শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছনা
মামলা থেকে সাংসদ সেলিম ওসমানকে অব্যাহতি
নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার মামলায় সাংসদ সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ড. এ কে এম এমদাদুল হক এ অব্যাহতির আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলার অপর আসামি মো. অপুর অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে দ-বিধির ৩২৩ ধারায় অভিযোগ গঠন করে ১৮ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।
আজ অভিযোগ গঠনের শুনানিকালে আসামি সেলিম ওসমান ও মো. অপু এবং ভিকটিম শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত আদালতে হাজির হন।
শুনানিকালে শ্যামল কান্তি আদালতকে বলেন, সেলিম ওসমান নিজে তার কানে থাপ্পর মারে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এর মাধ্যমে তিনি পুরো শিক্ষক জাতিকে অপমানিত করেছেন। থাপ্পারের কারণে তিনি এখন দুই কানে শুনতে পান না। কানে হেয়ারিং লাগিয়ে তাকে চলতে হয়। তাই আমি এমন একটি আদেশ চাই যাতে আমার ওই ক্ষত দূর হয়।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুলও শ্যামল কন্তির বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। তাদের এভাবে অপমান করা গেটা জাতিকে অপমান করা। যেহেতু মামলার জুডিশিয়াল প্রতিবেদনে দুইজনের বিরুদ্ধেই শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে মারধর করে আহত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাই উভয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হোক।
অন্যদিকে আসামি সেলমি ওসমানের পক্ষে ব্যারিস্টার মো. রায়হান, সিদ্দিকুর রহমান ও মোজাম্মেল হক বলেন, জুডিশিয়াল প্রতিবেদনে কানে থাপ্পর মারার সত্যতা প্রকাশ পায়নি। সেখানে শুধু কানে উঠবস করার কথা বলা হয়েছে। আর সেলিম ওসমান তা করেছিলেন জনরোষ থেকে শিক্ষক শ্যামল কন্তিকে বাঁচানোর জন্য। যার মাধ্যমে তিনি বরং শিক্ষক শ্যামল কন্তিকে বাঁচিয়েছেন। তাই তার অসৎ কোনো উদ্দেশ্য না থাকায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হোক।
শুনানি শেষে বিচারক আসামি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মতো কোনো উপাদান না থাকায় তাকে অব্যাহতি দেয়।
অন্যদিকে আসামি মো. অপুর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দ-বিধির ৩২৩ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।
আদালত সেলিম ওসমানকে অব্যাহতির আদেশ দেওয়ার পর শিক্ষক শ্যামল কান্তি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলেন।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ১৩ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান সেদিন ওই শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মর্মে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও তা দেখা যায়।
২০১৬ সালের ১০ অগাস্ট ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জের স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় পুলিশ প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে পুরো ঘটনা বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/আরজে/এমআর