আফগানিস্তানে যুদ্ধের চেয়ে খরায় বেশি ক্ষতি
আফগানিস্তানে কয়েক মাস ধরে চলা খরায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে৷ জাতিসংঘের তথ্য মতে, দেশটিতে এ বছর সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের যুদ্ধের কারণে যত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ঘর ছেড়েছেন খরার কারণে৷
খরার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩০ লাখ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে উল্লেখ করে জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, এই মানুষগুলো সহায়তা না পেলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে৷
তীব্র খরায় আফগানিস্তানের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের আড়াই লাখের বেশি মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ হেরাতসহ বিভিন্ন শহরের উপকণ্ঠে তাঁবু গেড়ে ঠাঁই নিয়েছেন তারা৷ খবর ডয়চে ভেলের।
হেরাতের একটি আশ্রয় শিবিরে চার সন্তান নিয়ে আসা ফারইয়াব প্রদেশের এক নারী বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে তাদের এলাকায় বৃষ্টি হয় না৷ সবকিছু শুকিয়ে গেছে৷ ‘ছেলে-মেয়েদের খাওয়ানোর মতো পানিও আমাদের নেই৷ এর উপর আবার আর্মির সঙ্গে তালেবানের লড়াই চলছে৷ ভয়াবহ অবস্থা৷’
বাদগিস প্রদেশের ঘোরমাচ জেলা থেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয় শিবিরে আসা ৮০ বছরের মুরাদ খান ইশাকজাই জানান, জীবনে দ্বিতীয়বার ঘর ছেড়েছেন তিনি৷ ১৫ বছর আগে একবার খরার কারণে স্বল্প সময়ের জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি৷ তবে এবারই ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি৷ খেত, ফসল সব নষ্ট হয়ে গেছে৷ ‘এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে খারাপ অবস্থা’৷
হেরাতের শিবিরে ছয় সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেওয়া নব খান জামানজাই বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে চলা যুদ্ধকে আমরা এত বড় করে দেখিনি৷ আমরা ভালোই ছিলাম, চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম৷ কিন্তু খরার কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে আছে৷’
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সহায়তা সমন্বয়ক টোবি লানজের বলেন, বাস্তুচ্যুত এসব মানুষ দিনে মাত্র একবেলা খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছেন৷ পরিস্থিতি তাদের ধারণার চেয়ে অনেক খারাপ৷ সামনের শীত মৌসুমে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতে পারে৷
শিবিরে আশ্রয় নেওয়া অনেকে বলেছেন, সঙ্গে যতটুকু আনা সম্ভব তাই নিয়ে রওনা দিলেও পথে তাও খোয়া গেছে৷ এখন টাকা-পয়সা হাতে নেই৷ মাসের পর মাস রুটি আর চা খেয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে তাদের৷
জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সহায়তা সমন্বয় দপ্তর-ওসিএইচএ’র ভাষ্যমতে, শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার শিশুর জরুরি খাদ্য সহায়তা দরকার৷ এদের অধিকাংশই দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের এবং তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সি ৩৩ হাজার ২০০ শিশুর ‘জীবনরক্ষাকারী’ চিকিৎসা দরকার৷
ঢাকাটাইমস/১৯অক্টোবর/একে