যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মুফতি শফিক বাড়িতে আসেন না দেড়যুগ

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৩৩

রাজীবুল হাসান, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জেহাদের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির মুফতি শফিকুর রহমানের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বাঁশগাড়ী পশ্চিমপাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের মরহুম মৌলভী শিশু মিয়ার ছেলে এই শফিকুর দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে বাড়িতে আসেন না। বাড়িটিতে তার বৃদ্ধা মা ও এক ছোট ভাই ছাড়া আর কেউ থাকেন না, শফিকুরের থাকার ঘরটিও তালাবদ্ধ থাকে সব সময়।

গ্রেনেড হামলা মামলা ছাড়াও মুফতি শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ভৈরব থানার তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ওই থানার পুলিশও বলছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। একাধিকবার তার বাড়িসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় বুধবার ঢাকার ১নং ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড,১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন। ঘোষিত রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য ১৮ জনের সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে মুফতি শফিকুরের।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বাঁশগাড়ী গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, মৌলভী শিশু মিয়ার ৬ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে বড় এই মুফতি শফিকুর রহমান। অন্য ভাইদের মধ্যে মৌলানা মাহাবুব (৩৮) ও মৌলানা নূরুল হুদাও (৩৫) শফিকের মতোই মাদ্রাসায় লেখাপড়া শেষ করে এখন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। অন্য তিন ভাই কেফায়েত উল্লাহ (২০), রহমতউল্লাহ (১৮) ও সাদউল্লাহ (৯) এখনও মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে। মুফতি শফিকুর রহমানের এক মেয়ের বহুদিন আগে বিয়ে হয়েছে। তবে তার বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধ মা ও তার একজন ছোট ভাইকে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। তার থাকার ঘরটিও তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ছোটবেলায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ শেষে শফিকুর রহমান স্থানীয় মাদ্রাসায় শিক্ষা নেন। এরপর পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে কিছুদিন লেখাপড়া করার পর আফগানিস্তানে গিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৯২ সালে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ গড়ে দেশে-বিদেশে আলোচনায় আসেন মুফতি শফিকুর, দায়িত্ব নেন আমিরের। এক সময় শায়খ আবদুর রহমান ও মুফতি হান্নানের সাথে জড়িত হয়ে দেশে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্তে বের হয় যে, মুফতি শফিকুর সরাসরি ওই হামলায় জড়িত ছিলেন। অন্য আসামিদের সঙ্গে তারও বিচার হয়েছে, পেয়েছেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ।

এলাকার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এম কে মিলন জানান, মুফতি শফিকুর রহমান দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে বাড়িতে আসেন না। প্রতিবেশী আত্মীয় শিক্ষার্থী সোহাগ মিয়াও বলেন, ‘তাদের বাড়িতে তার মা ছাড়া কেউ নেই। বাড়ির ঘরের দরজা সব সময় বন্ধ থাকে। তাদের বাড়ির ভিতরে আমরা কখনো প্রবেশ করি না ।’ আরেক প্রতিবেশী অলিউল্লাহ বলেন , ‘আমি দেড় যুগ আগে শফিকুরকে একবার বাড়িতে দেখেছিলাম। তারপর আর তাকে এলাকায় দেখিনি।’

এলাকার অনেকেই জানেন না যে, গ্রেনেড হামলা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন শুনে তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান জানান, মুফতি শফিকুর রহমানের নামে থানায় তিনটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। একাধিকবার তার বাড়িসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( অপরাধ)  মো. শফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত  মুফতি শফিকুর রহমানের বাড়ি ভৈরবে একথা আমরা জানতাম না। এখন যখন অবগত হলাম, তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাবে। দেশের কোথাও তিনি পালিয়ে থাকলে তাকে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করবে পুলিশ।’

(ঢাকাটাইমস/১২অক্টোবর/ প্রতিনিধি/এআর)