খাশোগিকে সাত মিনিটে টুকরো টুকরো করে হত্যা

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:১৫ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:০৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে নিজদের দূতাবাসে নির্বাসিত সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করতে অভিজ্ঞ লোক পাঠায় সৌদি। পুরো হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করতে সময় লেগেছে মাত্র সাত মিনিট। তুর্কি সূত্রের বরাত দিয়ে এই ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মিডলইস্ট আই।

প্রতিবেদনে প্রকাশিত অডিও, তুর্কি সূত্র এবং সেসময় দূতাবাসে উপস্থিত থাকা ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে খাশোগি হত্যার পুরো চিত্র তুলে ধরেছে মিডলইস্টআই।

খাশোগি হত্যার অডিও শুনেছেন এমন এক তুর্কি কর্মকর্তার সূত্র দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাশোগিকে হত্যা করতে মাত্র সাত মিনিট সময় লেগেছে। দূতাবাসের কনস্যাল জেনারেলের অফিস থেকে তাকে টেনহিঁচড়ে কনস্যাল জেনারেলের পড়ার ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেসময় উপরে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেখানে নিচতলায় উপস্থিত থাকা এক ব্যক্তি। সূত্র জানিয়েছে, সেসময় কনস্যাল জেনারেল নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসেন। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কোনো চেষ্টা ছিলো না। তারা তাকে হত্যার জন্যই এসেছিলেন। 

খাশোগি দূতাবাসে ঢোকার কিছুক্ষণ পর তার চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। কারণ তাকে চেতনানাশক ইনজেকশন দেয়া হয়।

খাশোগিকে হত্যার উদ্দ্যেশে সৌদির সাধারণ নিরাপত্তা বিভাগের ফরেনসিক প্রমাণের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সালাহ মোহাম্মদ আল তুবাইগিসহ ১৫জনের একটি দল প্রাইভেট জেটে করে ওইদিন সকালে আঙ্কারা পৌঁছান।

আঙ্কারার সৌদি দূতাবাসের কনস্যাল জেনারেলের পড়ার টেবিলে অচেতন খাশোগিকে টুকরো করতে শুরু করেন তুবাইগি। যখন কাটা শুরু হয় তখনও খাশোগি জীবিত ছিলেন। পুরো হত্যাকাণ্ডটি ঘটাতে সময় লেগেছে মাত্র সাত মিনিট। মিডলইস্টআইকে জানিয়েছে সূত্র।

তুবাইগি যখন খাশোগিকে কাটতে শুরু করেন তখন তিনি ইয়ারফোনে উচ্চস্বরে গান শুনছিলেন। এছাড়া এসময় তিনি তার সহকর্মীদেরও গান শুনতে উৎসাহ দেন। যাতে করে খাশোগির মৃত্যুযন্ত্রণার আওয়াজ শোনা না যায়। ওই রেকর্ডে তুবাইগিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘যখন আমি আমার কাজ করতে শুরু করেছি তখন থেকেই আমি গান শুনছি। আপনাদেরও এটা করা উচিত।’

তিন মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড তুর্কি গণমাধ্যম সাবাহকে দেয়া হয়েছে। তবে তারা সেটি এখনো প্রকাশ করতে সক্ষম হয়নি।

একটি তুর্কি সূত্র নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছে, সেইসময় তুবাইগি প্রস্তুত হয়ে এসেছিলেন। তার পোশাকও সেইরকম ছিলো। তুবাইগি সৌদি ফরেনসিক প্যাথোলজি ফেলোশিপের সভাপতি এবং সৌদি ফরেনসিক প্যাথোলজি এসোসিয়েশনের সদস্য।

২০১৪ সালে লন্ডনভিত্তিক সৌদি পত্রিকা আশরাক আল আওসাতকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তুবাইগি জানিয়েছিলেন যে, তার ভ্রাম্যমান ক্লিনিকের মাধ্যমে মৃত্যুর সাত মিনিটের মধ্যে তার ময়নাতদন্ত করা সম্ভব। এটি হজ্ব মৌসুমে হাজিদের মৃত্যু হলে এমন পদ্ধতি কাজে আসবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

সেই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিলো যে, এই ভ্রাম্যমান ক্লিনিকটি তুবাইগির ডিজাইন করা। এটির মাধ্যমে ঘটনাস্থলেই কারো ময়নাতদন্ত করা সম্ভব।

ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে খাশোগি হত্যার এটিই প্রথম বিস্তারিত বিবরণ বলে দাবি করেছে মিডলইস্টআই।

গত দুই অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে প্রবেশের পর নিঁখোজ হন দেশটির নির্বাসিত সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তারপরই তাকে দূতাবাসের ভিতরে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তুরুস্ক।

তবে শুরু থেকে খাশোগিকে হত্যার কথা অস্বীকার করলেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তাকে হত্যার কথা স্বীকার করতে চলেছে সৌদি। নিউইয়র্ক টাইমসে বলা হয়েছে, তাকে ভুলক্রমে হত্যা করা হয়েছে বলে জানাতে পারে সৌদি সরকার। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনও সৌদির এমন ইঙ্গিতের কথা জানিয়েছে।

এই ঘটনার শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেশ চড়াও হলেও বর্তমানে সৌদির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে সৌদিকে। ঘটনা প্রমাণ না হলে তাদের ওপর দোষ চাপানো ঠিক হবে না।

ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/একে