বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীরা বছরে কত খরচ করে?
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরের বাসিন্দা শামীমা আক্তারের স্বামী গত আট বছর যাবত ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। প্রথম দুই বছর স্বামীর জন্য গড়ে এক হাজার টাকা খরচ হলেও, দিনের পর দিন সে খরচ বেড়েছে।
এখন তার প্রতিমাসে খরচ হয় প্রায় নয় হাজার টাকার মতো। কারণ, ডায়াবেটিসের কারণে আরো নানাবিধ শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়েছে তার। এ বিষয়ে বারডেম হাসপাতালে বসে হতাশা প্রকাশ করে শামীমা আক্তার জানান, 'প্রতিমাসে তারে এখানে তিন-চাইর বার আনাই লাগে'।
বাংলাদেশে যারা ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা নেন তাদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৭২ ভাগ ট্যাবলেট খান এবং প্রায় ১৭ ভাগ ইনসুলিন নেন। বাকি ১১ শতাংশের দুটোই প্রয়োজন। বাংলাদেশ ডায়াবেটিস এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং চিকিৎসক অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলছেন, সকল ডায়াবেটিক রোগীকে ট্যাবলেট খেতেই হয়। তিনি বলেন, 'যেহেতু এর সাথে অন্যান্য রোগ থাকে, এ ধরণের একটি রোগী কোন মতেই প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার নিচে চলতে পারবে না'।
বারডেম হাসপাতালটি বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। প্রতিদিন সকাল থেকে শত-শত মানুষ এখানে আসেন চিকিৎসার জন্য। প্রায় প্রতিমাসেই এখানে আসেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রাবেয়া আক্তার। তিনি বলেন, বছর দুয়েক আগে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার পর এখন নিয়ম করে দুই বেলা ঔষধ খেতে হয়। এখন প্রতিমাসে তার প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো ঔষধ কিনতে হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশনের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। একজন রোগীর যদি প্রতিমাসে গড়ে দুই হাজার টাকা খরচ হয়, তাহলে সে হিসেবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা বাবদ প্রতিমাসে বাংলাদেশে খরচ হচ্ছে প্রতি মাসে ১৪ শত কোটি টাকা এবং প্রতি বছরে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, সচেতনতার মাধ্যমে যদি ডায়াবেটিসের বিস্তার কমানো সম্ভব না হয়, তাহলে এ রোগের জন্য আগামী ১৫-২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ হবে। চিকিৎসকরা বলেন, ডায়াবেটিস অন্য আরো নানা ধরনের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে চিকিৎসা ব্যয় বাড়তেই থাকে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বলছে, শারীরিক পরিশ্রম এবং খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন না হলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বড় দুর্যোগের নিয়ে আসছে ডায়াবেটিস। এ রোগের চিকিৎসা নিতে মানুষের আর্থিক চাপ যেমন বাড়ছে তেমনি মানুষের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। যেটি দেশেও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সূত্র: বিবিসি
ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/একে