কোটা বাতিলের ঘোষণায় আনন্দ মিছিল, এখন সমালোচনা

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:২৮ | প্রকাশিত : ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৫৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সংসদ কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন তখন আন্দোলনকারীরা তা স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীকে মাদার অব এডুকেশন বলেও অভিহিত করেন। কোটা বাতিলের পরিপত্র জারির পর এখন তারা বলছেন, কোটা পদ্ধতি বাতিল চাননি, চেয়েছিলেন সংস্কার। আর কোটা বাতিলের কারণে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।

রবিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা এমনটি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। এ সময় পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, ফারুক হোসেন, আতাউল্লাহ, জসিম উদ্দিন আকাশ, মশিউর রহমানসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সরকারি চাকরিতে বাংলাদেশে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, জেলা ও নারী কোটা ১০ শতাংশ করে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা পাঁচ শতাংশ এবং এক শতাংশ আছে প্রতিবন্ধী কোটা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এই কোটার সুবিধা সন্তানদেরকেও দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা নাতি-নাতনিদেরকেও দেয়া হয়। আর সে সময় থেকেই প্রধানত জামায়াতপন্থীরা এই কোটা বাতিলের দাবিতে একাধিকবার আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়।

তবে এবার কোনো বিশেষ কোটার কথা না সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে গত ফেব্রুয়রিতে শুরু হয় আন্দোলন। তারা সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশ করার দাবি জানায়। তবে কোন কোটায় কত শতাংশ দেয়া হবে সে বিষয়ে কিছু বলেনি তারা।

গত ৮ থেকে ১১ এপ্রিল নানা ঘটনার পর ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন কোনো কোটা থাকবে না। এর প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ উপাধি দিয়ে আনন্দ মিছিল করেন।

এরপর কোটা নিয়ে সুপারিশ দিতে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন হয়। কমিটি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেয়ার সুপারিশ করলে মন্ত্রিসভায় তা অনুমোদন দেয়া হয়। পরে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত জানানোর পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নামে একটি সংগঠন। যতদিন কোটা বহাল না হবে ততদিন কর্মসূচি চলবে বলেও জানানো হয়েছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলে যে উদ্ভুত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে বলে রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সকল সরকারি চাকরিতে পাঁচ দফার আলোকে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিল। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোটা সংস্কার না করে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে।

তিনি বলেন, আমরা সকল সাধারণ ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্ব করি। তাই আমরা সবসময় পাঁচ দফার আলোকে কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়েছি। আমরা কখনোই কোটা বাতিল চাইনি। তাই এ বাতিলের কারণে উদ্ভুত সমস্যার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। এছাড়া সরকারি চাকরিতে কোনো বিশেষ নিয়োগ দেয়া যাবে না। বিশেষ নিয়োগ ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। সেই সঙ্গে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতেও কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কারের আন্দোলন করতে গিয়ে যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

মামুন বলেন, ‘ছাত্রসমাজের নামে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক যেসকল মামলা করা হয়েছে, তা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে এবং আন্দোলনকারীদের উপর হামলাকারীদের বিচার ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে নিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

ঢাকাটাইমস/৭অক্টোবর/সাজ্জাদ/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :