রাজবাড়ীতে এবারও সর্ববৃহৎ দুর্গাপূজা

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ২১:১৩

এম,মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ি

আজ ৯ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর মণ্ডপে চার মাস ধরে কাজ করে তৈরি হয়েছে প্রতিমা। সবচেয়ে বড় ও ভিন্নধর্মী পূজার আয়োজন চলছে বালিয়াকান্দির জামালপুরে। এখানে মাটি থেকে ৫০ ফুট উচ্চতায় পাঁচ তলাবিশিষ্ট বাঁশের তৈরি মন্দিরে সাজানো হচ্ছে একাধিক মণ্ডপ। সেখানে প্রদর্শিত হবে দেব-দেবীর ৩০০টি মূর্তি।

বিগত কয়েক বছর ধরে বালিয়াকান্দির এমন ভিন্নধর্মী আয়োজন চলছে। দুর্গা পূজার পাশাপাশি থাকে হিন্দু ধর্মের কাহিনী অবলম্বনে নানা চরিত্রের রূপ। এসবের প্রদর্শনী চলে লক্ষ্মী পূজা পর্যন্ত। উৎসবে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন নানা শ্রেণি পেশার কয়েক লাখ মানুষ।

প্রতিবারের মতো এবারও রাজবাড়ির জামালপুরে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে সাজানো হচ্ছে পূজামণ্ডপ, বেড়েছে প্রতিমার সংখ্যা। চার যুগে বিভিন্ন সময়ে অবতীর্ণ হওয়া অবতারদের ঘটনা দিয়ে সাজানো হচ্ছে এবারের মণ্ডপ। এই শারদীয় দুর্গোৎসব অন্যান্য বছরের তুলনায় ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন রূপে সাজানো হচ্ছে। এখানে পুকুরের পানির ওপর বাঁশ ও কাঠের তৈরি পাঁচ তলা মন্দিরের বিভিন্ন তালায় সাজানো হয়েছে তিন শত দেব-দেবীর মূর্তি।

প্রতিমা আর সাজসজ্জায় এটি হবে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। ১০ ভাস্কর বিগত চার মাস যাবৎ দিনরাত বিরামহীন পরিশ্রমে শেষ করেছেন প্রতিমা তৈরির কাজ। বিভিন্ন রঙ আর নয়নাভিরাম সাজসজ্জায় সব দেব-দেবীকে সুসজ্জিত করে সাজানো হয়েছে। তারকা-সংহার, অহল্লা উদ্ধার, পুষ্পবটিকাতে শ্রীরাম-রণ, রঙ্গভূমিতে দুই রাজকুমার, স্বয়ম্বর সভায় রণের রোধ, ধনুক ভঙ্গ, চার কুমারের বিবাহ, পিতার বাক্য পালন, সীতার উপদেশ-বনগমন, শ্রীকৃষ্ণের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকাহিনী, মাঝির ভাগ্য ও চিত্রকূটের শোভাসহ নানান কাহিনী নিয়ে বিশাল মন্দিরটিকে সুসজ্জিত করা হচ্ছে।

প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত ভাস্কর তাপস পাল জানান, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের চার যুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক কাহিনীকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই প্রতিমা দিয়ে। কলকাতার সীতারামের গীতা প্রেসের বই থেকে সংগৃহীত সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর আর কলিযুগের বিভিন্ন অবতারের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে প্রতিমার মাধ্যমে, যা ভক্তদের মন পুলকিত করবে এবং তারা সনাতন ধর্ম সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারবে।

মন্দির কমিটির কয়েকজন সদস্য বলেন, মন্দিরের ভেতরে বিভিন্ন দেবদেবীর ৩০০ প্রতিমা তৈরি করা হলেও বাইরে অর্থাৎ পুকুর পাড়ে ৪০ ফুট লম্বা বিশালদেহী লক্ষী-নারায়ণের প্রতিমা তৈরি করা হবে।

জামালপুর সার্বজনিন পূজামন্দির কমিটির সেক্রেটারি ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক গোবিন্দ কুমার বলেন, ২০১০ সাল থেকে এ মন্দিরে দুর্গাপূজা হয়ে আসছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সর্ববৃহৎ এ পূজায় জেলা ও উপজেলার পুলিশ প্রশাসন এবং এলাকাবাসী সার্বক্ষণিকভাবে সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও আনন্দ-ফূর্তি করে সময় কাটান।

আর মন্দির কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বিধান কুমার বলেন, এবার দেশের সর্ববৃহৎ এই দুর্গা পূজার আয়োজন করতে দশ হাজার বাঁশ, দশ মণ লোহার পেরেক, একশ’ সিএফটি কাঠ ও প্রায় একশ মণ মাটির প্রয়োজন হয়েছে। পূজা কমিটির পক্ষে এত বড় কাজ সমাধা করা কঠিন। তবে এ পূজা শুরুর দিন থেকেই এলাকার হিন্দ-মুসলিম ও প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় দৃষ্টি নন্দন ও দৃশ্যমান হয়েছে। পূজার দেব-দেবীর সাজানো দৃশ্য দেখে প্রতিদিন পৌরণিক কাহিনীর অবলম্বনে স্বচক্ষে অবলোকন করে আগত দর্শকরা আনন্দ পাবেন।

(ঢাকাটাইমস/৯অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)