মহেশখালীতে ছয় বাহিনীর ৪৩ দস্যুর আত্মসমর্পণ

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:১৪ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৩৬

ইসমত আরা ইসু, ঢাকাটাইমস

দস্যুবৃত্তি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে বঙ্গোপসাগর দাপিয়ে বেড়ানো ছয়টি বাহিনীর ৪৩ জন সদস্য। ৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি সাত হাজার  ৬৩৭টি গুলিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে তারা।

শনিবার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়নের (র‌্যাব) কাছে তারা আত্মসমর্পণ করে। এ উপলক্ষ্যে মহেশখালীতে আয়োজন করা হয় এক অনুষ্ঠানের। মহেশখালীর আদর্শ স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

আত্মসমর্পণকারী ছয়টি বাহিনী হলো- আঞ্জু বাহিনী, রমিজ বাহিনী, কালাবদা বাহিনী, জালাল বাহিনী, আইয়ুব বাহিনী ও আলাউদ্দিন বাহিনী। 

অনুষ্ঠানে সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন ও জেলা পুলিশ সুপার এবি এম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মহেশখালীর উন্নয়নে কোনো জলদস্যু এবং বনদস্যু  থাকতে দেয়া হবে না। সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় মহেশখালীকে সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে। সুন্দর এবং একটি পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়তেই সরকারের এই উদ্যোগ।’

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘শুধু জলদস্যু নয় কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করতেও সাধারণ মানুষের সহযোগিতা নিয়ে র‌্যাব কাজ করবে।’

র‌্যাব সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সরকারি বাহিনীগুলো জলদস্যুদমনে কঠোর অবস্থানে ছিলো। যে কোনো ভাবে বঙ্গোপসাগরকে নিরাপদ রাখার পাশাপাশি জলদস্যুদের দমন ছিলো এর কারণ। বেশ কয়েকটি অপারেশনের মাধ্যমে কয়েকজন জলদস্যুকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করতেও সক্ষম হয়। কিন্তু তাদের মূলোৎপাটন করা সম্ভব হচ্ছিল না।

ফলে অপারেশন আরো জোরদার করা হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিশ্বস্ত লোক মারফত র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পাঠায় কয়েকটি দুর্ধর্ষ জলদস্যু বাহিনী। র‌্যাব সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় জলদস্যুরা।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই মহেশখালী উপজেলা দেশব্যাপী সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত। কয়েকবছর ধরে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী চ্যানেল সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক হারে বেড়ে যায় জলদস্যুতা। জলদস্যুদের হাতে প্রাণ হারায় নিরীহ মাঝি-মাল্লা। অনেক সময় দস্যুরা সাগর থেকে ট্রলারের মাছ লুটের পাশাপাশি ট্রলার লুট করার পাশাপাশি মাঝি-মাল্লাদের গোপনস্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনা হয় মাঝি-মাল্লাদের। প্রায় এক দশক ধরে ট্রলার মালিক এবং জেলেদের দাবি ছিলো বঙ্গোপসাগরকে জলদস্যুমুক্ত করা।

বর্তমানে মহেশখালীতে বাস্তবায়নাধীন বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প। বিনিয়োগ করা হচ্ছে কয়েক লাখ কোটি টাকা। বিদেশি এই বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন অভ্যন্তরিন নিরাপত্তা। মহেশখালীর জলদস্যুরা ছিলো অভ্যন্তরিন নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাদের রয়েছে দেশিয় অস্ত্র তৈরির কারখানা। অধিকাংশ সময় বঙ্গোপসাগর এবং গভীর অরণ্যে বিচরণ করে তারা। ফলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর পক্ষে এই দুর্ধর্ষ বাহিনীগুলোর সদস্যদের আটক করা সম্ভব হচ্ছিল না। 

ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/ডিএম