‘আস্থার অভাবে বিদেশিদের কাছে ধর্ণা’

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:২৬ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব অলিউর রহমান বলেছেন, ‘আমি বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেছি। পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসেও চাকরি করেছি। কিন্তু কোথাও কূটনৈতিকদের কাছে ধর্না দেওয়ার বিষয়টি দেখেনি।  ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। আমরা কেন রাজনৈতিক কারণে বিদেশিদের কাছে ধর্না দেব?’

শুক্রবার রাতে বেসরকারি সময় টেলিভিশনের টকশোতে এ প্রশ্ন তোলেন তিনি। পারমিতা হিমের সঞ্চালনায় টকশোতে শিক্ষাবিদ তারেক শামছুর রেহমান বলেন, ‘বিদেশিদের কাছে যাওয়ার প্রক্রিয়া অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। কিছু হলেই আমরা বিদেশিদের কাছে যাই। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিদেশিরা আমাদের রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে থাকেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন,  ‘একটি নতুন জোট (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট), তারা যে ঐক্যের কথা বা যে ধরনের রাজনীতি বা গণতন্ত্রের কথা বলছেন, সেখানে শুরুতেই বিদেশিদের কাছে মাথানত করা অত্যন্ত আপত্তিকর। বিদেশিরা যেভাবে প্রশ্ন করছেন, আপনাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন- এই প্রশ্ন অত্যন্ত আপত্তিকর। তারা প্রভুদের মত প্রশ্ন করছেন, আমরা তার উত্তর দিচ্ছি, এটি একটি অপকৌশল। এই চর্চাটি বাংলাদেশের জন্য অসুস্থ প্রবণতা। জনগণকেও অপমানিত করা হচ্ছে।’

অলিউর রহমান বলেন, ‘৪৭ বছরের বাংলাদেশ, আমরা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অনেকদূর এগিয়েছি। আজ বাংলাদেশ একটি মডেল।  এ অবস্থায় কামাল হোসেন বিদেশিদের কাগজ পড়ে শোনাচ্ছেন, এতে লজ্জায় আমাদের মাথানত হয়ে যায়।’

একটি ঘটনার বর্ণনা করে অলিউর রহমান বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে ভারতে বিশ্বব্যাংকের একজন প্রতিনিধি গণতন্ত্রের ব্যাপারে মন্তব্য করেছিলেন। তার সাতদিনের মাথায় তাকে ভারত ছাড়তে হয়েছিল। ভারত বলেছিল, আমাদের গণতন্ত্রের ব্যাপারে কথা বলার তুমি কে?’

দর্শকের প্রশ্নের জবাবে তারেক শামছুর রেহমান বলেন, ‘মূল বিষয়টি হচ্ছে, ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বিদেশিদের কাছে গেলেন আস্থার অভাবে। কেন বিদেশিদের কাছে যাবেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যাবেন? আপনারা জনগণের কাছে যান, তারা ভোট দিলেই তো আপনারা সরকার গঠন করতে পারবেন।’

‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি মনে করে যে, বিদেশিরা তাদের ক্ষমতায় বসাবেন, তবে তা বোকার স্বর্গে বসবাস করা হবে।’

দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ অসুস্থ ব্যাপার, একটি রাজনৈতিক দলের নিজের শক্তির উপরে আস্থাহীনতার ব্যাপার। নেতৃত্বে বা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা থাকলে বিদেশিদের উপরে নির্ভরশীল হতে চায়।’

‘বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারত বা কোনো দেশের প্রভাব নেই। বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে, তারা কোনো দেশের কাছে মাথানত করবে না।’  বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গত মাসে জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। তার এই বৈঠক কতটুকু যুক্তিযুক্ত- উপস্থাপিকা পারমিতা হিমের এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক শামছুর রেহমান বলেন, ‘এটা একটি বাজে দৃষ্টান্ত। বিএনপির বক্তব্য, তারা আমন্ত্রিত হয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। তারা যার সঙ্গে দেখা করেছেন, তিনি জাতিসংঘের নিম্মশ্রেণীর কর্মকর্তা। এটা করে তিনি একটি খারাপ বার্তা দিয়েছেন।’

অলিউর রহমান বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী, তাদের ধ্বংস করতে চায় অপশক্তি, যেমন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/এএ/এআর)