ভবনে নান্দনিক সিঁড়ি

প্রকৌশলী জয়নুল আবেদীন কামাল
 | প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৫৭

সিঁড়ি একটি ভবনের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় তেমনি আকর্ষণীয় ডিজাইনের জন্য বড় ভূমিকা রাখে। ফুটে ওঠে ঘরের অভ্যন্তরীণ সাজ। সিঁড়ি মূলত ভবনের এক তলা থেকে অন্য তলায় নিরাপদে ও অনায়াসে যাতায়াতের জন্য কতগুলো ধাপ। এই ধাপের সাহায্যে যে পথ নির্মাণ করা হয় তাকে সিঁড়ি বা স্টেয়ার বলে। সিঁড়ি যদি হিসাব-নিকাশ করে তৈরি করা যায় তাহলে ঘরের মধ্যে জায়গা যেমন পাওয়া যায় তেমনি ঘর হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়। সিঁড়ি তৈরিতে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

একটি উত্তম সিঁড়ির জন্য যেসব বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন। একটি উত্তম সিঁড়ির জন্য অবস্থান, সিঁড়ির প্রস্থ, ফ্লাইটের দৈর্ঘ্য, সিঁড়ির ঢাল, হেডরুম, নির্মাণসামগ্রী, ব্যালাস্ট্রেড ও হ্যান্ড রেইল, স্টেপ আকার, ল্যান্ডিংয়ের মতো বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। সিঁড়ির ট্রেড এবং রাইজার সংখ্যা নির্ণয় করে নিতে হবে। যেমন রাইজারের সংখ্যা=প্রতি ফ্লাইটের উচ্চতা/রাইজারের উচ্চতা। ট্রেডের সংখ্যা=প্রতি ফ্লাইটের রাইজারের সংখ্যা-এক। ১টি ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ধাপ থাকা উচিত ১০ থেকে ১২টি। তবে সর্বোচ্চ ১৫টি এবং সর্বনিম্ন ৩টির কম হবে না। আবাসিক দালানের ক্ষেত্রে সিঁড়ির অবস্থান কেন্দ্রস্থলে এবং পাবলিক বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে সিঁড়ির অবস্থান রাস্তার দিকে হওয়া উচিত। সিঁড়ির ট্রেড ও রাইজার হচ্ছে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করার সময় সিঁড়ির যে সমতলে পা রেখে ওঠানামা করা হয় তাকে ট্রেড বলে। আর ধাপের লম্ব অংশ এবং যা ট্রেডকে সাপোর্ট প্রদান করে তাকে রাইজার বলে। ট্রেড হয় ১০ ইঞ্চি এবং রাইজার ৬ ইঞ্চি। সিঁড়ির দৈর্ঘ্য=১৫ ইঞ্চি-৬ ইঞ্চি, প্রস্থ=৮ ইঞ্চি থেকে ০ ইঞ্চি, সিঁড়ির ওয়েষ্ট স্ল্যাবে পুরুত্ব=৬ ইঞ্চি, সিঁড়ির ট্রেড ১০ ইঞ্চি, সিঁড়ির রাইজার ৬ ইঞ্চি, সিঁড়ির মাঝের ল্যান্ডিংয়ের নিচে বিমের সাইজ ১০ ইঞ্চি ১৮ ইঞ্চি। উপরে ছাদের বিম সিঁড়ির ভেতরে আসবে না। অঈও কোড অনুযায়ী ট্রেড ও রাইজারের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মান হবে, আবাসিক দালানের সিঁড়ির রাইজারের পরিমাণ ১৫ সেন্টিমিটার থেকে ১৮ সেন্টিমিটার এবং ট্রেডের পরিমাণ ২৩ সেন্টিমিটার থেকে ২৭ সেন্টিমিটার। পাবলিক বিল্ডিংয়ে রাইজার ১৪ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার এবং ট্রেড ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার রাখা হয়। আবাসিক দালানের জন্য সিঁড়ির ফ্লাইটের প্রস্থ ও হেডরুমের ন্যূনতম পরিমাপ হবে প্রস্থ ৯০ সেন্টিমিটার বা ৩ ফুট এবং হেডরুম ২.১০ মিটার বা ৭ ফুট। বিভিন্ন প্রকারের সিঁড়ি রয়েছে।

যেমন- একমুখী সিঁড়ি, ডগ-লেগড সিঁড়ি, ওপেন নিউয়েল সিঁড়ি, জিওমেট্রিক্যাল সিঁড়ি, বৃত্তাকার সিঁড়ি, বাইফারকেটেড সিঁড়ি। এছাড়া ভবনের বিভিন্ন তলায় যাতায়াতের জন্য ধাপবিহীন যে সিঁড়ি ব্যবহার করা হয় তাকে র‌্যাম্প বলে। বহুতল ভবনে যে কক্ষে লিফট স্থাপন করা হয় তাকে লিফট কোর বলে। সিঁড়ির ঢাল কেমন হবে? ল্যান্ডিং বা মেঝের সঙ্গে লাইন অব নোজিং যে কোণ করে থাকে তাকে সিঁড়ির ঢাল বলে। ঢাল ৩০ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে হয়ে থাকে। দুটি ফ্লাইটের মধ্যবর্তী স্থানে চওড়া যে প্লাটফর্ম নির্মাণ করা হয় তাকে ল্যান্ডিং বলে।

সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করার সময় দিক পরিবর্তন এবং মধ্যবর্তী স্থানে সামান্য বিশ্রামের জন্য ল্যান্ডিং ব্যবহার করা হয়। সিঁড়ির ধাপের ওজন নির্ণেয় সূত্রটি হচ্ছে- ড=১২জ শম/সক্ষ্ম। জ এখানে রাইজার এবং ড ওজন। সিঁড়ি নির্মাণের জন্য সবচেয়ে উত্তম মালামাল হলো কংক্রিট। কারণ এই জাতীয় মালামালে অগ্নিনিরোধক ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি এবং যেকোনো আকারে দেওয়া যায়। বসতবাড়িতে যেসব সিঁড়ি ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন বসতবাড়িতে উড়ম ষবমমবফ সিঁড়ি বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ভবনের সিঁড়ির অবস্থান যেমন হবে যেন ভবনের আবাসিক বাসিন্দারা স্বাচ্ছন্দ্যে প্রবেশ এবং বের হতে পারে। সিঁড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো- বাতাস পাওয়া যাবে। সিঁড়ির প্রবেশ পথে সুবিধাজনক বিস্তৃত এলাকা পাওয়া যাবে। সিঁড়ির অবস্থান রাস্তার দিকে হওয়া উচিত, যেন সহজেই লোকজন রাস্তা হতে বিভিন্ন তলায় যেতে পারে।

প্রকৌশলী জয়নুল আবেদীন কামাল: প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার, এল এম এরিকসন (বিডি) লিমিটেড

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :