মন্ত্রীকে পিষে মারলেও কাজ হবে না: প্রধানমন্ত্রী
সড়ক দুর্ঘটনার জন্য জন্য পথচারীদের অসচেতনভাবে রাস্তা পারাপারকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, তারা সচেতন না হলে মন্ত্রী বা অন্য কোনো নেতাকে পিষে মারলেও কোনো কাজ হবে না।
সৌদি আরব সফর শেষে গণভবনে করা সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিরাপদে রাস্তা পারাপারে মানুষকে সচেতন করতে গণমাধ্যমকে ব্যাপক প্রচারেরও আহ্বান জানান।
আজই দেশে সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে নিরাপদ সড়ক দিবস। গত জুলাইয়ের শেষ দিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর এই প্রথম দিবসটি পালিত হচ্ছে।
তবে ওই ব্যাপক আন্দোলনের পরও সড়কে মৃত্যু সেভাবে কমেনি বলেই তথ্য মিলছে। গত তিন মাসে ৯৪৭ জন নিহত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্য জানান মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক রাজা। বলেন, ‘আপনার কেবিনেটে মালিক সমিতি এবং শ্রমিক সমিতির দুইজনই নেতাই কেবিনেটে আছে। তাদেরকে ঠিকমত জবাবহিদিতার আওতায় আনা না গেলে মনে হয় পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী তোলেন পথচারীদের যেভাবে খুশি সেভাবে রাস্তা পারাপারের প্রবণতার বিষয়টি। বলেন, ‘আপনি কি এটা বলতে পারবেন আমাকে এই যে অ্যাক্সিডেন্টগুলো হলো, তা কী কারণে হলো, কীভাবে হলো। যারা অ্যাক্সিডেন্টের শিকার হলো, তারা রাস্তার কোথায় ছিল? সেটা একটু আমাকে বলেন প্লিজ।’
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার তো ধারণা ছিল এই ঘটনার পর পথচারীরা সচেতন হবে। কিন্তু সেটা কি সচেতন হয়েছে?’
‘না হয়নি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’- বলেন সাংবাদিক রাজা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেন হয়নি, আমাকে জবাব দেন। আপনাদেরই পত্রিকায়ই ছবি দেখছি। আপনারাই কোনো কোনো পত্রিকায় লেখছেন বা দেখাচ্ছেন যে গাড়ি চলছে, ওই গাড়ির ফাঁক দিয়ে, ভালো, শিক্ষিত মানুষ ফাঁকফুঁক দিয়ে বের হচ্ছে। তখন যদি কেউ অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়, আপনি কাকে দোষ দেবেন?’
‘পাশে ফুটপাত বা ফুটওভার ব্রিজ অথবা আন্ডারপাস রয়ে গেছে। বাচ্চা নিয়ে দৌড় মেরে রাস্তা পার হতে যাচ্ছে, তখন যদি অ্যাক্সিডেন্টটা হয়, তখন কাকে দোষ দেবেন? সেটা আগে বলেন।’
‘সচেতনতাটা কার?’-এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমার সড়ক পরিবহনে কে আছেন, মন্ত্রী কে আছেন, তাদেরকে পিষে মারলেও তো, আমাদের তো স্বভাব পরিবর্তন হচ্ছে না যারা রাস্তায় চলছে।’
‘আমরা তো ড্রাইভারদের দোষ দিয়েই খালাস প্রতিটি ক্ষেত্রেই। কিন্তু পথচারীদেরও যে সড়ক নিয়ম মেনে চলা উচিত, এ ব্যাপারেও তো সচেতনতা দরকার।’
‘আজকে ঢালাওভাবে অভিযোগ দিয়ে দিলেন, যে মন্ত্রী সড়ক, মালিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের ধরে শাস্তি দিতে হবে। নেতাদের ধরে যদি ভালো করে পিটুনি দেই তাহলেও কি রাস্তায় দৌঁড় মারা ঠেকাতে পারবেন? আগে সেটা থামান।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দর সড়কে যে দুর্ঘটনা হয়েছে, সেটি চালকের দোষেই হয়েছে। তবে তিনি যে অ্যাক্সিডেন্ট যা হলো, তার যে কয়টার ছবি তিনি দেখেছেন তার প্রত্যেকটায় দেখা যাচ্ছে চলন্ত গাড়ির সামনে দৌড় দেয়ার জন্য হয়েছে।
হাত তুললেই গাড়ি থামে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা পথচারী, তাদের কাছে এটুকুই বিনীত নিবেদন করব, তারা যেন সড়ক আইনটা মেনে চলেন এবং চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে অথবা গাড়ির ফাঁক ফোকর দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা না করেন।’
‘সময়ের যেমন দাম আছে, জীবনেরও মূল্য আছে। এখন সময় বাঁচাতে গিয়ে জীবন দেয়ার কোনো মানে হয় না। বরং হাতে একটু সময় নিয়ে রাস্তায় বের হন, তাও ভালো। কিন্তু ট্রাফিক রুলটা সবাই একটু মেনে চলুন। যত্রতত্র যেখান থেকে সেখান থেকে রাস্তা পার হবেন না।
‘আর সাথে সাথে আরেকটা কথা বলব, অ্যাক্সিডেন্ট তো অ্যাক্সিডেন্টই। পৃথিবীর কোন দেশে কত অ্যাক্সিডেন্ট প্রতিদিন হচ্ছে এই খবরের সাথে সাথে সেটাও একটু বের করেন’- এই বলে শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/জেবি/ডব্লিউবি