রাশিয়া-চীন সামরিক সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথা

সৈয়দ রশিদ আলম
| আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৪৯ | প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৩৯

মধ্যপ্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব খর্ব করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে কখনো চীন কখনো রাশিয়া চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু দেশ দুটি অনৈক্যের কারণে প্রায়ই তা সফল হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় চীন ও রাশিয়ার বৈরিতাকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ একটাই এই দুটি দেশের সুসম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপজ্জনক এটি বারবার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু চীন ও রাশিয়া কখনই যুক্তরাষ্ট্রকে বন্ধু হিসেবে পায়নি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে নিজের বাজারজাতকরণ। এক্ষেত্রে যাকে বাধা মনে করে তাকে মাইনাস করে যুক্তরাষ্ট্র কখনো দ্বিধাবোধ করে না। দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চীনের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও সামরিক সহায়তা যুক্তরাষ্ট্র মানতে পারেনি। একইভাবে সিরিয়ায় রাশিয়ার উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গলার কাঁটা হিসেবে ধরা দিয়েছে। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব বিশ্বব্যাপী কমে যাচ্ছে। কোনো দেশেই এখন আর যুক্তরাষ্ট্রকে আগের মতো বিশ্বাস করে না। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলো বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া তাদের বন্ধন মজবুত করছে। অতীতে সব বৈরিতা ভুলে যাচ্ছে, যার কারণে দেশ দুটি লাভবান হচ্ছে।

তারই ফলে সম্প্রতি রাশিয়া ও চীন প্রথমবারের মতো একটি সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে। এই সামরিক মহড়ায় প্রথমবারের মতো চীনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যার ফলে দেশ দুটির মধ্যে সামরিক বন্ধন আরও মজবুত হয়েছে। সামরিক মহড়ায় ২৫ হাজার সেনা সদস্য ৭ হাজার সাঁজোয়া যান ও ২৫০টি জঙ্গি বিমান ও বিভিন্ন শ্রেণির হেলিকপ্টার অংশগ্রহণ করে। রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মিগ ৩৫, এসইউ-৩০, এসইউ-৩৫ জঙ্গি বিমান, এমআই-২৬, ট্যাংকবিধ্বংসী হেলিকপ্টার অংশগ্রহণ করে।

জঙ্গি বিমান ও জঙ্গি হেলিকপ্টার থেকে কাল্পনিক শত্রুর লক্ষ্যবস্তুকে ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল, ট্যাংকবিধ্বংসী মিসাইল, বিমানবিধ্বংসী মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়া সমুদ্র পথে রাশিয়া ও চীনের যুদ্ধ জাহাজ অংশগ্রহণ করে। রাশিয়ার ও চীনের মিসাইল ফ্রিগেট, মিসাইল ডেসট্রয়ার, মিসাইল, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন, দূরপাল্লার পারমাণবিক বোমা সজ্জিত মিসাইল সাবমেরিন, হান্টার কিলার সাবমেরিন, হেলিকপ্টারবাহী জাহাজ অংশগ্রহণ করে। এই মহড়ার ফলে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো হামলা প্রতিরোধ করতে রাশিয়া ও চীন সক্ষম। সেটা তারা প্রমাণও করেছে।

রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ওয়ারসাও জোটকে যুক্তরাষ্ট্র ভেঙে দিয়ে রাশিয়াকে যতটা দুর্বল করতে চেয়েছিল ভøাদিমির পুতিন দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। তিনি রাশিয়াকে একটি শক্তিশালী সামরিক ও প্রযুক্তির দেশে পরিণত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এর ফলে মস্কো বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব বিস্তার করতে পারছে। একাধিক দেশে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করছে।

যে দেশগুলোতে এক সময় যুক্তরাষ্ট্রই শুধু সমরাস্ত্র বিক্রি করত সেই জায়গায় এখন চীন এশিয়ার ও আফ্রিকার একাধিক দেশে তার সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করছে। ওই দেশগুলো আর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করছে না। ওই দেশগুলো চীনের কাছ থেকে অর্থনৈতিক ঋণও পাচ্ছে। যার কারণে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে চীনের সামরিক উপস্থিতি বেড়ে গেছে। ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করছে চীনের দিকে লক্ষ্য রেখে। বিষয়টি চীন উপলব্ধি করেছে বলে রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে। তা না হলে চীনের পক্ষে এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।

যাদের কাছে রাশিয়া কোনোদিনই সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেনি, সেই পাকিস্তানও এখন রাশিয়ায় জঙ্গি বিমান ও জঙ্গি হেলিকপ্টার ক্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। আফগানিস্তানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করার জন্য আসলে রাশিয়া ও চীন পাকিস্তানকে সহায়তা করছে। আগামী দিনগুলোতে চীন-রাশিয়ার সামরিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। যার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি ভারসাম্য ফিরে আসবে বলে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

সৈয়দ রশিদ আলম: লেখক ও গবেষক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :