‘গায়েবি মামলা’ নিয়ে হাইকোর্টের প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ২০:২২ | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৫৪

নাশকতার অভিযোগে পুলিশের সাম্প্রতিক নানা মামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। ‘গায়েবি’ বলে গণমাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া এসব মামলার কারণে পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে বলেও মনে করে আদালত।

সোমবার এ সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানিকালে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই প্রশ্ন তোলে।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন কামাল হোসেন, মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ। তাদের সঙ্গে ছিলেন মাসুদ রানা, একেএম এহসানুর রহমান প্রমুখ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

গত ১ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের পর ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার অভিযোগে বেশ কিছু মামলা হয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে যেসব অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে, সেসব ঘটনা ঘটেইনি বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি।

এমনকি মৃত মানুষ, বিদেশে অবস্থানকারী, পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ীদের বিরুদ্ধেও দেয়া হয়েছে মামলা। আবার একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে একই সময়।

বিএনপির পক্ষ থেকে এসব মামলাকে আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের বাঁধা হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। নেতারা বলছেন, তারা আদালতে ছুটবেন নাকি ভোটের প্রচারে নামবেন?

শুনানির শুরুতে কয়েকটি মামলার এজাহার পর্যবেক্ষণ করে হাইকোর্ট বলে, ‘এ ধরনের মামলায় (গায়েবি) পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। খন্দকার মাহবুব হোসেনের মতো লোকদের বিরুদ্ধে এমন মামলা হলে জনগণের কাছে কী মেসেজ যাবে?’

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল আদালতকে বলেন, ‘উনি (খন্দকার মাহবুব হোসেন) তো শুধু আইনজীবীই নন, একটি রাজনৈতিক দলের পদধারী।’

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘এটা কী বললেন? তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, এটা তো আইনে নেই। আগে আইনজীবীরাই বেশি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।’

এরপর এ মামলায় কামাল হোসেন শুনানি করেন। শুনানির শেষ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চাইলে আদালত আগামীকাল পর্যন্ত মামলাটি মুলতবি করে এবং অ্যাটর্নির শুনানি শেষে আদেশ দেবেন বলে জানিয়ে দেয়।

মাসুদ রানা বলেন, ‘গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় চার হাজার মামলা হয়। ১০ বছর আগে মারা গেছেন এমন লোকদেরও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে।’

‘এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনকে একই জায়গায় পর পর তিন থেকে চারদিনে ৪-৫টি মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এর প্রত্যেকটি মামলায় তিনি ককটেল বিস্ফোরণের আসামি। তার মতো ব্যক্তি সন্ধ্যার পরে গিয়ে ককটেল ছুড়তে পারেন এটা আদৌ কি বিশ্বাসযোগ্য? ২০০৭ সালে মারা গেছেন, কিংবা চলতি বছর হজে ছিলেন, বিদেশে থাকেন- এমন লোকদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।’

গত ২৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন এ কে খান। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়ার পক্ষে এই রিট দায়ের করা হয়।

গত ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করা হয়। রিটে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারা দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা চার হাজার মামলা এবং তিন লাখেরও বেশি লোককে আসামি করার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যত গায়েবি মামলা করা হয়েছে সেগুলোর তদন্ত বন্ধ এবং এ গায়েবি মামলাগুলোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক কমিটি করে ঘটনার তদন্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে যেন এ ধরনের মামলা দেওয়া না হয়, তার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশি ক্ষমতা অপব্যবহার করে গায়েবি বা মিথ্যা মামলা দায়ের করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রিটে সে বিষয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, ডিএমপি রমনা জোনের ডেপুটি ও অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার, রমনা, পল্টন ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট নয়জনকে এই রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/০৮অক্টোবর/এমএবি/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :