‘বি চৌধুরীর বোধোদয়টা হয়েছে বিলম্বে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৪৬

শেষ পর্যন্ত ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোর জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’ যাননি বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি ‘আদর্শগত’ কারণেই এই জোটে যাননি বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। কারণ এই জোটের সঙ্গে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে বি চৌধুরীর এই ‘বোধোদয়টা’ বিলম্বে হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

শনিবার মধ্যরাতে বেসরকারি বাংলাভিশন টেলিভিশনে ‘জাতীয় ঐক্যের যাত্রা শুরু’ শীর্ষক টক শোতে অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। তার সঙ্গে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাদাত হোসেন।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঐক্য প্রক্রিয়ার ডাকটা এসেছে ড. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীর কাছ থেকে। ঐক্য প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত যখন বাস্তবায়িত হলো বা রূপ নিল তখন দেখছি বি চৌধুরীর বিকল্পধারা নেই। এটা যে থাকবে না এটার আভাস আগেই পাওয়া যাচ্ছিল। কারণ বি চৌধুরী মহানগর নাট্যমঞ্চেই বলেছিলেন, স্বাধীনতাবিরোধী কাউকে রাখা হবে না। যার আদর্শগত কারণেই বি চৌধুরী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে গেলেন না।’

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে শনিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রায় ছিলেন না যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বি. চৌধুরী। নির্দলীয় সরকার প্রশ্নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনমনীয় অবস্থানের মধ্যে বিএনপিকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চাইলেও তাদের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার শর্ত দিয়েছিল বিকল্পধারা।

বি চৌধুরীর অতীত নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গে জামায়েতে ইসলামীর সঙ্গ থাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে না যাওয়ায় বি চৌধুরীকে সাধুবাদ জানান এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘বি চৌধুরী বিএনপির সঙ্গেই ছিলেন। মন্ত্রী ছিলেন, রাষ্ট্রপতি ছিলেন, মহাসচিব ছিলেন এমনকি বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যও ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল তখনতো তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আপত্তি করেননি। কিন্তু এখন করছেন কারণ তার ‘বিলম্বিত বোধোদয়’।’

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেকোনো কারণেই হোক না কেন বিএনপি কি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ছে নাকি ছাড়ছে না স্পষ্ট নয়। কাজেই বি চৌধুরী তাদের সাথে গেলেন না। আদর্শের দিক থেকেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার জন্য আমি তাকে সাধুবাদ দেব।’

‘বাংলাদেশের আদর্শ, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, চেতনার বাহিরে যাদের ভাবনা তাদেরতো বাংলাদেশের রাজনীতি বা অন্য কিছুতে অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই। এমনকি তাদের অধিকার থাকা উচিতও না। সেই জন্য আমি বি চৌধুরীকে সাধুবাধ জানাচ্ছি।’

কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যে যাত্রা শুরু হয়েছে সেখানে নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে যে ঐক্য প্রক্রিয়াটা সেটা ভালো কথা। কারণ আওয়ামী লীগের সামনে একটা চ্যালেজ্ঞ হয়। তা না হলে আওয়ামী লীগতো ফাঁকা মাঠে গোল দেব।’

‘গণতন্ত্রের স্বার্থে, রাজনীতির স্বার্থে একটা শক্তপোক্ত ঐক্য যদি গড়ে ওঠে সেটা ভালো কিন্তু তার লক্ষণতো আমি পাচ্ছি না। মুশকিল হয়ে গেল আর কী।’

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন নতুন ঐক্য প্রক্রিয়া আদর্শগতভাবে নয় বরং রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা বলে উল্লেখ করেন এই শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বলেন, ‘বিএনপি ছাড়া এই ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে যারা আছে তারাতো সব ছোট ছোট দল এবং তারা জনসংযোগহীন বা জনসমর্থনহীন। যার জন্য তারা বিএনপির ওপর ভর করছে এই জন্যে যে, বিএনপির একটা জনসমর্থনের ভীত আছে। আবার বিএনপি এদের ওপর ভর করছে এজন্যে যে, বিএনপির এখন একটা সংকটকাল চলছে।’

‘নেতৃত্বের সংকট, সংগঠনের সংকট। যদি এদের সঙ্গে ফিরে দুই পক্ষেরই লাভ হয় অর্থাৎ একটা রাজনৈতিক সুবিধাবাধিতা। এখানে আদর্শের কোনো কথা নয়।’

এ সময় তিনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও যুক্তফ্রন্টের সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান মান্নার সমালোচনা করেন। বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যারা আছেন তারা কিন্তু কেউ তাদের মূল দলে নেই। মূল দল থেকে ছিটকে পড়েছে নানা কারণে। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত এরা কী করে বিএনপি যাদের সঙ্গে জামায়াতের সঙ্গ আছে তাদের সঙ্গে গেলেন, তাদেরকে নেতৃত্ব দেবার জন্য সম্মত হলেন, এটা একটা প্রশ্ন রয়ে গেল।’

(ঢাকাটাইমস/১৪অক্টোবর/এনআই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :