আইয়ুব বাচ্চুর সুপারহিট যত গান

আরিফ হাসান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:১৮ | প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:৩২

আইয়ুব বাচ্চু। নক্ষত্রসম একটি নাম। একটি উজ্জ্বলতম ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বও। চার দশকেরও বেশি সময় তিনি নিজেকে বিলীন করে দিয়েছিলেন সুর ও সঙ্গীতে। তার ‘রূপালি গিটারে’ বুঁদ হয়নি এমন শ্রোতা মেলা ভার। কিন্তু সুরের মায়াজাল ছিন্ন করে সত্যিই চলে গেছেন তিনি। ভারতীয় উপমাহাদেশে গিটার বাদনে তার ছিল শিখর ছোঁয়া অবস্থান। শারীরিকভাবে তার আর দেখা না মিললেও তিনি থাকবেন বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতপ্রিয় অগণিত শ্রোতাদের মনে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে এই অসামান্য সঙ্গীতপ্রতিভার। তার মৃত্যুতে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের আকাশে যেন নেমে এসেছে আঁধার। ঝরে পড়েছে হৃদয়ছোঁয়া সুরের দিশারীময় সবচেয়ে উজ্জ্বলতম তারকাটি।

১৯৬২ সালে জন্ম নেয়া চট্টগ্রামের সন্তান আইয়ুব বাচ্চু উপমহাদেশের একজন সেরা গিটারিস্ট হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তার হঠাৎ মৃত্যুতে বাংলা সঙ্গীত জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শোক জানাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের নামিদামি সঙ্গীতশিল্পীসহ বিভিন্ন অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা। এছাড়া ফেসবুকে এই কৃতী সঙ্গীতশিল্পীর ভক্তরা নানা ভাবে শোক প্রকাশ করছেন। তার মৃত্যুতে যেন এক অব্যক্ত কান্না স্তব্ধ করে দিয়েছে ভক্ত-শ্রোতাদের হৃদয়।

এর আগে ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর ফুসফুসে পানি জমার কারণে অসুস্থ হলেও চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন এই কিংবদন্তী। কিন্তু এবার আর ফিরলেন না। চলে গেলেন চিরতরে।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তার জনপ্রিয়তা ছিল উত্তুঙ্গে। আট থেকে আশি সব বয়সী ভক্ত-শ্রোতারাই তার গানে ডুব দেয়। বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। রেখে গেছেন এমন কিছু কালজয়ী গান, যা বারবার শুনতে হবে।

১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডদলের সঙ্গে আইয়ুব বাচ্চু সঙ্গীত জীবনের যাত্রা শুরু করেন। ‘হারানো বিকেলের গল্প’ নামের গানে প্রথম কণ্ঠ দেন তিনি। পরে ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এক দশক ‘সোলস’ ব্যান্ডের হয়ে গান করেন তিনি।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। তবে অ্যালবামটিতে তেমন সাফল্য আসেনি। সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’র মাধ্যমে। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত এই অ্যালবাম এই শিল্পীর গোটা জীবনেই একটা মাইলফলক করে। এর পরের ইতিহাস সকলেরই জানা।

একে একে সুপারহিট সব গান উপহার দিয়ে গেছেন কিংবদন্তী এই কণ্ঠশিল্পী। ৪০ বছরের দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে তার সুপারহিটের গানের সংখ্যা কত?- প্রশ্নের উত্তর দিতে ক্যালকুলেটর নিয়ে বসতে হবে। কেননা হাতেগোনা কয়েকটি বাদে তার গাওয়া প্রায় সব গানই সুপারহিট।

প্রথমেই আসা যাক ‘চলো বদলে যাই’ শিরোনামের গানটির কথায়। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ‘সুখ’ অ্যালবামের এই গানটি আইয়ুব বাচ্চুর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে বিবেচিত। কণ্ঠ দেয়ার পাশাপাশি গানটির কথা এবং সুরও তার নিজের। সেই নব্বইয়ের দশক থেকেই এমন কোনো লাইভ অনুষ্ঠান নেই, যেখানে দর্শক-শ্রোতারা এই গানটি গাওয়ার জন্য আইয়ুব বাচ্চুকে অনুরোধ করেননি।

‘এই রুপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাব দূরে বহুদূরে। সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো গোপন করে’। গানটিতে গিটারের প্রতি আইয়ুব বাচ্চুর ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। ‘রূপালি গিটার’ শিরোনামের এই গানটিও শিল্পীর ‘সুখ’ অ্যালবামের। এটিও এই শিল্পীর গাওয়া সর্বাধিক জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

১৯৯৫ সাল। বের হয় আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অবিহিত করা হয় এটিকে। কারণ এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, এবং ‘আমিও মানুষ’ শিরোনামের গানগুলো এখনো দাঁগ কাটে দেশের সকল গানপ্রেমীদের মনে।

এছাড়া বিভিন্ন অ্যালবামে গাওয়া ‘মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেনো’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘পত্রমিতা বন্ধু তোমায় বেসেছি যে ভালো’, ‘এক আকাশের তারা তুই একা গুনিস নে’ ‘আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে’, ‘চোখ বুজিলে হবে অন্ধকার’, ‘সাক্ষী থাকুক বিশাল আকাশ’, গানগুলোও যে কোনো লাইভ অনুষ্ঠান ও কনসার্টে ঝড় তোলার পক্ষে যথেষ্ট।

বাংলা চলচ্চিত্রেও আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় গানের সংখ্যা কম নয়। সিনেমার জন্য তিনি প্রথম গান গেয়েছিলেন ১৯৯৭ সালে। ওই বছর কাজী হায়াত পরিচালিত এবং মান্না-মৌসুমী অভিনীত ‘লুটতরাজ’ ছবির ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ গানটিতে প্রথম কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। সেই গানে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছিলেন কনকচাঁপা। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল কনকচাপার সঙ্গে দ্বৈতভাবে গাওয়া তার ওই গানটি।

সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে আইয়ুব বাচ্চুকে দিয়ে আবার চলচ্চিত্রে গান করান পরিচালক কাজী হায়াত। ওই বছরে মুক্তি পাওয়া ‘আম্মাজান’ ছবির ‘আম্মাজান আম্মাজান তুমি বড়ই মেহেরবান’ গানটিতে কণ্ঠ দেন বাচ্চু। মান্না ও মৌসুমী অভিনীত সে ছবি তো হিট হয়েছিলই, দর্শক তারচেয়েও বেশি মশগুল হয়েছিল আইয়ুব বাচ্চুর এই গানটির প্রতি। ‘আম্মাজান’ ছবিতে তার আরো একটি গান ছিল। সেটিও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/এএইচ/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :