লালমনিরহাটে একই স্থানে মসজিদ-মন্দির!

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৪৩

লালমনিরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাআমস

‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’- এ কথাটির যথার্থই প্রমাণ মেলে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের একই স্থানে রয়েছে মসজিদ ও মন্দির। লালমনিরহাট শহরের পুরাণ বাজারে পুরাণ বাজার জামে মসজিদ ও পুরাণ বাজার কালীবাড়ি দূর্গা মন্দির একই উঠানে এ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে একই উঠানে মসজিদ-মন্দির হলেও উভয় ধর্মেও মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে স্ব স্ব ধর্ম পালন করে আসছে। ধর্ম পালন নিয়ে কখনও কোন বাকবিতণ্ডা পর্যন্ত হয়নি বলে স্থানীযদের দাবি। উভয় ধর্মেও শালীনতা বজায় রেখেই একই উঠানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের মানুষ। শুধু নামাজ বা পূজা অর্চনাই নয়, উভয় ধর্মের সকল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শান্তিপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়েই পালন করছেন এখানকার মানুষ।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ। যার অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে দেশের নানা প্রান্তে। এমনই একটি দর্শনীয় স্থান লালমনিরহাট জেলা শহরের পুরাণ বাজার এলাকায় এক উঠানেই মসজিদ ও মন্দির বেশ জনপ্রিয়।

ভোরে ফজরের সময় মোয়াজ্জিমের কন্ঠে মিষ্টি আজান শেষে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে চলে যাওয়ার পরে পাশেই মন্দিরে শোনা যায় উলু ধ্বনি! এমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন বহন করছে লালমনিরহাট শহরের শতবর্ষী মসজিদ ও মন্দির দুটি।

মুসল্লি আব্বাস আলী জানান, এখানে ধর্ম নিয়ে নেই কোন হানাহানি ও মতবিরোধ। এসব ছাড়াই এখানে পারাস্পারিক সহযোগিতায় ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষরা। ফলে সম্প্রীতির এই স্থানটি দেখতে বিশেষ করে দুর্গাপূজার সময় দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন এখানে।

লালমনিরহাট পুরান বাজার কালীবাড়ি দুর্গা মন্দিরের সভাপতি জীবন কুমার সাহা জানান, ১৮৩৬ সালে দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পুরান বাজার এলাকা অনেকের কাছে কালিবাড়ি নামে পরিচিত হয়ে উঠে। এরপর মন্দির প্রাঙ্গণে ১৯০০ সালে একটি নামাজ ঘর নির্মিত হয়। এ নামাজ ঘরটিই পরবর্তীতে পুরাণ বাজার জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে।

এরপর থেকে কোন বিবাদ ও ঝামেলা ছাড়াই সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ।

দূর্গাপূজার সময় ঢাক ঢোল ও বাদ্য যন্ত্র বাজানো নিয়ে সমস্যা হয় কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, আমরা মসজিদ ও মন্দির কমিটির সদস্যরা বসে ঠিক করে নেই কখন এবং কিভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা হবে। নামাজের সময়গুলোতে সকল প্রকার বাদ্য বাজনা বন্ধ রাখা হয় এবং নামাজ শেষে মসুল্লিরা দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করে পূজারীদের জন্য সুযোগ করে দেন। এটাই এখানে নিয়ম।

পুরাণ বাজার জামে মসজিদ সহকারী ইমাম মাওলনা জানান, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। উভয় ধর্মের লোকদের সম সুযোগ দিয়েই এখানে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা হয়। তাই ধর্ম পালনে কারও কোন সমস্যা হয় না।

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)