২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

পালিয়ে বেড়াচ্ছে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জঙ্গির স্বজনরা

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
| আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:২১ | প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:১৮
বগুড়ায় আবদুস সালামের জরাজীর্ণ বাড়ি

২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বগুড়ার ধুনটের মাওলানা শেখ আব্দুস সালামের বাড়ির এখন জরাজীর্ণ দশা। নয় বছর ধরে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন, হামলার ঘটনারও অনেক আগে থেকেই জঙ্গিজীবন বেছে নেওয়ায় বাড়ির বাইরেই বেশিরভাগ দিন পলাতক অবস্থায় কেটেছে তার। ফলে তার আপন ভাবিই তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না।

তবে ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা সালামের স্ত্রী চার ছেলে-মেয়েকে থাকেন পাশের শেরপুর উপজেলার বাপের বাড়িতে। বিবাহিত অন্য দুই মেয়েও শ্বশুরবাড়িতে থাকায় পৈত্রিক ভিটে-মাটিতে এখন আর আব্দুস সালামের কেউ নেই। তাইতো গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার একটি টিনের ঘর জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

আব্দুস সালামের বড় ভাই মৃত গোলাম মোস্তফার স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, তার দেবর আব্দুস সালাম মাদ্রাসায় পড়ালেখা করায় ছোটবেলা থেকেই বাইরে থাকতেন। তিনি দেশের বাইরেও যুদ্ধে (আফগান যুদ্ধ) গিয়েছেন বলে শুনেছেন। তাই গ্রামের বাড়িতে খুব কম আসতেন। ২০০৯ সালের আগে একবার বাড়িতে এসেছেন। তাই সালামের বিষয়ে খুব একটা জানেন না তিনি।

আব্দুস সালাম ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের পেঁচিবাড়ি গ্রামের মৃত মোজাহার আলী শেখের ছেলে। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে আব্দুস সালামই ছোট। তিনি শৈশবের ছাত্রজীবন কাটিয়েছেন শেরপুর উপজেলায়। সালাম গ্রেপ্তার হওয়ার পর শেরপুরের হামছায়াপুর গ্রামের বাপের বাড়িতে স্ত্রী আলেয়া বেগম তার এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছেন। আরো দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ায় তারা শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।

ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খান মো. এরফান বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার মামলায় অন্যতম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শেখ আব্দুস সালামের আত্মীয়-স্বজনদের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

গত ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় শেখ আব্দুস সালামসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকি ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর গ্রেপ্তার হয়ে ৩ ডিসেম্বর আদালতে জবানবন্দি দিয়ে নিজের দোষ স্বীকার করেছিলেন সালাম।

আদালতে মাওলানা শেখ আব্দুস সালামের জবানবন্দি ও ধুনটের গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করার সময় পাকিস্তানে যান তিনি। সেখান থেকে ওই বছরেই আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তালেবান জঙ্গিদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেন। পর পর তিনবার ওই যুদ্ধে অংশ নিয়ে ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে ফেরেন। এরপর অন্যদের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ শাখা প্রতিষ্ঠা করেন সালাম। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সালের কিছু সময় তিনি ওই সংগঠন পরিচালনা করেন। পরে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে সক্রিয় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

বাংলাদেশ-পাকিস্তানে যাতায়াতে কখনও পাকিস্তানি পাসপোর্ট, আবার কখনও বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন মাওলানা আব্দুস সালাম। ১৯৯৭ সালে সালাম তার স্ত্রী-সন্তানসহ বাংলাদেশি পাসপোর্টে পাকিস্তানে যান। আর ২০০২ সালে পাকিস্তানি পাসপোর্টে গফুর পরিচয়ে দেশে ফেরেন। এরপর তিনি বগুড়ার শেরপুরে বালিকা মাদ্রাসা স্থাপন করে শিক্ষকতা শুরু করেন। এ সময় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তার নেতৃত্বে ঢাকায় গ্রেনেড হামলাসহ বেশকিছু জঙ্গি কার্যক্রমে অংশ নেন মাওলানা আব্দুস সালাম।

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/প্রতিনিধি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :