‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’কে স্বাগত জানালো জামায়াত

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ২২:৩৫ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ২২:৫৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে যে জোট হয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে ২০ দলের শরিক জামায়াতে ইসলামীও। এছাড়া অন্য শরিকরাও নতুন এই জোটকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বিএনপি তার শরিকদের আশ্বস্ত করে বলেছে, এই জোট হলেও ২০ দল অক্ষুণ্ন থাকবে। সবকিছু শরিকদের সময়মতো অবহিত করা হবে।  

সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নবগঠিত জাতীয় যুক্তফ্রন্ট নিয়ে আলোচনা হয়।

ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে সরকারবিরোধী একটি ঐক্যের আলোচনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। পরে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। নেতৃত্ব বাছাই ও রূপরেখা প্রণয়ন নিয়ে এসব দলের নেতাদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়। তবে গত শনিবার ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ নামে এই জোটের ঘোষণা এলেও শেষ মুহূর্তে তা থেকে সরে যায় বিকল্পধারা। দলটির অভিযোগ, বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার দলের নেতাদের অপমান করা হয়েছে। তবে এই জোটের সঙ্গে পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী যুক্ত আছে এজন্য তারা যাননি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বদরুদ্দোজা চৌধুরী। 

নতুন জোট গঠনের পর আজ ছিল ২০ দলের প্রথম বৈঠক। এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি ও লক্ষ্য সম্পর্কে জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি। এসময় শরিকদের পক্ষ থেকে আগামী দিনে কোন প্রক্রিয়ায় আন্দোলন কর্মসূচি চলবে তা নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। শিগগিরই ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরে জোটের শরিকদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানানো হয়।

বৈঠক শেষে জোটের একটি শরিক দলের নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বৈঠকে তেমন কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে বিএনপির মহাসচিব জোট নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জোটকে জানানো হবে।’

জোটের একটি দলের মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর আবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হবে। সেখানে আগামী দিনের কর্মসূচি ও নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে জোট নেতারা ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেক কষ্ট করে ঐক্য গড়তে সক্ষম হয়েছেন দাবি করে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইবরাহিম বীরপ্রতীক তাকে ধন্যবাদ জানান। অন্যদিকে জামায়াতের প্রতিনিধি আব্দুল হালিম বৈঠককে জানিয়েছেন, তারাও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানায়। তারা জোটে অতীতে যেভাবে ছিল, এখনো আছে, আগামীতেও থাকবে। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেকোনো সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।

একটি শরিক দলের চেয়ারম্যান ঢাকাটাইমসকে বলেন, সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। নির্বাচনে সবাইকে মূল্যায়ন করা হবে বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে আন্দোলন জোরদার হবে’

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে জনগণের আন্দোলন জোরদার হবে এবং দেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

নজরুল বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত দাবি ও লক্ষ্যগুলো নিয়ে জোটের বৈঠকে পর্যালোচনা করেছি। আলোচনা করে ২০ দলীয় জোট একমত হয়েছে, একটি স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটা অগ্রগতি হয়েছে। সে জন্য আমরা এই ফ্রন্টকে স্বাগত জানিয়েছি।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আশা করি, এই জোট গঠনের মধ্য দিয়ে আগামী দিনে জনগণের আন্দোলন আরও বেগবান হবে। একইসঙ্গে এই সরকার জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অনুষ্ঠানে ব্যাপারে তাদের যে দায়িত্ব তা পালন করবে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তোলায় এই জোটের নেতাদের ২০ দলীয় জোট ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলেও জানান নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতের নেতা মাওলানা আব্দুল হালিম, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান আব্দুর রকিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি ওয়াক্কাস, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১৫অক্টোবর/বিইউ/জেবি)