কেউ চলে গেলেও জোটে প্রভাব পড়বে না: রিজভী

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:০০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ন্যাপ ও এনডিপি জোট ছেড়ে গেলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ভাঙছে না বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বলেছেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থে দুই-একজন চলে গেলেও ২০ দলে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। কোনো কোনো নেতা লোভের জন্য বেইমানি করছেন।’

বুধবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ ও খন্দকার গোলাম মোর্তুজার নেতৃত্বাধীন এনডিপি।

যদিও রাতে এনডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মুকাদ্দিমকে নতুন চেয়ারম্যান উল্লেখ করে দলটির প্যাডে বিবৃতি পাঠানো হয়। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ওসমান গনি পাটোয়ারীকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করা হয়। 

পরে অবশ্য গোলাম মোর্তুজার পক্ষ থেকে পাল্টা বিবৃতি দিয়ে নতুন চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে আজহারুল ইসলামকে চেয়ারম্যান করে বাংলাদেশ ন্যাপের একটি অংশও বিএনপি জোটে থেকে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী খালেদা জিয়ার আরেক দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সাজানো মিথ্যা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না করেই সরকারের হুকুমে আরেকটি ফরমায়েশি রায়ের দিন ধার্য করেছে নিম্ন আদালত। যেটি সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ও নিম্ন আদালতে সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ।’ 

রিজভী বলেন, ‘অসুস্থ ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য চলার বিধান পৃথিবীর দেশগুলোতে নেই। বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার বেআইনি খারাপ নজির সৃষ্টিকারী সরকার। তারা জিঘাংসার নতুন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে, এটিও এর একটি। যেমন বন্দুকের জোরে দেশের প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে ও পদত্যাগ করতে বাধ্য করা এবং বিচারক মোতাহার হোসেনকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার নজির সারা দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তেমনি অসুস্থতাজনিত কারণে বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে রায় দেয়া হলে তাও হবে পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এই রায় হতে যাচ্ছে তোষের আগুনের মতো জ্বলতে থাকা প্রতিহিংসা পূরণের চাঞ্চল্যে।’

জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে এবং মানুষকে বোবা বানিয়ে দিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর এবার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার নামে আরেকটি ভয়ঙ্কর আইন করতে যাচ্ছে সরকার। গত পরশু মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’

‘খসড়া আইনটিতে বলা হয়েছে-রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যাপারে বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রকাশ করলে তিন বছরের জেল ও পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা। টক শো’তে মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রচার করলেও একই সাজা। নীতিমালায় আরও বলা আছে-কমিশন গঠন করে রেডিও-টেলিভিশন-অনলাইনসহ সব মিডিয়ার লাইসেন্স দেয়া হবে এবং যেকোনো কারণে তাদের লাইসেন্স তারা বাতিল করতেও পারবে।’

রিজভী বলেন, ‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও ভয়াবহ দুঃশাসন ও মহাদুর্নীতিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এই কারণে তারা সবসময় আতঙ্কে ভোগে যে, কোন সময়, কোন গণমাধ্যমে, কোন ফাঁকে তাদের মহাদুর্নীতির মহা কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস হয়ে পড়ে। ভোটারবিহীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিজেও একাধিকবার গণমাধ্যমের সামনে বলেছেন- ‘কিছু মিডিয়া ডকুমেন্টস তৈরি করে বসে আছে আমাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করার জন্য।’ সরকার যদি এতই স্বচ্ছ হয়ে থাকে তাহলে সেই সমস্ত ডকুমেন্টের জন্য এত শঙ্কিত কেন? দুর্নীতির খবর চেপে রেখে নিজেদেরকে নিরাপদ করার জন্যই কি মিডিয়ার মুখ বন্ধ করতে একের পর এক ভয়ংকর কালো আইন করে যাচ্ছে সরকার?’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে অবৈধ সরকারের কালো আইন সম্প্রচার নীতিমালার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সমস্ত কালা কানুনের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।’

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘পুলিশ ভয়, আওয়ামী মাস্তান ভয়, মৃত্যু ভয় মুছে অমিত বিক্রমে আজ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ দম বন্ধ করা এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। বুকের পাটা শক্ত করে দেশ ও গণতন্ত্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। খুব তাড়াতাড়ি আলোককণায় উদ্ভাসিত মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনে জনমনকে স্বস্তি ও নির্ভয় করতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/বিইউ/জেবি)