নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বেপরোয়া ইলিশ শিকার

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:০২ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:১৯

এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ি প্রতিনিধি

রাজবাড়ীতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পদ্মায় অবাধে ইলিশ শিকার করছে অসাধু জেলেরা। ইলিশ ধরার অভিযোগে বেশ কয়েকজন জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে অনেক ইলিশ মাছ। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে জব্দ করা কারেন্ট জাল। এতিমখানাসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়েছে জব্দ করা মাছ।

রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা ও কালুখালি উপজেলার পদ্মা নদীর বিভিন্ন এলাকায় এসব ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। কখনো কখনো এসব জেলেরা অভিযানকারী দলের উপর মারমুখী হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাজবাড়ির গোদারবাজার এলাকায় আলাককালে জেলেরা জানায়, পেটের দায়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও দন্ড মেনে নিয়েই তারা পদ্মায় অভিযানিকদলের ফাঁকি দিয়ে ইলিশ শিকার করছেন।

গত ১৪ অক্টোবর জেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে রাজবাড়ি-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী জানান, জেলা মৎস্য অফিসের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইয়াকুব আলী ও ডিসি অফিসের স্প্রিড বোর্ড চালক নুরুন্নবী মা-ইলিশ শিকার বন্ধের অভিযানের খবর প্রতিদিন অভিযান শুরুর আগেই জানিয়ে দিচ্ছেন।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর এই ২২ দিন নদীতে ইলিশ মাছ ধরায় নিষেধাঞ্জা আরোপ করেছে সরকার। তা সত্ত্বে¡ও জেল জরিমানার তোয়াক্কা না করে প্রতিদিন দেদারছে ইলিশ মাছ ধরতে পদ্মা নদীতে নামছে জেলেরা।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে মা ইলিশ মাছ ধরার অপরাধে গত শনিবার ৪০ জন জেলেকে আটক করে প্রত্যেককে ১৫ দিন করে কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সাথে ১৩৫ কেজি ইলিশ মাছ ও ৭৫ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। জব্দকৃত ইলিশ মাছ বিভিন্ন এতিমখানা, মাদ্রাসা ও দুস্থ মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। কারেন্ট জাল আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সেদিন বেলা একটার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দুর্গম চর কর্নেশন এলাকায় পদ্মায় ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে জেলেদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে অভিযানকারী দলের সদস্যরা। এ সময় অভিযানকারী দলের সদস্যরা পিছু হটলেও পরে বিপুল সংখ্যক ফোর্স নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি এজাজ শফীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে তার আগেই সেখান থেকে জেলেরা পালিয়ে যায়। এ সময় সেখান থেকে ১ জেলেকে গ্রেপ্তার, ৫০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও বেশ কয়েকটি জেলে নৌকা জব্দ করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৎস্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এর আগেও পদ্মায় অভিযান চালাতে গিয়ে সংঘবদ্ধ জেলেদের রোষানলে পড়েন তিনি।

জানা গেছে, আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে ইলিশ শিকার ও বেচা-কেনায় সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গোয়ালন্দ উপজেলা, মানিকগঞ্জের শিবালয় ও পাবনার বেড়া অঞ্চলের জেলেরা পদ্মা-যমুনা নদীতে মাছ শিকার অব্যাহত রেখেছে। তবে এক্ষেত্রে তারা পদ্মার অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকায় ইলিশ মাছ শিকার করছে। অভিযান দলকে এড়িয়ে যেতে তারা দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকা এড়িয়ে নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে গিয়ে মাছ শিকার করছে। শিকার করা মাছগুলো তারা কেউ কেউ গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন। আবার বিভিন্ন উপায় কেউ কেউ সংরক্ষণও করছেন।

নিষেধাজ্ঞাকালীন নিরাপদে শিকার করা ইলিশ বেচাকেনার জন্য এক শ্রেণির জেলে গোয়ালন্দ উপজেলার দুটি দুর্গম স্থানে বিশেষ আয়োজন করেছে। সেখানে তারা নির্বিঘ্নে নৌকা-জাল রাখাসহ ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবস্থাও করেছে। সেখান থেকে সময় সুযোগ মত তারা নদীতে ইলিশ শিকার করে থাকে। এ রকম একটি স্থানেই শনিবার পুলিশ উপস্থিত হলে ওই সকল জেলেদের রোষানলে পড়ে।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজ শফী জানান, শনিবার পদ্মাপাড়ের একটি স্থানে সীমিত ফোর্স নিয়ে অভিযান চালাতে গেলে সেখানে বিপুল সংখ্যক জেলে দেখে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ পিছু হটে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে বেশিরভাগ দুর্বৃত্ত সেখান থেকে পালিয়ে গেছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবায়েত হায়াত শিপলু জানান, বিপুল সংখ্যক দুর্বৃত্ত পদ্মায় ইলিশ শিকারের চেষ্টা করছে এমন খবরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখান থেকে আটক এক জেলেকে ১৫দিনের কারাদ- ও ৫০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। এ সময় জেলেদের বেশ কয়েকটি নৌকা ধ্বংস করা হয়।

ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/প্রতিনিধি/এমআর