‘মানবসম্পদ সূচকে’ ভারত পাকিস্তানের ওপরে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:২২ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:৩৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত ‘মানবসম্পদ সূচক’সূচকে বাংলাদেশকে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রাখা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের চেয়েও এগিয়ে শ্রীলঙ্কা।

মানব সম্পদ উন্নয়নে কোন দেশ কতটা সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রাখে, তার বিচার করে বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ এই সূচক প্রকাশ করেছে। রকারগুলোকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আরও কার্যকর বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে এই সূচক প্রকাশ করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের ১৫৭টি সদস্য রাষ্ট্রের ওপর জরিপ করে এই তালিকাটি করা হয়েছে। এতে কোন দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বেঁচে থাকার অন্য অনুষঙ্গগুলো বিবেচনা করা হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার বালিতে চলমান বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ বার্ষিক সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। 

একটি শিশুর শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্য সেবা এবং টিকে থাকার সক্ষমতা বিচার করে ভবিষ্যতে তার উৎপাদনশীলতা এবং আয়ের সম্ভাবনা বোঝার চেষ্টা করেছে বিশ্ব ব্যাংক। এর ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে তাদের মানবসম্পদ সূচক। এতে একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে।

একটি শিশু আদর্শ অবস্থায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার পূর্ণ সুযোগ পেয়ে বেড়ে উঠতে পারলে পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পর তার উৎপাদনশীলতা যে অবস্থায় পৌঁছানোর কথা তাই বলা হয়েছে এই জরিপে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে জন্য নেওয়া একজন শিশু বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীল হওয়ার সম্ভাবনা ৪৮ শতাংশ।

ভারতে এই হার ৪৪ শতাংশ আর পাকিস্তানে ৩৯ শতাংশ। তবে শ্রীলঙ্কা ও নেপালে এই হার যথাক্রমে ৫৮ ও ৪৯ শতাংশ।

এই শিক্ষার মান বুঝতে বিশ্ব ব্যাংক হারমোনাইজড টেস্ট স্কোর পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, সেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্কোর ৩৬৮। এই দানদণ্ডে শ্রীলঙ্কার শিশুদের স্কোর ৪০০, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। নেপালে এই স্কোর ৩৬৯, ভারতে ৩৫৫, পাকিস্তানে ৩৩৯।

প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ১০০ জনের মধ্যে ৯৭ জন শিশুই ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। ভারত ও পাকিস্তান এই হার  ৯৬ ও ৯৩ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে ৯৯ জন।  

বাংলাদেশে চার বছর বয়সী শিশু স্কুল শুরু করলে ১৮ বছর হওয়ার আগে স্কুলজীবনের ১১ বছর শেষ করতে পারে। ভারতে শেষ হয় ১০ দশমিক ২ বছরে। পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৮ বছর। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে এটি ১৩ বছর।

আবার মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশের নারীরা পুরুষের চেয়ে এগিয়ে।  আর প্রাপ্তবয়স্কদের বেঁচে থাকার হার বাংলাদেশ ৮৭ শতাংশ।

১৫ বয়সীদের মধ্যে ৮৭ শতাংশই ৬০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। আর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ৬৪ শতাংশ শিশুই স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। স্বাভাবিকভাবে বড় হওয়া প্রক্রিয়া ও বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩৬ শতাংশ শিশুর।

বাংলাদেশে প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে ৬৪ জন কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বেড়ে ওঠে। ভারতে এই সংখ্যা ৬২, পাকিস্তানে ৫৫, শ্রীলঙ্কায় ৮৩।

শিশুদের আরও সম্ভাবনাময় করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে এশিয়ার দেশগুলো। সূচকের শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও হংকং।

এই সূচকে সবচেয়ে বাজে অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো। বিশ্ব ব্যাংকের সদস্য ১৫৭ দেশের মধ্যে সবার পেছনে রয়েছে শাদ আর সাউথ সুদান। সূচকের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুরে এই হার ৮৮ শতাংশ, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮৪ শতাংশ।

কানাডায় এই হার ৮০ শতাংশ, জার্মানিতে ৭৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৭৮ শতাংশ, যুক্তরষ্ট্র ও ফ্রান্সে ৭৬ শতাংশ, রাশিয়ায় ৭৩, চীনে ৬৭ শতাংশ, তুরস্কে ৬৩ শতাংশ, ব্রাজিলে ৫৬ শতাংশ।

বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, এই সূচকে উন্নতির জন্য দেশগুলো স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে মনোযোগী হবে বলে তিনি আশা করছেন।

ঢাকাটাইমস/১১অক্টোবর/ডব্লিউবি