শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের উচ্চহারে উদ্বেগ

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০০:৩৩ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০১:০১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হবে। আর এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ১০টিরও বেশি অভীষ্ট সরাসরি তরুণদের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অথচ দেশের উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর প্রতি তিনজনে একজন বেকার। ফলে দেশের উন্নয়নে যুবসমাজের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

ররিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত যুব সম্মেলন-২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়। ‘বাংলাদেশ ও এজেন্ডা ২০৩০: তারুণ্যের প্রত্যাশা’ শীর্ষক দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ’।

সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শিক্ষিতদের বেকারত্বের হার বাড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ। এই প্রতিশ্রুতিশীল যুবসমাজের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দেশের উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর প্রতি তিনজনে একজন বেকার। বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেকারত্বের হারও বাড়ছে। মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাব যুবসমাজের জন্য অমোচনীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। তিনি বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সরকার সমাজের কাউকে পিছিয়ে রেখে যেতে চায় না। দরিদ্র, দুর্বল, বয়স্ক ব্যক্তিদের সামাজিক সুরক্ষা নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তরুণেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সরকার কী করবে সেটি চিন্তা না করে, তরুণেরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কী করবে, সেটি চিন্তা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয় বাংলাদেশে এক তৃতীয়াংশ যুব সমাজ, যাদের বয়স আঠারো থেকে পঁয়ত্রিশ। রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির আগে যুবসমাজের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। তাহলে তাদের মতামত উঠে আসবে। সরকারের বিভিন্ন পলিসি করার আগে যুব সমাজের কথা শুনতে হবে। এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে এসব জরুরি। এসডিজি অর্জনে তরুণদের জ্ঞান, উদ্ভাবন ও উদ্দীপনার সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই তরুণেরাই হবেন উন্নয়নের প্রধান সুবিধাভোগী ও অংশীজন।

রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানে যুব ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়।

সমাপনী অধিবেশনের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এনজিও বিষয়ক ব্যুরো কে এম আব্দুস সালাম, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ এর কোর গ্রুপ দসস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি)নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

সমাপনী অনুষ্টানে যুব ঘোষণাপত্র ২০১৮ পাঠ করেন সঙ্গীতশিল্পী আরমীন মুসা।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়- ‘বর্তমানে দেশের মোট বেকার জনগোষ্ঠীর ৭৯ শতাংশ যুব সমাজ। মানসম্মত শিক্ষার অভাব এবং কর্মযোগী দক্ষতা গড়ার সুযোগ না থাকায় শিক্ষা কাঙ্খিত সুফল বয়ে আনছে না। নিজেদের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলার মতো আর্থিক সহায়তাও সুলভ নায়। দেশে যুববান্ধব শাসন না থাকায় পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে আরও নাজুক। ফলে আমরা নিজেদের বিপন্ন বোধ করি, এবং নিমজ্জিত হই হতাশায়। পরিণতিতে কেউ কেউ হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত এবং অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে চরমপন্থায়। এভাবেই আমদের অপার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গিয়ে প্রকারান্তরে আমরা দোশের বোঝা হয়ে পড়ছি।’ যুব ঘোষণাপত্র ২০১৮  উপস্থিত সবার হাতে প্রিন্ট করে দেয়া হয়েছিল। প্রথম পৃষ্ঠার শেষের চার লাইন এ কথাগুলো ছিল।

তবে ঘোষণা পত্রের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই চার লাইন (প্রথম পৃষ্ঠার শেষের চার লাইন) পরিবর্তন করতে হবে। কারণ পৃথিবীর কয়টি দেশের জিডিপি ৭.৮৬ শতাংশ? আমাদের আশে পাশে দেশগুলোর কথা চিন্তা করেন। আপনি যদি দেখেন শিশু মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু, গড় আয়ু, আমাদের ব্যাংকের রিজার্ভ, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন। প্রায় একশটার মত বিদ্যুৎকেন্দ্র বিগত দশ বছর হয়েছে এগুলো আপনি চালাচ্ছেন, আমাদের দেশের জণগন চালাচ্ছে। এখানে বিদেশি লোক আসেনি।

‘আমাদের নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্লান্ট হচ্ছে, মেট্রোররেল হচ্ছে। চার লেনের রাস্তা, ইনোভেশন, ই–গভরনেন্স কে করছে এগুলো। আপনি করছেন, আমি করছি, আমরা করেছি। আমাদের এই শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে করছি। হ্যাঁ এটি আরও বেশি আরও সফলভাবে যাতে করা যায় সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি। আপনারা মনে হয় সেটাই চাচ্ছেন। আরও ভালো চাচ্ছেন।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, পদ্মা সেতুর ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ কাজ বাংলাদেশের লোকেরা করছে। এর সঙ্গে পদ্মা রেলের কাজ হচ্ছে। চার লেনের  রাস্তা হয়েছে। আমার দেশের সম্পদ দিয়ে এই রাস্তা বানিয়েছে আমাদের সন্তানরা। কাজেই আমি এখানে হতাশ হওয়ার কিছু দেখি না। আরও ভালো করবো আমরা।

সমাপনী অনুষ্ঠানে (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন জানান, আজ দিনব্যাপী এই আয়োজনে ৭০ জনেরও বেশি বক্তা বক্তব্য রেখেছেন।

বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে অবদান রাখার প্রয়াসে ২০১৬ সালে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এর ৮৭টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসডিজির বিভিন্ন অভীষ্ট নিয়ে কাজ করছে।

 (ঢাকাটাইমস/১৪অক্টোবর/জেআর/ইএস)