাকে বোঝানো হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের সূত্রে প্রথম থেকে বলে আসা হচ্ছে। এই অভিযোগের অনুসন্ধানে গত ৬ মে মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা নামে কথিত দুই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই দুজনের আইনজীবী বিচারপতি সিনহার সঙ্গে লেনদেনের কথাই বলেন। আইনজীবীরা জানান, উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের পাঁচ কাঠা জমির উপর ৫১ নম্বরের ছয়তলা বাড়িটির মালিক সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা। তিনি ছয় কোটি টাকায় বাড়িটি বিক্রি করেন টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রনজিত চন্দ্র সাহার স্ত্রী শান্ত্রী রায়ের কাছে।

তারা জানান, ২০১৬ সালের মে মাসের দিকে বায়না দলিলের মাধ্যমে বিচারপতি এস কে সিনহার কাছ থেকে বাড়িটি শান্ত্রী রায় মালিক হন। তখনই বাড়ি বাবদ দুই কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর একই বছরের ৮ নভেম্বর দুইটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় বিচারপতি এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে চার কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়। পরে ২৪ নভেম্বর এস কে সিনহা হস্তান্তর দলিলের মাধ্যমে শান্ত্রী রায়কে বাড়িটি লিখে দেন।

দুই ব্যবসায়ী আরও জানান, নিরঞ্জন ও শাহজাহান ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নেন। এতে থার্ড পার্টি হিসেবে শান্ত্রী রায়ের বিভিন্ন জমি মর্টগেজ হিসাবে ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। এই ঋণ থেকেই বাড়ির চার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়।

রনজিত চন্দ্রের চাচা নিরঞ্জন সাহা আর শাহজাহান হচ্ছে রনজিতের বন্ধু। তাদের সবার বাড়ি টাঙ্গাইল।

এ ঘটনায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীমসহ ছয় জনকে সাড়ে ছয় ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। অন্যরা হলেন- বেসরকারি ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজী সালাউদ্দিন, সাবেক ক্রেডিট অফিসার ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ ও নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা সুলতানা। জিজ্ঞাসাবাদ করা ৬ জন ছাড়াও ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এসভিপি জিয়া উদ্দিন আহমেদকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের ইমিগ্রেশন অফিসকে চিঠি দেয় দুদক।

ঢাকাটাইমস/০৪অক্টোবর/আরকে/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

সোনালী লাইফের বহিষ্কৃত সিইও মীর রাশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৪৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

চাকরির পরীক্ষার আগেই মিলত উত্তর, চুক্তি ১২-১৪ লাখ টাকায়: ডিবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার, বিপুল কনটেন্ট জব্দ

এফডিসিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা: ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি

স্ত্রীসহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ডিবিতে যা বলেছেন কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান

শেরপুরের ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার

খেলনার প্যাকেটে আমেরিকা থেকে এসেছে কোটি টাকার গাঁজার চকলেট-কেক

সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :