‘প্রশান্তির’ শরবত অশান্তিরও কারণ

কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ১০:০৯ | প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২৭

গরমের প্রশান্তি কোমল পানীয়। তীব্র দাবদাহে সাময়িক প্রশান্তি পেতে রাজধানীর পথচারীদের পছন্দ ফুটপাত ও রাস্তার পাশে বানানো বিভিন্ন শরবত ও আখের রস। কারও কারও ভরসা ‘ঔষধি শরবত’। গরম থেকে সাময়িক প্রশান্তি মিললেও এটি স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অশান্তির কারণ হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ অসুস্থ হয় রাস্তার পাশের খোলা শরবত ও পানীয় পান করে। এসব পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এটা জানা আছে অধিকাংশ নগরবাসীর। কিন্তু চলতি পথে তৃষ্ণা মেটাতে বিকল্প না থাকায় একরকম বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নেন পথচারীরা। অস্বাস্থ্যকর এই পানীয় পানকারীদের দলে আছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আছে পেশাজীবী ও শ্রমজীবীরাও।

রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে কোমল পানীয়ের বেচাবিক্রি রমরমা। তবে গরমের তীব্রতা বাড়া-কমার সঙ্গে ওঠা-নামা করে ক্রেতা ও চাহিদা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ মোড়ে সিভিটা নামে লেবুর শরবত বিক্রি করেন আব্দুল মজিদ। লেবুর সঙ্গে পানি, চিনি, একটি প্রতিষ্ঠানের পাউডার ড্রিঙ্ক মিশিয়ে বানানো হয় শরবত। ক্রেতা সমাগম বাড়ে, যখন পানিতে বরফের পরিমাণ থাকে বেশি।

৩৫ বছর ধরে এই ব্যবসা করছেন আব্দুল মজিদ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘গরম হইলে কাস্টমার বেশি, গরম কম থাকলে কম।’

তার বিক্রি করা পানীয়তে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু মেশানো হয় না বলে দাবি মজিদের। এলাকার একটি বরফকল থেকে ৬০ টাকা দরে বরফের চাঁই কিনে আনেন। সেই বরফ দেয়া হয় শরবতে।

মজিদ যে কারখানা থেকে বরফ কিনে আনেন, সেখানে গিয়ে জানা গেল, ৬০ টাকায় যে বরফের চাঁই বিক্রি হয় তা মূলত বানানো হয় মাছ সংরক্ষণের জন্য। মাছের ব্যবসায়ীরা এর বড় ক্রেতা।

বরফকলটির মালিক মাসুমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাওয়ার উপযোগী বরফ তার কারখানায় তৈরি হয় না। ক্ষেত্রবিশেষে অনুষ্ঠানাদির জন্য কেউ চাহিদা জানালে খাওয়ার বরফ তৈরি করা হয়। তার দামও হয় বেশি।

মাসুম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের এখানে যেটার চাহিদা আছে আমরা সেটাই তৈরি করি। আমাদের এখানে আপনি যেটা বললেন ৬০ টাকা দামের বরফ, ওটা আমরা মাছ তাজা রাখার জন্য বানাই। সরাসরি ওয়াসার পানি দিয়ে বানানো হয়। এখন আপনি যদি মাছের বরফ নিয়ে কাউকে খাওয়ান, সেই দোষ তো আমাদের না।’

এই ৬০ টাকা দামের বরফ দিয়ে আখের রস বিক্রি করেন মোহাম্মদিয়া হাউজিং এলাকার বাসিন্দা রহিম। ১০ টাকা গ্লাস হিসেবে যে আখের রস বিক্রি করেন তিনি, তার অর্ধেকই বরফগলা পানি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রহিমের এক প্রতিবেশী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সকাল থেকে এরা ঘরজুড়ে ময়লার মধ্যে বসে গেন্ডারি ছিলায়। পরে তা মেশিনে চিপে শরবত বানিয়ে বেচে। আমরা যারা জানি, তারা কেউ ওই শরবত খাই না।’

রাজধানীর ফার্মগেট, শ্যামলী, মিরপুর-১ নম্বর, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, মহাখালীসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত বিক্রি হয় লেবুর শরবত। গ্লাস প্রতি দাম ৫-১০ টাকা।

স্বাদ বাড়াতে এই লেবুর শরবতে মেশানো হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি বিটলবণ। রাস্তার ধুলাবালি তো মিশছেই। আর আছে অস্বাস্থ্যকর বরফ।

ধুলোবালিময় সড়কের পাশে এসব পানীয় যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা বরাবরই বলে আসছেন স্বাস্থ্যবিদরা। পুষ্টিবিজ্ঞানী ড. খুরশিদ জাহান মনে করেন, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও নোংরা হাতে তৈরি এসব পানীয় দীর্ঘদিন ধরে পান করলে পানীবাহিত নানা রোগের পাশাপাশি ক্যান্সারও হতে পারে।

যে গ্লাসগুলোতে শরবত বা এ ধরনের পানীয় পরিবেশন করা হয়, ব্যবহারের পর সেগুলো ধোয়া হয় অপরিষ্কার পানিতে। বালতিতে থাকা বহুব্যবহৃত পানিতে গ্লাসটি চুবিয়ে তাতে আবার পরিবেশন করা হয় শরবত। এর ফলে পানিবাহিত ও সংক্রামক নানা রোগ এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক এই পরিচালক।

রাজধানীর পথচারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর জন্য ফুটপাতের এসব শরবতের দোকানের দিকে কড়া নজর দিতে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের প্রতি তাগিদ দেন ড. খুরশিদ জাহান। পথচারীদের তৃষ্ণা নিবারণের কথা চিন্তা করে তিনি বলেন, ‘স্ট্রিট ফুড-এর ক্ষেত্রে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে বিক্রেতারা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য কিংবা, পানীয় পরিবেশনে যেমন সতর্ক হবে, তেমনি এ ধরনের অপরাধের জন্য তাদের শাস্তির ব্যবস্থাও নিশ্চিত হবে।’

অনেকের ভরসা ভেষজ শরবত

গরমে প্রশান্তির জন্য আখ কিংবা লেবুর শরবত অনেকের প্রিয় হলেও কেউ কেউ আবার সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পান করেন ভেষজ শররত। রাজধানীর বিভিন্ন হাটবাজার, স্টেশন, পাড়ামহল্লার মোড়ে এ ধরনের শরবতের দোকান বেশি দেখা যায়। কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর, মিরপুর বেড়িবাঁধ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, লালবাগ, সদরঘাট এলাকায় বেশ বিক্রি হয় এসব শরবত। আমলকী, হরিতকী, বহেরা, অর্জুনের ছাল চূর্ণ, এলোভেরাসহ অর্ধশতাধিক ঔষধি গাছের অংশবিশেষ দিয়ে তৈরি এই শরবতের দাম প্রতি গ্লাস ১০-৩০ টাকা।

মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান মোড়ে রয়েছে ভেষজ শরবতের দুটি দোকান। মাইকে শরবতের গুণাগুণের বিস্তারিত তুলে ধরে ক্রেতা আকর্ষণ করা হয় নিত্য। দোকানি এক কিশোর। তার কাছে শরবতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তার জবাব, ‘আমি জানি না। মাইকে হুনেন। আমি খালি শরবত বানাই।’

রাজধানীর বিভিন্ন ফলের আড়তে প্রতিদিন যে ফল আসে এবং বিক্রি হয়, তার একটি অংশ পচে যায় এবং চাপে ফেটে যায়। বিক্রির অযোগ্য এই ফলও নামমাত্র দরে বিক্রি হয়। ঢাকাটাইমসকে এমন তথ্য জানিয়েছেন রাজধানীর সোয়ারীঘাট এলাকার ফল বিক্রেতা মমিন। বলেন, ‘চাপ লাগা ফল তো দোকানদাররা কেনে না। এইডি বেচার আলাদা লোক আছে। ওরা অল্প দামে কিনে নিয়ে যায়। শুনছি ওরা এগুলো দিয়ে শরবত বানিয়ে বেচে।’

রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আনার, আপেল, মাল্টা, আঙুর, ডালিমসহ নানা ফলের টুকরা চিনির পানিতে মিশিয়ে এক ধরনের শরবত বিক্রি হতে দেখা যায়। একটা কাচের বাক্সে থাকে এই শরবত। তাতে ভেসে থাকে নানা ফলের টুকরা আর বরফ। হাতে বানানো এই শরবতও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে জানান পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা।

তবে, অর্ধপচা ফল কিনে এনে তা দিয়ে দিয়ে শরবত বানানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন বিক্রেতারা।

(ঢাকাটাইমস/৫ অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

​​​​​​​যাত্রীদের নিরাপত্তায় কমলাপুর স্টেশনে র‍্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ

ছুটির দিনে রাজধানীর বিপণি কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়

বিজিবিতে আযান ও ক্বেরাত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের বিচার

এক হাতে ইফতারের পানির বোতল, আরেক হাতে যান চলাচলের ইশারা ডিসির

এলিফ্যান্ট রোডে বাসা থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ঢাকাস্থ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কল্যাণ সমিতির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

অসুস্থতার যন্ত্রণা সইতে না পেরে ছুরিকাঘাতে রিকশাচালকের আত্মহত্যা

রাজধানীর ধোলাইপাড়ে পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রীর ‘আত্মহত্যা’

বুধবার থেকে এক ঘণ্টা বাড়ছে মেট্রোরেল চলাচলের সময়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :