‘মাসুদা ভাট্টিকে ফোনে দুঃখ প্রকাশ করেছি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:৫৯ | প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১০:১০
একাত্তর জার্নাল, যে অনুষ্ঠানে নারী সাংবাদিক সম্পর্কে কটূক্তি করেন মইনুল হোসেন

টেলিভিশন টক শোতে নারী সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলে গালি দেয়ার লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মইনুল হোসেন। একাত্তর টিভির সম্পাদক বরাবর পাঠানো লিখিত বক্তব্যে তিনি সরাসরি দুঃখ প্রকাশ কিংবা ক্ষমা প্রার্থনা না করলেও জানিয়েছেন, মাসুদা ভাট্টিকে ফোন করে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

গত মঙ্গলবার রাতে একাত্তর টেলিভিশনের টক শোতে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন মইনুল হোসেন। এ সময় তিনি ওই নারী সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলে গালি দেন। তার এই আচরণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সবখানে সমালোচনার ঝড় উঠে। নারী নেত্রীরা তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।

বুধবার মইনুল হোসেন সম্পাদিত নিউ নেশন পত্রিকার প্যাডে অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে মইনুল হোসেন লিখেছেন: ‘গত রাতে ৭১ জার্নাল প্রোগ্রামে একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় আমার বুঝতে ভুল হয়েছে। আমি মনে করেছি তিনি আমাকে জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে ঐক্য প্রক্রিয়ায় ঢুকেছি বলে মন্তব্য করেছেন। এ ধরনের বক্তব্য নিশ্চয় আমার রাজনৈতিক সততা ও চরিত্রের ওপর চরম আঘাত।’

মইনুল হোসেন লিখেন: ‘আসলে তিনি অন্যদের পক্ষে এ ধরনের বক্তব্য রেখেছেন। আমি এতে অত্যন্ত অপমান বোধ করি। ক্ষুব্ধ হয়ে রাগের মাথায় তার সম্পর্কে বেফাঁস কিছু মন্তব্য করি। যে আমার অজান্তেই হয়েছে। সে জন্য আমি মাসুদা ভাট্টিকে ফোন করে নিজেই দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

একাত্তর টিভি কর্তৃপক্ষ বরাবর তিনি লিখেন, ‘আমি আশা করবো, আমার বক্তব্যটি যথাযথভাবে সম্প্রচার করে অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাবেন।’

চিঠিতে মইনুল হোসেন তার পরিচয় হিসেবে লিখেছেন, সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি, দি নিউ নেশন।

কী ঘটেছিল সেদিন

মঙ্গলবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তরের টক শোতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছিল। আর লাইভে যোগ দেন মইনুল হোসেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা গত ১৩ অক্টোবর ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেয়ার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার পর ফেসবুকে ২০০৫ সালের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে যায়। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, শিবিরের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে আর তিনি মনে করেন শিবির দেশ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।

মাসুদা ভাট্টি সামাজিক মাধ্যমে উঠা প্রশ্নটিই জানতে চান মইনুলে হোসেনের কাছে। বলেন, ‘ঐক্য ফ্রন্টে আপনি একজন নাগরিক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। এটা আপনার দাবি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, আপনি সেখানে জামায়াতের একজন প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত থাকেন। আসলেই আপনি জামায়াতের প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত থাকেন কি না’।

প্রশ্ন শুনেই ক্ষেপে যান মইনুল। উত্তেজিত কণ্ঠে মাসুদাকে বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনাকে চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।’

‘আমার সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততার কোনো প্রশ্ন নাই। আপনি যে প্রশ্ন করেছেন, তা আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। অন্য প্রশ্ন করেন। শিক্ষিত ভদ্র মহিলা হিসেবে অন্য প্রশ্ন করেন।’

এসময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানালে মইনুল হোসেন বলেন, ‘আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে জামায়াতের লোক। আপনি সেটা বন্ধ করছেন না কেন?’

সঞ্চালক মইনুলের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাকে জামায়াতের লোক বলা হয়নি। বলা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরকমটাই বলা হয়ে আসছে’। এসময় মাসুদা ভাট্টি মঈনুলকে বলেন, ‘আপনি শিবিরের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। সে অনুষ্ঠানে আপনি বলেছিলেন যে, আপনার সঙ্গে শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সে বক্তব্য এখন সব জায়গায় দেখানো হচ্ছে। এ কারণেই এ প্রশ্ন মানুষ করছে যে, আপনি জামায়াতের হয়ে এখানে উপস্থিত থাকছেন কি না।’

এরপর মাসুদাকে মঈনুল প্রশ্ন করেন ‘ আপনি কার প্রতিনিধি হয়ে আসছেন’।

মাসুদা বলেন, ‘কারও প্রতিনিধি হয়ে নয়, আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে এই প্রশ্ন করেছি।’

পরে লাইভে এসে বিকল্পধারার নেতা মাহী বি চৌধুরী মইনুলের আচরণ নিয়ে উষ্মা জানান। বলেন, মইনুল তার বাবার বসয়ী। তার মতো একজন মানুষ যদি এই ভাষায় কথা বলে, তাহলে সেটা জাতির জন্য লজ্জার।

(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

গণমাধ্যম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা